এই উৎসব হযরত মোহাম্মদ (সঃ) এর দৌহিত্র ইমাম হুসেন (আঃ) এর মর্মান্তিক হত্যাজ্ঞগের স্মরণে পবিত্র উৎসব। ত্যাগ মহিমায় মোড়ানো শোকাভিভূত হওয়ার এক উৎসবের নাম আশুরা।
হিজরী সনের প্রথম মাসের নাম মুহররম। কুরআন-হাদিসেও এই মাসকে অতি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামিক পঞ্জিকা অনুযায়ী মুহররম এর দশম দিনকে আশুরা বলা হয়। আশুরাকে ঘিরে রয়েছে বহুমাত্রিক ও ঘটনাবহুল তাৎপর্য ও গুরুত্ব।
আশুরা মনে করিয়ে দেয়, ৬১ হিজরী সনে বর্তমান ইরাকের কারবালার ময়দানে ঘটিত ঐতিহাসিক অসম যুদ্ধের কথা, নির্মম মানবতার কথা। তৎকালীন স্বৈরাচারী খলিফা ইয়াজিদের ত্রিশ হাজার সৈন্যবাহিনীর কাছে ইমাম হুসেন তার ৭২ জন সঙ্গী নিয়ে যুদ্ধ করেছিল। তিন দিন পানি শূন্যস্থানে এজিদ বাহিনী ইমাম হুসেন ও তার ৭২ সঙ্গীকে ঘেরাও করে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।
এজিদ বিন মুয়াবিয়া পিতার মৃত্যুর পর নিজেকে মুসলিম বিশ্বের খলিফা হিসাবে ঘোষণা করে। যার মধ্য দিয়ে ইসলামিক খলিফাবাদ ভেঙে যায়। মসনদে বসেই সে মদ্যপানকে বৈধ ঘোষণা করেছিল। এজিদ একই সঙ্গে দুই সহোদরাকে বিয়ে করাকে বৈধ ঘোষণা করেছিল। শাসক হিসাবে সে ছিল স্বৈরাচারী ও অত্যাচারী।
ইয়াজিদ মদিনার গর্ভনর, হুসাইন ও অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আনুগত্য আদায়ের জন্য নিদের্শ দেয়। কিন্তু হুসাইন ইবনে আলী তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং ইসলামের সংস্কারের লক্ষ্যে মদীনা ছেড়ে মক্কা চলে আসেন।
মদীনার গভর্নর মুসলিম ইবনে আকীল হত্যার খবর শোনে কুফাবাসির আমন্ত্রণে ইমাম হুসেন মক্কা থেকে কুফার দিকে রওনা করেন। কুফাবাসী তাকে আগেই সমর্থন জানিয়েছিল। উমর ইবনে সাদ কৌশলে ইমাম হুসাইনের আগমনের কারণ জানতে গুপ্তচর নিযুক্ত করেছিল। গুপ্তচরের পরামর্শে ইমাম হুসাইন ফিরতি পথে বায়ের পথ বেছে নেন। বাম দিকে যাত্রা করে কারবালায় পৌঁছে যায় ইমাম হুসাইন ও তার সঙ্গীরা।
কারবালা পৌঁছানোর পরপরই উমর ইবনে সাদ আবি ওক্কাসের নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী ও শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদির নেতৃত্বের আরেক বাহিনী চারপাশ দিয়ে তাদের ঘেঁরাও করে ফেলে। এজিদ বাহিনী তাদেরকে এমন এক জায়গায় অবস্থান নিতে বাধ্য করে যে জায়গায় কোন পানি ছিল না। মরুর বুকে পানি শুন্যস্থানে এজিদ বাহিনীর সাথে ইমাম হুসেন ও তার সঙ্গীরা যুদ্ধ চালিয়ে যায়।
অবশেষে তিন দিন পানিশুন্য বন্ধি থাকার পার আসে সেই ভয়ংকর, হৃদয়বিদারক নীল নকশার দিন। সে এক অসম যুদ্ধ লড়াই য়ের দিন। মুহররমের ১০ তারিখ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৭২জন সৈন্য নিয়ে বিশাল এজিদ বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করে ইমাম হুসাইন।
গোধূলীর সেই লগ্নে ইমাম হুসাইন ও তার সঙ্গীদের কে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। তাদের শিরশ্ছেদ করা হয়। শিমার ইবনে জিলজুশান মুরাদি নিজে কণ্ঠদেশে ছুরি চালিয়ে ইমাম হুসাইনকে হত্যা করে। জঘন্য ছিল সেদিনের বিকেল।
তাদের তাঁবুগুলি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, তাদের মৃত দেহগুলোর উপর ঘোড়ার খুর দ্বারা পদদলিত করা হয়েছিল। তাদের স্ত্রী ও শিশুরা, জয়নব সহ সবাইকে ধরে নিয়ে যায় এবং তাদের শিরশ্ছেদ হয়েছিল।
কারবালার প্রত্যক্ষ সাক্ষীদের একজন হজরত মুসলিমের বর্ণনা করেছিলেন “কুফার গভর্নরের প্রাসাদের দরজায় পালিশ করার সময় উৎসবের শব্দ শুনছিলাম। আমি প্রাসাদের একজন ভৃত্যের কাছে প্রশ্ন করলাম, কুফা আজ এত উৎসবমুখর কেন?
ভৃত্য জবাব দিল, ইয়াজিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের মাথা শহরে প্রবেশ করছে। আমি প্রশ্ন করলাম, এ বিদ্রোহী কে? ভৃত্য জবাব দিল, ‘সে হল হোসাইন ইবনে আলী’।”
নিঃসন্দেহে এটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে বেদনাদায়ক গণহত্যা!