২৭ জুলাই আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। সংঠনটির সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবু রাজনৈতিক,সাংগঠনিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশ বুলেটিন২৪ এর সাথে কথা বলেছেন।সেই আলোচনার বিভিন্ন অংশ তুলে ধরেছেন অনলাইন র্পোটাল বাংলাদেশ বুলেটিন২৪ এর সম্পাদক তানভীর আকতার শিপার।
বাংলাদেশ বুলেটিন২৪:
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর আপনি ও আপনার সভাপতি সাংগঠনিক কোন কোন বিষয়ের উপর জোর দিচ্ছেন ?
আফজাল বাবু:
বাংলাদেশ বুলেটিন২৪ কতৃপক্ষকে ধন্যবাদ।হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম স্মরণ করছি ,জাতীয় চার নেতা,মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন যারা, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব সহ পঁচাত্তরের সেই ভয়াল রাতে যারা শহীদ হয়েছেন ।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের দায়িত্ব দেয়ার পর থেকে আমরা চেষ্টা করেছি সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। আমাদের সংগঠনটি সেবা শান্তি প্রগতি ,সেবার ব্রত নিয়ে কাজ করে। আমাদের সংগঠনের একজন নেতা রিজভী সে কোমায় ছিল আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর পর সংগঠনের সবার সহযোগিতায় ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা তুলে রিজভীর হাতে পৌঁছে দিয়ে আমরা আমাদের কর্মযাত্রা শুরু করি ।
এরপর সাথে সাথেই আমরা শীতবস্ত্র বিতরণ করা শুরু করি । কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে শুরু করে ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাতের বেলায় গিয়ে আমি ও আমার সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দদের নিয়ে কম্বল বিতরণ করি । এরপর উত্তরবঙ্গের শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করার জন্য সেখানে ছুটে যাই।নীলফামারী তিনটা প্রোগ্রাম করি ,রংপুরের দুইটা এর পরের দিন আমরা গাইবান্ধা কম্বল বিতরণ করে সেখান থেকে চলে যাই বগুড়া।বগুড়া থেকে আমরা সিরাজগঞ্জ এসে প্রোগ্রাম করি তারপর রাত একটায় এলেঙ্গায় শীতবস্ত্র বিতরণ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে ফিরে আসি ।
এরপর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের পাশাপাশি আমরা আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটি প্রস্তুত করতে থাকি ,১৭ ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালনের পর থেকেই করোনা পরিস্থিতি শুরু হয় ,তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারা বাংলাদেশে আমাদের নেতাকর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে পরিস্থিতি মোকাবেলায় কাজ করে ।
প্রথমে আমরা মানুষদের সচেতন করার লক্ষে ভার্চুয়াল লিফলেট বিতরণ করি তারপর আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে সচেতনতামূলক কিছু বক্তব্য রেকর্ড করে সারা বাংলাদেশে প্রতিটি জেলায় পেনড্রাইভের সাহায্যে এমপ্লিফায়ার এর মাধ্যমে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রচার করি।স্বাস্থ্য সচেতনমূলক একটা ভিডিও রেকর্ডিং করি, যেটা আমরা আমাদের নেতাকর্মীদের দিয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে মানুষের মাঝে প্রচার করি ।
আপনারা জানেন এই করোনা শুরু হওয়ার পর থেকেই আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছিলাম ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিন এর উদ্যোগে ঢাকা শহরের অনেক জায়গায়।আমাদের দেখা দেখে ইউনিয়ন ,উপজেলা ,জেলার নেতৃবৃন্দরা ঝাঁপিয়ে পড়ে।
এরপর আমরা টেলিহেলথ সার্ভিস চালু করি, এর মাধ্যমে সারাদেশে অনলাইনের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন রোগীদের সেবা দিয়ে আসছি তার পাশাপাশি আমরা এম্বুলেন্স সার্ভিস এর ব্যবস্থা করি।একটা লাশের গাড়ি সার্ভিসও আছে এবং এই এম্বুলেন্স সার্ভিস এখনও চলমান ,এসবের পাশাপাশি আমরা খাদ্য সহায়তা কার্যক্রম চালু করে রেখেছি ,রোজার সময় আমরা প্রতিদিন কোথাও-না-কোথাও ইফতার সামগ্রী বিতরণ করি গরিব মানুষদের ভিতর।ছিন্নমূল শিশুদের মাঝে নতুন কাপড় বিতরণ করি তাদের মা-বাবাদের মাঝে শাড়ি-লুঙ্গি বিতরণ করি।
এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আমরা ঈদ উপহার বিতরণ করি। আমাদের একটা টিম সাতক্ষীরায় গিয়ে ৫০০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে । এর মাঝেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে ধান কাটা কর্মসূচি অংশগ্রহণ করি ,সর্বপ্রথম আমি ও আমার সভাপতি বাবু নির্মল রন্জন গুহ ও কেন্দ্রীয় অনেক নেতৃবৃন্দসহ মুন্সীগঞ্জ এর আড়িয়াল বিলে গিয়ে ধানকাটা কর্মসূচী শুরু করি। আমাদের কার্যক্রম দেখে সারাদেশের নেতাকর্মীরা ধানকাটা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ শুরু করে দেয়।
আমরা সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় ধান কেটে দিয়েছি ,করোনা রোগীর ধান কেটে দিয়েছি, ঋণগ্রস্থ কৃষকের ধান কেটেছি,সাধারন কৃষকের ধান কেটে দিয়েছি।এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশক্রমে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে আমরা অংশ গ্রহণ করি,সারাদেশের নেতাকর্মীরা এতে সাড়া দেয় আমরা প্রায় ৫ লক্ষাধিক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে যা প্রায় শেষের পথে।এরই মধ্যে আমরা বন্যার ত্রাণ শুরু করে দিয়েছি গত ২৩ জুলাই আমরা দোহারে গিয়েছিলাম, সেখানে বানভাসিদের ত্রাণ বিতরণ করেছি।আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পরপরই আমরা উত্তরবঙ্গে ত্রাণ বিতরণের জন্য যাব।
বাংলাদেশ বুলেটিন২৪:
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সংসদে স্বেচ্ছাসেবক লীগ কে নিয়ে দুই মিনিটের উপরে যে প্রশংসা মূলক বক্তব্য রেখেছেন সেটা নিয়ে কিছু বলুন
আফজাল বাবু:
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গণমানুষের নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মাদার অব হিউমিনিটি, আসলে উনি মানুষের জন্য কাজ করে এবং যারা মানুষের জন্য কাজ করে তাদের প্রশংসা সব সময় তিনি করেন। প্রায় ২ মিনিট ১৭ সেকেন্ড সংসদে সমাপনী বক্তব্যে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকলীগের যে প্রশংসা করেছেন আমরা সত্যিই গর্বিত।
আমরা মনে করি এটা আমাদের কাজের স্বীকৃতি।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সবসময় এই কাজগুলো প্রাধান্য দেন, তিনি চান সবসময় মানুষের পাশে থাকতে, ১৮ ঘণ্টা কাজ করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আর যারা কাজ করেন প্রধানমন্ত্রী তাদের সবসময় কাজের উৎসাহ দেন এবং প্রশংসা করেন।
আমরা যে মানবিক কাজগুলো করেছি আমাদের সেই কাজের প্রশংসা করে আবারো প্রমাণ করেছেন উনি মানবতার জননী।
আমরা একটা ছোট সংগঠন কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের যে প্রশংসা করেছেন, আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ সেই সাথে ধন্যবাদ জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে, আমরা তার সুস্বাস্থ্যর পাশাপাশি দীর্ঘায়ু কামনা করি।আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার পাশে আছি এবং থাকবো ইনশাল্লাহ।
বাংলাদেশ বুলেটিন২৪:
পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবে দিবেন?
আফজাল বাবু :
আপনারা সবাই জানেন কমিটি হয়ে আছে করোনা পরিস্থিতির কারণে পূর্ণাঙ্গ কমিটি আমরা হাতে পায়নি তবে আমরা যখনই সুযোগ পাবো প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলে তখনই আমরা কমিটি দিতে পারব।
তবে একটা কথা এই কমিটির কারণে কিন্তু আমাদের কোনো কার্যক্রম ব্যাহত হয় নাই, আমাদের সংগঠনে সবাই ছাত্রনেতা এবং পরীতি নেতা,সবারই ছাত্রলীগ থেকে রাজনীতির হাতেখড়ি ,একটা ছেলেও কিন্তু বলে নাই আমাদের কমিটি নাই আমরা কাজ করবো না, সকলে আর্থিকভাবে ব্যক্তিগতভাবে ,মানসিকভাবে সহযোগিতা করেছে, যখন কেউ ঘর থেকে বের হয় নাই তখন থেকে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা ঘর থেকে বের হয়ে মানুষের জন্য কাজ করে গেছে এখনো পর্যন্ত কোন একটা নেতা-কর্মীরা কমিটির কথা বলে
নাই ।
বাংলাদেশ বুলেটিন২৪:
অনুপ্রবেশকারী ও হাইব্রিডদের বিরুদ্ধে আপনাদের অবস্থান কি?
