সাকিব আসলাম
বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা সরকারের সামরিক বাহিনী ধ্বংসের পথে বলে জানিয়েছে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী। মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির তথ্যের সূত্র ধরে শনিবার (১৫) জুন একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় পত্রিকাটি।
ওই প্রতিবেদনে পত্রিকাটি জানায়, আরাকান আর্মি দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে রাখাইন রাজ্যের মংডুতে আরও ১০টি জান্তা ক্যাম্প দখল করেছে এবং শহরটি দখলের জন্য যুদ্ধের সময় একজন কৌশলগত কমান্ডার সহ প্রায় ২০০ জান্তা সেনাকে হত্যা করেছে। তারা গত মাসে উত্তর মংডু দখল করার পর টাউনশিপের দক্ষিণে জান্তা সামরিক ক্যাম্প এবং সীমান্ত রক্ষী পুলিশে অবস্থানগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। তারা বুথিডাং শহর দখলের পর মে মাসের শেষের দিকে মংডু শহরে বড় আকারের আক্রমণ শুরু করে। দুটি শহরই বাংলাদেশের সীমান্তের কাছে উত্তর-পূর্ব রাখাইন রাজ্যে অবস্থিত। ওই এলাকায় বসবাসকারীরা মূলত রোহিঙ্গা।
আরাকান আর্মির বরাত দিয়ে দ্য ইরাবতী জানায়, শুক্রবার একটি ঘোষণায় আরাকান আর্মি বলেছে যে,
তারা এই সপ্তাহে আরও চারটি জান্তা ক্যাম্প দখল করেছে। যার মধ্যে মাওয়ায়াদ্দি কৌশলগত কমান্ড বেস এবং না খাউং টো ক্যাম্প উল্লেখযোগ্য। যুদ্ধের সময় জান্তা সেনাবাহিনীর মাওয়ায়াদ্দির কৌশলগত কমান্ডার কর্নেল তাইজার হ্যাতে এবং প্রায় ২০০ জন জান্তা সৈন্যকে হত্যা করে আরাকান আর্মি। বুধবার রাতে শিবিরে আক্রমণ শুরু করার পর টাউনশিপের প্রবেশপথে অবস্থিত সুপরিচিত জান্তা ক্যাম্প আহ লেল থান কিয়াও দখল করে তারা। হামলার আগে প্রায় ২০০ জান্তা সৈন্য এবং সীমান্ত রক্ষী কর্মী ক্যাম্পে ছিল এবং অনেকে অন্যান্য ঘাঁটিতে ফিরে গেছে বলে জানা গেছে। জান্তার সামরিক বাহিনী আহ লেল থান কিয়াউ ক্যাম্প এবং মাওয়ায়াদ্দি কৌশলগত কমান্ড বেস উভয়কে রক্ষা করতে বিমান হামলা এবং কামান গোলা ব্যবহার করেছিল।
আরাকান আর্মি শুক্রবার আরও বলেছে যে, তারা আরও যুদ্ধবন্দী নিয়েছে এবং আত্মসমর্পণের পরিবর্তে পালিয়ে যাওয়া জান্তা সৈন্যদের সন্ধান অব্যাহত রেখেছে। সেইসাথে তারা মংডু, অ্যান এবং থান্ডওয়ে শহরে জান্তা লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যাবে। অ্যান কেন্দ্রীয় রাখাইনে এবং থান্ডওয়ে রাখাইন রাজ্যের দক্ষিণে অবস্থিত।
পত্রিকাটি ওই প্রতিবেদনে আরো জানায়, বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মংডু থেকে অন্তত ২৮টি পরাজিত জান্তা সেনা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়েছে। গত রোববার মিয়ানমারের ১৩০ জনেরও বেশি নিরাপত্তা কর্মী এবং তাদের পরিবারের সদস্য যারা পূর্বে যুদ্ধ থেকে পালিয়ে এসেছিলেন তাদের বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাবাসনের মাত্র কয়েকদিন পর এই সর্বশেষ আগমন ঘটেছে।
পত্রিকাটি আরও জানায়, এই মাসের প্রথম সপ্তাহে, আরাকান আর্মি মংডু-আগনুমাউ রোডের মিন্ট লুট গ্রামের কাছে বর্ডার গার্ড পুলিশ ৯ ব্যাটালিয়ন নং এবং ইন দিন গ্রামে বর্ডার গার্ড পুলিশ ৬ ব্যাটালিয়ন নং এর সদর দপ্তর সহ ছয়টি জান্তা ঘাঁটি দখল করে। ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সেনারা ১০ জন রোহিঙ্গাকে এই অঞ্চলে গণহত্যা করেছে।
ওই প্রতিবেদনে দ্য ইরাবতী আরো জানায়, আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের অর্ধেকেরও বেশি অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। তারা গত বছরের নভেম্বরে রাজ্যে জান্তা অবস্থানের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে রাজ্যের ১৭ টি টাউনশিপের মধ্যে নয়টি টাউনশিপ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। চিন রাজ্যের প্রতিবেশী পালেতওয়া টাউনশিপেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তারা। রাখাইন মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য। ৬৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাজ্যটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত। এটি বঙ্গোপসাগরের মুখোমুখি এবং এর পূর্ব সীমান্তে পাহাড়ের একটি শ্রেণী দ্বারা মিয়ানমারের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন।
তথ্যসূত্রঃ দ্য ইরাবতী