বোয়ালমারী উপজেলায় ২০১৯-২০ অর্থ বছরে প্রথম পর্যায়ে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) ১৫টি প্রকল্পের নামে বরাদ্দকৃত ১৪ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার মধ্যে ৮টি প্রকল্পে বরাদ্দকৃত অর্থের নয়-ছয় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রণব পাণ্ডের যোগসাজশে ওই প্রকল্পগুলোর প্রকল্প সভাপতিরা প্রকল্পের কাজ নামেমাত্র করে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বরাদ্দের টাকা হরিলুট হওয়ার বিষয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা প্রণব পাণ্ডেকে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে উঠেন। তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বরাদ্দ অনুসারে কাজ হয়নি বলতে পারেন। কিন্তু একেবারেই কাজ হয়নি-একথা সত্য নয়।
সরেজমিনে গিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার রূপাপাত ইউনিয়নের ‘বনমালীপুর রেল গেট থেকে তালেব মিয়ার বাড়ি পর্যন্তু’ কাঁচা রাস্তা সংস্কারের জন্য ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও ওই রাস্তায় এক ঝুঁড়ি মাটিও ফেলেনি প্রকল্পের সভাপতি ও ওই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য সৈয়দ মিরাজ আলী। ওই গ্রামের প্রকল্প সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা মো. মিলন বলেন, এখন পর্যন্ত এই রাস্তায় এক ঝুঁড়ি মাটিও ফেলা হয়নি। এ ব্যাপারে সৈয়দ মিরাজ আলী বলেন, রাস্তাটির কাজ করেছি ফাল্গুন মাসে। পরে ঘাস লাগিয়েছি, এজন্য মাটি ফেলার কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না।
শেখর ইউপির সহ¯্রাইল বাজারের ‘চাইন্ড কেয়ার কিন্ডারগার্টেন উন্নয়নে’ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার কোন কাজ না করেই বরাদ্দের অর্থ তুলে নিয়েছেন প্রকল্প ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ-সভাপতি মোঃ চুন্নু বিশ্বাস। কি কাজ করেছেন জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক ও প্রকল্প সভাপতি সদুত্তর না দিতে পেরে একে অন্যের উপর দায় চাপান।
একই ইউপির ‘দুর্গাপুর মেইন রাস্তা হতে হরিপদ খাঁর বাড়ি পর্যন্তু ইটের রাস্তা সংস্কার’ এর জন্য ২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। মেইন রাস্তা থেকে হরিপদ খাঁর বাড়ি পর্যন্ত কাঁচা রাস্তা বরাদ্দে দেখানো হলেও পূর্বেই রাস্তাটির অর্ধাংশের বেশি ইট বসানো ছিল। প্রকল্পটির দক্ষিণ অংশে বাকী মাত্র ১৫০ ফুট কাঁচা রাস্তায় নামেমাত্র কিছু মাটি ফেলে পুরো টাকা তুলে নেওয়া হয়। এ ব্যাপারে হরিপদ খাঁর পুত্রবধূ অনিমা খাঁ (২৬) জানান, হাজ্বী জামাল চাচা লেবার দিয়ে কিছু মাটি ফেলেছে। ১৫০ ফুট রাস্তায় ১০ হাজার টাকার মাটিও ফেলা হয় নাই বলে স্থানীয় এলাকাবাসীর ধারণা।
ওই ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ও প্রকল্পের সভাপতি শরিফা বেগম বলেন, রাস্তায় কোনো মাটি ছিল না, পরিপূর্ণ ভাবে মাটি কাটা হয়েছে। আপনারা জামাল হাজীর সাথে যোগাযোগ করেন।
ঘোষপুর ইউনিয়নের ‘বালিয়াপাড়া স্কুল হতে মদনধারী কুঠি পর্যন্তু কাঁচা রাস্তা সংস্কার’ এর জন্য ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ রাস্তায় কোন কাজ না করেই টাকা উত্তোলন করেন ওই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ও প্রকল্প সভাপতি মোঃ নান্নু মিয়া। বালিয়াপাড়া গ্রামের দীপক কুমার সরকার ও দীলিপ কুমার শীল বলেন, ৩/৪ মাসের মধ্যে এই রাস্তায় কোন মাটির কাজ হতে দেখি নাই। এ ব্যাপারে নান্নু মিয়া বলেন, মাস তিনেক আগে রাস্তায় মাটি দিয়েছিলাম এখন নাও দেখা যেতে পারে।
ময়না ইউনিয়নের ‘অসিত গোলদারের বাড়ি হতে সন্তোষ চক্রবর্তীর বাড়ি পর্যন্তু কাঁচা রাস্তা সংস্কার’ এর জন্য ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এ রাস্তার কয়েকটি স্থানে নিচু জায়গায় সামান্য মাটি দিয়ে ভরাট করে বরাদ্দকৃত টাকা উত্তোলন করেন প্রকল্পের সভাপতি ও ৭নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য পলাশ বিশ্বাস।
এছাড়া বোয়ালমারী ইউনিয়নের ‘কালিয়ান্ড গাউজ মন্ডলের বাড়ি হতে সাখাওয়াতের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার’ পরমেশ্বর্দী ইউনিয়নের ‘ধুলজোড়া গ্রোথ সেন্টার রাস্তা হতে আবু-বক্করের বাড়ি পর্যন্তু রাস্তা সংস্কার’ সাতৈর ইউনিয়নের ‘শিবানন্দপুর বকুল ফকিরের বাড়ি মিলের পশ্চিম পাশ পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার’ প্রকল্পগুলোরও নামেমাত্র কাজ করে উঠিয়ে নেয়া বরাদ্দের অর্থ।