স্টাফ রিপোর্টার-
চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্যভর্তি কনটেইনারের সংখ্যা বাড়ার ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক। বন্দরের বহির্নোঙরে আমদানি পণ্যবোঝাই জাহাজের সংখ্যাও বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে জাহাজের অপেক্ষমাণ সময়। সরকারের হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে জাহাজের ওয়েটিং টাইম ৬০ ঘণ্টা। এই ওয়েটিং টাইম কমিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনতে প্রকল্পের আওতায় কেনা হচ্ছে এগারোশ কোটি টাকার আধুনিক যন্ত্রপাতি।
‘চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন ইয়ার্ড ও টার্মিনালের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকল্পটি যখন অনুমোদন পায় তখন ব্যয় ধরা হয়েছিল ৯১৪ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা ছিল। নতুন করে চলমান প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে। এখন মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ১৩৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা এবং মেয়াদ ৩০ জুন ২০২৫ সাল। সংশোধিত এ প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (চবক) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। চলমান প্রকল্পের আওতায় এরই মধ্যে ৪৭ শতাংশ যন্ত্রপাতি বন্দরে চলে এসেছে। প্রকল্পটি শতভাগ বাস্তবায়ন করতে আরও সময় ও ব্যয় প্রস্তাব করেছে চবক।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল) ও প্রকল্প পরিচালক কমডোর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দরে যাতে জাহাজের ওয়েটিং টাইম কমে সে টার্গেট নিয়ে কাজ করছি। যন্ত্রপাতি কেনা হলেই প্রকল্পের সুফল মিলবে।’
‘বর্তমানে ৪৭ শতাংশ যন্ত্রপাতি চলে এসেছে। বাকি কাজ সম্পন্ন করতে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়াতে হবে। সে কারণেই মূলত প্রকল্পের ডিপিপি সংশোধনের প্রয়োজন। তবে প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৮৪ শতাংশ, এলসি ওপেনিং বাকি ১০ শতাংশ। বৈশ্বিক নানা জটিলতার কারণে কাজ বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়া ডলারের মূল্য বাড়ার কারণেও প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে।
নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, প্রকল্পটির মূল উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম বন্দরের কার্গো/কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্টের পর্যাপ্ততা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়ানো। এটা হলে কার্গো/কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্টের পর্যাপ্ততা ৭০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশে উন্নীত হবে। বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালে (এনসিটি) গ্যান্ট্রি ক্রেনের চাহিদা শতভাগ পূরণ এবং জাহাজের ওয়েটিং টাইম ৬০ ঘণ্টা থেকে নামিয়ে ৪৮ ঘণ্টায় আনা সম্ভব হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে সৃষ্ট বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটকালীন সরবরাহকারী বরাবর এলসি ওপেন করতে অধিক সময়ের প্রয়োজন হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে দেরি হচ্ছে সাত থেকে আট মাস। এলসি ওপেন নিশ্চিত হলে সরবরাহকারী-প্রস্তুতকারীরা ইক্যুইপমেন্ট প্রস্তুত প্রক্রিয়া শুরু করে। কোভিড-১৯ পরবর্তী পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন সৃষ্টি হচ্ছে বিধায় বিভিন্ন মালামাল-কম্পোনেন্ট প্রস্তুতকারী ভেন্ডর যথাসময়ে সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে না। ফলে কার্গো-কনটেইনার হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট প্রস্তুতকারীরা ইক্যুইপমেন্টগুলো প্রস্তুত করতেও অধিক সময় নিচ্ছে।
প্রকল্পের আওতায় ১০৪টি ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ করা হবে।
দুটি ১০০ টনের মোবাইল ক্রেন, দুটি ৫০ টনের মোবাইল ক্রেন, চারটি গ্যান্ট্রি ক্রেন, ছয়টি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন, দুটি কনটেইনার মুভার, চারটি ভেরিয়েবল রিচ ট্রাক, চারটি রিচ স্টেকার, পাঁচটি রাবার টায়ার্ড গ্যান্ট্রি ক্রেন কেনা হবে। ৬টি দুই হাই ব্লাডেল ক্যারিয়ার, ৬টি চার হাই ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার, দুটি লগ হ্যান্ডলার টেকার, চারটি চার হাই ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার, দুটি লো-বেড ট্রেইলার, দুটি ছেডি ট্রাক্টর, ১২টি ২০ টনের মোবাইল ক্রেন, ছয়টি চার হাই ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার, পাঁচটি চার হাই ট্র্যাডেল ক্যারিয়ার, একটি মেটারিয়াল-মাল্টি হ্যান্ডলার এবং ২৩টি ১০ টনের মোবাইল ক্রেন সংগ্রহ করা হবে।
ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় এলসি চার্জ, বিমা প্রিমিয়াম, ইন্সপেকশন এজেন্সির বিল ইত্যাদি বাবদ অন্য ব্যয় এর আগে অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয়ে অন্তর্ভুক্ত নেই। ফলে এসব ব্যয় বাবদ যন্ত্রপাতির চুক্তিমূল্যের সম্ভাব্য ক্রয়মূল্যের আনুমানিক ৩ শতাংশ থোক রাখা যেতে পারে।
মন্ত্রণালয় আরও জানায়, প্রকল্পের বিভিন্ন আইটেমের ব্যয় বেড়েছে। মূলধন, জেনারেল কার্গো বার্থ (জিসিবি), চিটাগাং কনটেইনার টার্মিনাল (সিসিটি), নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি), নিউমুরিং ওভার ফ্লো কনটেইনার ইয়ার্ড (এনওএফসিওয়াই), সাউথ কনটেইনার ইয়ার্ড (এসসিওয়াই), পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালেও (পিআইসিটি) ব্যয় বৃদ্ধি বাড়ছে। বড় বড় খাতের মধ্যে সিডি ভ্যাট ও আয়কর বাবদ ৮ কোটি ৭৭ লাখ, প্রাইস কন্টিনজেন্সি খাতে ৩ কোটি ৫০ লাখ এবং অন্য ব্যয় (এলসি চার্জ, বিমা প্রিমিয়াম, ইন্সপেকশন বিল ইত্যাদি) বাবদ ৩০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা ব্যয় বেড়েছে।