1. boyd94289@gmail.com : Ayon Islam : Ayon Islam
  2. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  3. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  4. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
  5. bangladeshbulleting646@gmail.com : Sohel Desk : Sohel Desk
শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:২৮ পূর্বাহ্ন

ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ইনামুল হাসান গ্রেপ্তার

  • সময় : শনিবার, ১২ জুলাই, ২০২৫
  • ৭৭

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় বিস্ফোরক মামলার আসামি ছাত্রলীগের সাবেক জেলা সহ-সভাপতি ইনামুল হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার বিকালে আলফাডাঙ্গা উপজেলার কামারগ্রামে নিজ বাড়ি থেকে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।

আলফাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহজালাল আলম গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ইনামুল হাসানের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা আছে। ওই মামলার এজাহারভুক্ত ৬৫ নম্বর আসামি সে। মামলাটি দায়ের হয়েছিল ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি। গ্রেপ্তারের পর পুলিশ তাকে হেফাজতে নিয়েছে এবং রবিবার আদালতে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।

ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক বলেন, ‘ছাত্রলীগের দুর্ধর্ষ ক্যাডার ইনামুল হাসানকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। তাকে আগামীকাল আদালতে তোলা হবে।’

২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট পলাতক শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর দাবিতে আলফাডাঙ্গায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের শত শত নেতাকর্মী একটি মিছিল বের করে। আরিফুজ্জামান পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন চৌরাস্তায় তারা হাতবোমা বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৭০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত ২-৩ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। ইনামুল ওই মামলার অন্যতম আসামি হিসেবে পলাতক ছিলেন।

জানা গেছে, ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা সাম্প্রতিক সময়ে একাধিক যুবদল নেতাকে লাঞ্ছিত করে এবং তাদের বাড়িতে গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তার নেতৃত্বে শতাধিক হেলমেটধারী ক্যাডার রামদা, রড, হকিস্টিক নিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে—যার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ঘটনায় আরও সাতজনকে পুলিশ ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে।

পুলিশ ও স্থানীয়দের মতে, ইনামুল হাসান নিষিদ্ধ সংগঠন হিসেবে পরিচিত ছাত্রলীগের ফরিদপুর জেলা শাখার সাবেক সহ-সভাপতি। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে তিনি গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও নানা অভিযোগে দেড় বছর বরখাস্ত ছিলেন। ২০২২ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে অংশ নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন।

ইনামুলের বিরুদ্ধে জমি দখল, নারী কেলেঙ্কারি, সরকারি প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, বাজার থেকে মাসোহারা আদায়সহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে। ইনামুলের ভাই মাহবুবও ভাটারা থানায় দায়ের হওয়া একটি হত্যা মামলার আসামি।

বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রহমান এবং ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ইনামুল দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব খাটিয়ে অপকর্ম চালিয়ে আসছিলেন। আছাদুজ্জামান মিয়ার ব্যক্তিগত ক্যাডার বলেও এলাকায় পরিচিত ছিলেন তিনি।

পুলিশ বলছে, ইনামুলের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে এবং অতীতে সংঘটিত নানা অপরাধের বিষয়েও আলাদা করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।

ইনামুলের অত্যাচার নিয়ে যা বলছে বিএনপি:

ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ইনামুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত একটি সন্ত্রাসী চক্রের দাপটে গত ১৫ বছর ধরে বিএনপি নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া ছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন দলটির একাধিক নেতা। আলফাডাঙ্গা শহর, গোপালপুর ইউনিয়ন এবং আশপাশের এলাকায় বিএনপি-সমর্থিত ব্যক্তি ও পরিবারগুলোর ওপর চলেছে নির্যাতন ও হয়রানি। বিএনপি নেতারা বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশ ছাড়লেও ইনামুলের আওয়ামী প্রভাব কমেছিল না।’

সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক অনলাইন (টেলিগ্রাম) মিটিংয়ে অংশ নেন ইনামুল হাসান। মিটিংয়ে আব্দুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। সেখানে ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাদের মাঠে থেকে পরিকল্পিত নাশকতার ছক কষতে এবং তা বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী ইনামুল নিজের সশস্ত্র ক্যাডার বাহিনী নিয়ে মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনুষ্ঠিত সর্বশেষ কথিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ইনামুল বাহিনীর বিরুদ্ধে ভোটকেন্দ্রে হামলা, ব্যালট ছিনতাই, বুথ ভাঙচুর, সাধারণ ভোটারদের মারধর এবং নগদ অর্থ ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠে। নিরীহ ভোটাররা মামলা করতে থানায় গেলে পুলিশ ইনামুলের নাম বাদ দিয়ে এজাহার দিতে বলে।

গোপালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান থাকাকালীন ইনামুল হাসানের বিরুদ্ধে নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় একটি খেয়াঘাট নিয়ম ভেঙে ঘুষের বিনিময়ে ইজারা দেন তিনি, যা পরবর্তীতে উপজেলা প্রশাসন বাতিল করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি এক মাঝিকে মারধর করেন। এ ঘটনায় মাঝি ওবায়দুর রহমান থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন (ডায়েরি নম্বর ১১৬৮)।

ইনামুলের বিরুদ্ধে রয়েছে স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন, পরে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটানো, প্রবীণদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং জুয়ার আসর পরিচালনার মতো গুরুতর অভিযোগও। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ের একটি কক্ষ নিয়মিত জুয়ার আসরে ভাড়া দিতেন বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, শিশু কার্ড বিতরণ এবং গৃহহীনদের বরাদ্দকৃত ঘর নিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ লেনদেনের অভিযোগও তার বিরুদ্ধে রয়েছে।

এছাড়াও ইউনিয়ন পরিষদের চাকরির আশ্বাস দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে উৎকোচ নেওয়ার একাধিক অভিযোগে এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে বারবার ঝাড়ু মিছিল ও বিক্ষোভ করেছে। এমনকি সরকারি চাল বিতরণে দুর্নীতি, টিআর-কাবিখা প্রকল্পে অনিয়ম, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোসহ নানা অভিযোগে তিনি দীর্ঘদিন ধরেই বিতর্কিত ছিলেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