1. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  2. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  3. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:০১ অপরাহ্ন

যশোরে অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিক ডায়াগনস্টিককে ঘিরে চাঁদাবাজি

  • সময় : মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০২০
  • ২৭১


যশোরে অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিককে ঘিরে চাঁদাবাজির চলছে। সিভিল সার্জন অফিসের একটি চক্র এই চাঁদাবাজির সাথে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। মোটা অংকের টাকা দেয়ার পরই বন্ধ ঘোষণা করা হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম মুহুর্তেই চালু হচ্ছে।

আবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গিয়ে মালিকদের গোপনে যোগাযোগ করার জন্য বলা হচ্ছে। তবে চাঁদাবাজির অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন।


গত ২১ জুলাই থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত যশোর জেলার ৪৪ টি অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করেন সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তারা। লাইসেন্স নবায়ন না করা , লাইসেন্স না থাকা, ভুয়া চিকিৎসক সেজে রোগী দেখা , এমটি ল্যাব না থাকাসহ নানা অনিয়মের কারনে সেগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধ ঘোষণা করা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো যশোর শহরের যশোর শহরের নওয়াপাড়া রোডের ল্যাবজোন হাসপাতাল,

দেশ ক্লিনিকের ডায়াগনস্টিক কার্যক্রম, যশোর ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্ক্যান হসপিটালের ডায়াগনস্টিক কার্যক্রম, ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের সততা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আধুনিক হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক কার্যক্রম, মুজিব সড়কের ল্যাব এইড হাসপাতাল, সদরের বসুন্দিয়ার মহুয়া ক্লিনিক, খাজুরার মাতৃভাষা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ফারিহা হাসপাতাল, মণিরামপুর উপজেলার মণিরামপুর উপজেলার অর্থোপেডিক ডা. নজরুল ইসলামের মালিকানাধীন রোকেয়া ক্লিনিক,

মুন হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (হাসপাতাল মোড় শাখা), নিউ প্রগতি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নিউ লাইফ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ,মুন হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার (কুয়াদা শাখা), চৌগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ ক্লিনিক, মায়ের দোয়া পাইভেট ক্লিনিক, বিশ্বাস ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পল্লবী ক্লিনিক, আধুনিক ডেন্টাল এন্ড মেডিকেল সার্ভিসেস, মা ডেন্টাল কেয়ার, অভয়নগর উপজেলার স্বপ্নের সেতু ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পপুলার মেডিকেল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার,

আলমদিনা প্রাইভেট হাসপাতাল এনড কম্পিউটারাইজডের ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাব ডায়াগনস্টিক সেন্টার, আরোগ্য সাধনের ডায়াগনস্টিক সেন্টার, পালস ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ল্যাবওয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, নওয়াপাড়া ক্লিনিকের ডায়াগনস্টিক সেন্টার, লাইফ কেয়ারের ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ফয়সল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়ার জোহরা ক্লিনিকের প্যাথলজি বিভাগ, জনসেবা ক্লিনিকের প্যাথলজি বিভাগ ও নার্সিং হোমের ল্যাব ও কেশবপুর উপজেলার ডিজিটাল মেডিকেল ডায়াগনস্টিক সেন্টার,

আরিয়ান ডায়াগনস্টিক সেন্টার, হীরা ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কেশবপুর সার্জিক্যালের ডায়াগনস্টিক সেন্টার, মাইকেল ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কপোতাক্ষের ডায়াগনস্টিক কার্যক্রম , রাইজিং প্যাথলজি সেন্টার ও পাইসল সেন্টার। এই সময়ের মধ্যে সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তারা জেলার ২ শতাধিক হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করেন। লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স অনুমোদনের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনায় পরিদর্শন কার্যক্রমে নামে সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তারা।

অভিযোগ উঠেছে, এই তোড়জোড়ের মধ্যে চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছেন সিভিল সার্জন অফিসের একটি চক্র। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্ধ ঘোষণা করার পরের দিন থেকে ফের কার্যক্রম শুরু হয় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে। বর্তমানে ১ টি বাদে সবগুলো হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কার্যক্রম চলছে। যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডে অবিস্থত একটি অবৈধ হাসপাতালের মালিক পক্ষের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান,

একদিকে সিভিল সার্জনের টিম প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে যাচ্ছেন। পরে যোগাযোগ করছেন সিভিল সার্জন অফিসের দুইজন কর্মকর্তা। তাদেরকে মোটা অংকের টাকা দিয়েই প্রতিষ্ঠান চালু করার সুযোগ পেয়েছি। তিনি আরো জানান, চেয়ারে বসে কর্মকর্তারা নানা আদেশ জারি করেন। কিন্তু টাকা পেলেই সব ঠিক।

