স্টাফ রিপোর্টার-
সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকার বাজারে বেড়েছে ডিমের দাম। এক-দেড় মাস সহনীয় পর্যায়ে থাকার পর ফের বাড়তে শুরু করলো নিত্যপণ্যটির দাম। একইভাবে ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের দামও।
অন্যদিকে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে চড়া সবজির দাম। চালের দাম ভোটের সময় যে হারে বেড়েছিল এখনো তা সহনীয় পর্যায়ে আসেনি। তাতে সাধারণ ক্রেতারা পড়েছেন অস্বস্তিতে।
শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে এ চিত্র।
পাড়া-মহল্লার খুচরা দোকানে এখন প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা দরে। একটি ডিম ১৩ টাকা দরেও বিক্রি হতে দেখা গেছে। সে হিসাবে ডজন পড়ছে ১৫৬ টাকা। তবে বড় বাজারে ডিমের ডজন ১৪০-১৪৫ টাকায় মিলছে।
পাইকারি ডিম বিক্রেতারা জানান, মুরগির খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় ডিম উৎপাদনের খরচ বেড়েছে। দ্বিতীয়ত, শীতকালীন সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজনের হার বাড়ায় চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। দুইয়ে মিলে ডিমের দাম বাড়ছে।
এদিকে চলতি সপ্তাহে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছে পেঁয়াজ। ভারত রপ্তানি বন্ধ করার পরে নভেম্বর-ডিসেম্বরে উত্তপ্ত ছিল দেশের পেঁয়াজের বাজার। জানুয়ারি মাসে মুড়িকাটা পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়ায় দাম ৮০ টাকায় মধ্যে নেমে আসে। মাসের শেষে নতুন করে বাজারে পেঁয়াজের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে।
পাড়া-মহল্লার খুচরা বাজারে বেশিরভাগ দোকানেই নতুন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজিতে। পুরোনোর কেজি ৯০ টাকা। তবে বড় বাজারে ৮০ টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে।
পেঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে মালিবাগ বাজারের বিক্রেতা এনামুল হোসেন বলেন, মুড়িকাটা শেষ, নতুন হালি পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়তে কিছুদিন সময় লাগবে।
তিনি বলেন, মোকামে দাম বেড়েছে। পাবনায় প্রতি মণ ৩২০০ থেকে ৩৪০০ টাকা কেনা পড়ছে। যা আগের থেকে ৪০০ টাকা বেশি।
চালের দাম ৬ টাকা বেড়ে এখন ২-৩ টাকা কমেছে
ভোটের সময় সারাদেশে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছিল চালের দাম। সে সময় প্রতি কেজি চালের দাম ৬ টাকা পর্যন্ত বাড়ে। এরপর গত দুই সপ্তাহ ঢাকাসহ সারাদেশে মজুতবিরোধী অভিযান শুরু করে খাদ্য অধিদপ্তর। এ অভিযানের ফলে কোথাও কোথাও ধান ও চালের দাম কিছুটা কমেছে।
তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগেই উচ্চমূল্যে থাকা চালের দাম কমেছে সামান্যই। বাজারে মিনিকেট চাল কেজিতে সাড়ে ৬ টাকা বাড়লেও অভিযানের পর কমেছে ২ টাকা।
শুক্রবার মালিবাগ চালের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮-৭০ টাকায়, এক সপ্তাহ আগেও যা ছিল সাড়ে ৭১-৭২ টাকা। তবে ভোটের আগে এ মিনিকেট বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬৫-৬৬ টাকায়। হিসাব অনুযায়ী মিনিকেট চালের বাজার বেড়েছিল ৬ টাকা। অভিযানের পর সেই চালের দাম কমেছে মাত্র ২ টাকা।
এভাবে ব্রি-২৮ জাতের চালের কেজি আগে ৫৫ থেকে বেড়ে ৬০ টাকা হলেও সর্বশেষ এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৮ টাকায়, স্বর্ণা ৫০ থেকে বেড়ে ৫৫ টাকা হলেও এখন ৫৩-৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ওই বাজারে কুমিল্লা রাইস এজেন্সির ফরিদ হোসেন বলেন, চালের দাম বাড়া শুরু করেছে নির্বাচনের পরের দিন থেকে। ২ হাজার ৯০০ টাকা বস্তার মিনিকেট হয়ে যায় ৩ হাজার ৩০০ টাকা। অভিযানে নামার পর বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা কমে। অর্থাৎ যা বেড়েছিল তার থেকে অর্ধেক এখনো কমেনি।
লাউয়ের পিস ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে
সবজির বাজারে অস্বস্তি দীর্ঘদিনের। যদিও এখন শীতকাল, চলছে সবজির ভরা মৌসুম। তারপরও বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম ৮০ টাকার ওপরে। যা সাধারণের নাগালের বাইরে।
এছাড়া মৌসুমি ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতি পিস ৪০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একটি মাঝারি আকারের লাউ ১০০-১২০ টাকায় খুচরা বিক্রি হচ্ছে, যা এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১০-২০ টাকা বেড়েছে।
এছাড়া খুচরা বাজারে শীতকালীন বেগুন ৯০-১১০ টাকা কেজি, দেশি শিম ৬০-১০০ টাকা, টমেটো ৭০-৯০ টাকা, শসা ৬০-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
সবজি বিক্রেতা আবেদ আলী বলেন, এ বছর সবজি ও আলুর সরবরাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। আবহাওয়ার কারণে অক্টোবর এবং নভেম্বরে ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
যদিও বাজারে আলুর দাম কিছুটা কমতে শুরু করেছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। অন্যান্য বছরের স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় এর দাম বেশি হলেও শেষ কয়েক মাসের তুলনায় কম।