এ যাত্রা রক্ষা পেয়েছেন করোনা থেকে। কিন্তু সেই মারণ ভাইরাস দিয়ে গিয়েছে ‘অ্যানসমিয়া’। এ হল ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে যাওয়া। এই প্রতিবন্ধকতা আলাদা করে চোখে পড়ে না। কিন্তু পঞ্চেন্দ্রিয়ের একটি চিরকালের মতো অকেজো হয়ে যাওয়া যে কী, তা শুধু জানে ভুক্তভোগী। এর কোনও চিকিৎসাও নেই। কোভিড-১৯ থেকে সেরে এমন পরিণতি হচ্ছে অনেকেরই।
প্যারিসের বাসিন্দা জঁ-মিশেল মেলার্ড যেমন। বললেন, ‘‘কোনও কিছুর গন্ধ পাচ্ছি না। সব চেয়ে কষ্ট হচ্ছে ছেলের জন্য। ওকে জড়িয়ে ধরা… ওর গায়ের গন্ধটা সব চেয়ে প্রিয় ছিল।’’ কারও কারও ক্ষেত্রে সমস্যাটা সাময়িক হলেও, অনেকের দীর্ঘকালীন ক্ষতি হচ্ছে। সকালের কফির কাপ গন্ধহীন, বাগানের ফুলে গন্ধ নেই, স্নানের ঘরে সাবানের ফেনা কিংবা নতুন বইয়ের পাতা যেন ‘প্রাণহীন’।
জঁ বলেন, ‘‘জীবনের গন্ধটাই চলে গিয়েছে। ঘ্রাণ এমনই, যা না-থাকলে তবেই আপনি তার গুরুত্ব বুঝতে পারবেন।’’ এ সব এক প্রকার। কিন্তু এর থেকেও ভয়ানক ‘বিপদের গন্ধ না-পাওয়া’। কিছু পোড়ার গন্ধ নেই, রান্নাঘরে গ্যাস লিক করলে, তা বোঝার উপায় নেই। প্যারিসের এক চিকিৎসক অ্যাল্যাঁ করি বলেন, ‘‘খেতে বসে আমরা তো শুধু স্বাদের বাহার পাই, এমন নয়। সুখাদ্যের গন্ধেও আলাদা আমেজ রয়েছে।’’
নাকের ভিতরে পলিপ থাকলে, কিংবা ডায়াবিটিস, অ্যালঝাইমার্স ও পার্কিনসনসের মতো অসুখ হলে অনেক সময় রোগীরা ঘ্রাণশক্তি হারিয়ে ফেলেন। এ বার সেই রোগের তালিকায় সংযোজন হল কোভিড-১৯। এ রোগের উপসর্গের মধ্যেও রয়েছে গন্ধ না-পাওয়া। সেটাই চিরস্থায়ী হয়ে যাচ্ছে কারও কারও ক্ষেত্রে। অ্যাল্যাঁর কথায়, ‘‘প্রথম দু’মাসে বিষয়টা সমস্যার পর্যায়ে থাকে। তার পর ধীরে ধীরে চেপে বসতে থাকে মানসিক ভাবে। আগের সুস্থ-সুন্দর জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একা হয়ে পড়া। অবসাদ আসা স্বাভাবিক।’’ এই মুহূর্তে গোটা বিশ্বে করোনার শিকার ১ কোটি ১৫ লক্ষেরও বেশি। সুস্থ হয়েছেন ৬৫ লাখের উপরে। কিন্তু তাঁদের ‘সুস্থ’ জীবনেও ছাপ রেখে গিয়েছে ভাইরাস।
আক্রান্তের নিরিখে প্রথম তিনে আমেরিকা, ব্রাজিল ও ভারত। এর মধ্যে আমেরিকায় ৩০ লক্ষ ছুঁইছুঁই সংক্রমণ। মারা গিয়েছেন ১ লক্ষ ৩২ হাজারেরও বেশি। আজও অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছে, ‘‘৯৯ শতাংশ ঘটনাতেই ক্ষতি হচ্ছে না!’’ ব্রাজিলে আক্রান্ত ১৬ লক্ষ। আমাজনের জঙ্গলও রেহাই পায়নি ভাইরাসের কবল থেকে। ইউরোপের দেশগুলো তুলনায় সেরে উঠেছে। নিউজ়িল্যান্ড করোনা-শূন্য। কিন্তু পড়শি দেশ অস্ট্রেলিয়াতে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
আজ রাত বারোটা থেকে সাড়ে ছ’কোটি বাসিন্দা-সহ ভিক্টোরিয়া প্রদেশকে সম্পূর্ণ ‘আইসোলেট’ করা হবে। নতুন করে খারাপ খবর দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। সে দেশে নতুন একটি স্ট্রেন মিলেছে, যা নাকি অন্যান্য স্ট্রেনের তুলনায় ছ’গুণ দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়েছে।