চৌগাছা পৌর এলাকার এক ক্লিনিক মালিক জানান, সিভিল সার্জন তার প্রতিষ্ঠান একাধিকবার পরিদর্শন করেছেন। এসেছেন। প্রথমবার পরিদর্শনে এসে ক্লিনিকের লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হওয়াসহ নানা অনিয়ম দেখিয়ে আমার ক্লিনিকটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর আমি যোগাযোগ করি সিভিল সার্জন অফিসের একজন কর্মকর্তার সাথে। এসময় আমার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করা হয়।

আমি দিতে না পারায় দ্বিতীয় দফায় ফের পরিদর্শনের নামে আমার ক্লিনিকে হানা দেয়া হয়। আমি কার্যক্রম বন্ধ রাখার কারণে পরিদর্শন টিম চলে যান। পরে বাধ্য হয়ে সিভিল সার্জন অফিসের ওই কর্মকর্তাকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে যশোর শহরের আরেক ক্লিনিক মালিক জানান, প্রতি মাসে সিভিল সার্জন অফিসের ওই চক্রকে ১০ হাজার টাকার খাম পৌঁছে দিতে হয়। আমার প্রতিষ্টানের ডায়াগনস্টিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করার পর ১৫ হাজার টাকা দিতে হয়েছে চক্রকে। অভিযোগ উঠেছে, সিভিল সার্জন অফিসের চক্রের চাঁদাবাজির কারণে অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিকের কার্যক্রম থেমে নেই। চক্রের চাঁদাবাজির টাকা অফিসের কর্মকর্তাদের মাঝে ভাগাভাগি হয়ে থাকে। একটি হাসপাতালের মালিক জানান, প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার একদিন পর অথবা পরপরই ফের চালু হওয়ার কারণ সবাই জানে।

সিভিল সার্জনের ঘোষণার পর কোন প্রতিষ্ঠান মালিক কাউকে ম্যানেজ না করে এই সাহস দেখাতে পারেন না। আমি নিজেও ২৫ হাজার টাকা গুণতে বাধ্য হয়েছি। ঝিকরগাছার এক ক্লিনিক মালিক জানান, সিভিল সার্জন অফিসের চক্রের দাবি করা টাকা দিতে না পারায় পরিদর্শনের নামে বার বার আমাকে হয়রানী করা হচ্ছে। এমনকি লাইসেন্স নবায়ন হবে না বলেও আমাকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। খুব চিন্তার মধ্যে আছি। ১০ হাজার টাকা দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু রাজি হয়নি। সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য অধিদফতরে লাইসেন্স নবায়ন বা নতুন লাইসেন্সে আবেদন করার পর দু শতাধিক হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিদর্শন করেছেন সিভিল সার্জন ও তার টিমের সদস্যরা। এরমধ্যে শতাধিক প্রতিষ্ঠানে আল্টিমেটাম দেয়া হয় ২৩ আগস্টের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন বা নতুন লাইসেন্স করাতে না পারলে কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করা হবে।

কিন্তু বাস্তবে কিছুই হয়নি। ২৫ আগস্ট খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেই সব প্রতিষ্ঠানে কার্যক্রম চলছে। লাইসেন্স না হলেও সিভিল সার্জন অফিস থেকে বন্ধের জন্য পরবর্তী কোন নির্দেশনা জারি করা হয়নি। তবে সিভিল সার্জন অফিসের চক্রের সদস্যরা অধিকাংশ হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে মোটা অংকের টাকা চাঁদাবাজি করেছে। এরপর সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তাদের চোখে অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বৈধ হয়ে গেছে। ফলে সেখানে অপচিকিৎসাও বেড়েছে।

মানুষকে জিম্মি করে চিকিৎসার নামে আদায় করা হচ্ছে টাকা। অভিযানের প্রথম দিকে সিভিল সার্জন ও তার টিমকে সাধারণ মানুষ সাধুবাদ জানালেও বর্তমানে নানা মন্তব্য করছেন। অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, বন্ধ ঘোষণার পর কিভাবে প্রতিষ্ঠানগুলো মুহুর্তের মধ্যে চালু করছে মালিকরা। এই বিষয়ে যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘিরে চাঁদাবাজির মিথ্যা রটানো হচ্ছে। অফিসের কেউ এই ধরণের কাজ করছে সে ব্যাপারেও কেউ অভিযোগ করেননি। লাইসেন্সের জন্য আবেদন করার পর অনেক পরিদর্শনের পর মতামত স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। লাইসেন্স দেয়া বা না দেয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন। সিভিল সার্জন আরো জানান, কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেয়ে হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকদের ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছিলাম। সেই সময় শেষ হয়েছে এখন কি ব্যবস্থা নেবেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পরবর্তী নির্দেশনা আসেনি।

নির্দেশনা অনুয়ায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিভিল সার্জন আরো জানান, আগে বন্ধ ঘোষণা করা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফের কার্যক্রম চলার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