আফজাল বাবু:
আমাদের দলে সেরকম কাউকে খুঁজে পায়নি তারপরও যদি কেউ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে, যখনই আমরা কাউকে খুজে পাব তাৎক্ষণিক আমরা ব্যবস্থা নিবো, একজন পরীক্ষিত নেতা বা কর্মী যেকোনো খারাপ কাজে জড়িত হতে পারে তবে ব্যবস্থা আমরা সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে নেব ।
এর মাঝে আমরা দিনাজপুরের সভাপতিকে বহিষ্কার করেছি, ঢাকা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক কে বহিস্কার করেছি সংগঠন বহির্ভূত কর্মকান্ডের জন্য।
বাংলাদেশ বুলেটিন২৪:
ত্যাগী নেতাদের জন্য আপনাদের কি কি পদক্ষেপ?
আফজাল বাবু:
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ন্যায় নেতাকর্মীদের বিপদে আপদে আমরাও সার্বক্ষণিকভাবে তাদের পাশে দাঁড়াবো ইনশাআল্লাহ্ ।এর মাঝে আমাদের ঢাকার ৫৫ নং ওয়ার্ডের সভাপতি মারা গেছেন, তার পরিবারের জন্য ইতিমধ্যে আমরা সহায়তা প্রদান করেছি, ভবিষ্যতেও আমরা ত্যাগী নেতাকর্মীদের পাশে থাকবো
ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশ বুলেটিন২৪:
আপনার সংগঠনের সারাদেশের অনলাইন ডাটাবেজ আছে কি ?
আফজাল বাবু:
আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে সামনে আমরা বাস্তবায়ন করবো।আসলে আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে ত্রান কার্যক্রম, শীতবস্ত্র বিতরণ নিয়ে অনেক কাজ করতে হয়েছে তাই ডাটাবেজ তৈরি করা হয়নি। ইতিমধ্যে আমরা আমাদের ওয়েবসাইটের কাজ অনেক এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি ,এই ওয়েবসাইটে আমাদের সব ডাটাবেজ সংরক্ষিত থাকবে।আশা করি অচিরেই আমরা সবাইকে উপহার দিতে পারবো,
বাংলাদেশ বুলেটিন২৪:
সর্বশেষ আপনার কাছে একটা প্রশ্ন-
মহামারী করোনার ভিতর এই ২৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী কিভাবে করবেন বলে পরিকল্পনা করেছেন?
আফজাল বাবু :
আমরা সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সকালবেলা সারা দেশে দলীয় পতাকা ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করবো কেন্দ্রীয় অফিসে, ধানমন্ডির ৩২ এ বঙ্গঁবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধানিবেদন ও আলোচনা অনুষ্ঠান করবো।তারপর এই করোনা পরিস্থিতিতে যারা বিশেষ ভূমিকা রেখেছে তাদের সম্মাননা প্রদান করব এবং আমরা সর্বশেষ বৃক্ষরোপনের মাধ্যমে আমাদের অনুষ্ঠানমালা শেষ করবো,তবে সবকিছুই সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে পালন করা হবে।
বাংলাদেশ বুলেটিন২৪:
আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সাক্ষাৎকার প্রদান করার জন্য।
আফজাল বাবু:
বাংলাদেশ বুলেটিন ২৪ কেও অনেক অনেক ধন্যবাদ।আমি বাংলাদেশে বুলেটিন২৪এর সর্বাঙ্গীন সফলতা কামনা করি এবং বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ উপস্থাপন করে দেশ ও জাতিকে কল্যানের পথে বয়ে নিয়ে যাবে সেই আশা ব্যক্ত করি।
জয় বাংলা,জয় বঙ্গবন্ধু