স্টাফ রিপোর্টার-
শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা দেয়ার নাম করে দেশের সাধারন মানুষের মূল্যবান ক্রেডিট কার্ড/ডেবিট কার্ড এবং মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টের অর্থ হাতিয়ে নেয়া প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন – চক্রের মূলহোতা মো: জাকির হোসেন হাওলাদার (৪৭), শামীম হোসেন (২৯), জিহাদ (৩৪), মো: সাদ্দাম হোসেন ওরফে মো: আমির হামজা (২৬), মো: আহাদ গাজী ( ২৪), মো: মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে জয় (২৬), মো: বাপ্পি মোল্লা (২০) এবং মো: উসমান গনি মোল্লা (৩৩)। এ সময় আসামীদের কাছ থেকে সর্বমোট ২৩টি মোবাইল সেট, ৩১০টি সীম কার্ড এবং নগদ তিন লক্ষ এক হাজার দুই শত সত্তর টাকা ও ৯টি ব্যাংক লেনদেন স্লিপ উদ্ধার করে র্যাব এবং উদ্ধারকৃত প্রত্যেকটি সীম কার্ডে বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এর একাউন্ট পাওয়া গেছে।
র্যাব বলছে, প্রতারক চক্রটি ওয়েলকাম/হ্যালো গ্রুপ নামে পরিচিত। র্যাব-৫, ৪, ৮, ১০, ১১ ও ১৪ এর যৌথ অভিযানে ঢাকা, জামালপুর, রাজশাহী, নারায়নগঞ্জ, কুমিল্লা ও ফরিদপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
সোমবার (২২ এপ্রিল) সকালে কারওয়ান বাজারে অবস্থিত র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব ৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস।
এসময় তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা দেয়ার নাম করে বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড/ডেবিট কার্ড ও মোবাইল
ব্যাংকিং এর মাধ্যমে এক শ্রেণীর প্রতারক চক্র বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের নিকট থেকে বিপুল পরিমান অর্থ হাতিয়ে নেয়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে এ সকল প্রতারকদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
তিনি আরও বলেন, গত ২৪শে মার্চ আনুমানিক সকাল পৌনে এগারোটায় রাজশাহীর বোয়ালিয়া মডেল থানাধীন শালবাগান বিএনসিসি অফিসে
অবস্থানকালে একজন ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বারে অজ্ঞাতনামা একটি মোবাইল নম্বর থেকে তার মেয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাউন্ট শাখায় কর্মরত মোঃ মিজানুর রহমান বলে পরিচয় দিয়ে তার মেয়ের এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়ায় শিক্ষা উপবৃত্তির ২২,৫০০/- টাকা এসেছে বলে জানায়।
অধিনায়ক বলেন, টাকাগুলো তার একাউন্টে দেয়ার কথা বলে একটি ব্যাংকের এটিএম কার্ডের ষোলো ডিজিটের নাম্বার দিতে বললে তিনি তার কার্ডের ষোলো ডিজিটের নাম্বার প্রদান করেন। এসময় ফোনের অপর প্রান্তে থাকা প্রতারক কৌশলে ভুক্তভোগীর ওটিপি নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে ওই ভুক্তভোগী তার মোবাইল মেসেজ অপশনে দেখতে পান যে, তার একাউন্ট থেকে চার বারে ১,৫০,৫০০/- টাকা উঠিয়ে নেয়া হয়েছ। প্রতারকরা ওটিপি দিয়ে কার্ডের এ্যাকাউন্টে থাকা অর্থ আত্মসাৎ করে নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে তিনি অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে আরএমপির বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
লে.কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, গতকাল র্যাব-৫ এর একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে প্রতারনার কাজে জড়িত শামীম হোসেন (২৯) কে রাজশাহী জেলার রাজপাড়া থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। তাকে গ্রেফতারের পর র্যাব জানতে পারে সে শুধুমাত্র মাঠ লেভেলে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করে বিভিন্ন ব্যাংকের একাউন্টে প্রেরণ করতো। তার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানা এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে বিভিন্ন কোম্পানীর সীম কার্ডসহ বেশ কয়েকটি মোবাইল উদ্ধার করে। পরবর্তীতে তার দেয়া তথ্য মতে চক্রের অপর সদস্য মোহাম্মদ জিহাদ (৩৪) কে বিপুল পরিমান সীম কার্ডসহ জামালপুর জেলার সদর থানা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
তিনি আরও বলেন, কুমিল্লা জেলার হোমনা থানা এলাকা থেকে চক্রের অপর সদস্য কাজী সাদ্দাম হোসেন ওরফে আমির হামজা (২৬) কে গ্রেফতার করে র্যাব। আমীর হামজা মূলত বিভিন্ন স্থান থেকে বেনামী রেজিস্ট্রেশনকৃত সীম কার্ড সংগ্রহ করে দিত। এরপর তার দেওয়া তথ্য মতে অপর এক প্রতারক
মোঃ আহাদ গাজী (২৪) কে গ্রেফতার করা হয়। সে
প্রতারনার আড়ালে একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানীর সীমকার্ড ক্রয়-বিক্রয় করে আসছিল। গ্রেফতারকৃত জিহাদ ও শামীম এর দেওয়া তথ্যমতে
ঢাকার কাফরুল থানা এলাকা থেকে প্রতারক মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে জয় (২৬) কে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাবের ওই অধিনায়ক জানান, গ্রেফতারকৃত মোস্তাফিজের দেয়া তথ্য মতে ফরিদপুর জেলার ভাংগা থানা এলাকা থেকে পলাতক চক্রের অপর মূলহোতা মোঃ বাপ্পি মোল্লা (২০) কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র্যাব। পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্য মতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তার এই চক্রের মূলহোতা মোঃ জাকির হোসেন হাওলাদার (৪৭) ফরিদপুর জেলার ভাংগা থানা এলাকা থেকে আটক করা হয়।
গ্রেফতারকৃত জাকির হোসেন হাওলাদার সম্পর্কে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সে একজন বহুরুপী প্রতারক। বংশপরম্পরায় তারা মানুষের সাথে বিভিন্ন ধরনের প্রতারনা করে আসছিল। তারা এই ধরনের কাজের জন্য পলাতক জীবন যাপন করত। তাদের নামে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ থানা আশুলিয়া থানা, ডিএমপি’র ডেমরা থানা, ক্যান্টনমেন্ট থানাসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।