স্টাফ রিপোর্টার-
রাজধানীর সবুজবাগ থানার বসাবো এলাকায় ছুরিকাঘাতে বাক প্রতিবন্ধী লেগুনা চালক নাদিম হোসেনকে (২৮) হত্যার ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
ডিবি বলছে, নিহত লেগুনা চালক নাদিম ও তার হত্যায় জড়িতরা সবাই মাদকাসক্ত ও মাদকের খুচরা কারবারি। মাদক বিক্রির টাকার ভাগাভাগির দ্বন্দ্বের জেরে নাদিমকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে নাদিমের সহযোগীরা।
হত্যায় জড়িত গ্রেফতারকৃতরা হলো- হৃদয় গাজী (২১), মো. সাকিব (২৩), মো. কাঞ্চন খাঁ (৩০), মো. ইয়াছিন (২৫) ও আতাউর রহমান রনি (২৮)।
গতকাল রাজধানীর বাসাবো, যাত্রাবাড়ী ও মোহাম্মদপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়।
রবিবার ( ১৪ জানুয়ারি ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবিতে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
হারুন অর রশীদ বলেন, চলতি মাসের ১০ তারিখ বাক প্রতিবন্ধী লেগুনা চালক নাদিমকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে লাশ ফেলে যায়। এর আগে ঘটনার দিন সকালে সবুজবাগ থানার ওহাব কলোনীর বোনের বাসা থেকে বের হয়ে দক্ষিণ বাসাবো বালুর মাঠের পাশের একটি নির্মাণাধীন ভবনে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিতে যায়। এই ভবনে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর মাদক ব্যবসায়ী এবং মাদকাসক্তদের আড্ডা জমত। নাদিম একই এলাকার চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা।
হত্যার আগে টাকা ভাগাভাগির দ্বন্দ্বের বিষয় অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, নির্মাণাধীন ভবনে নিয়মিত মাদকের আসর বসত। ঘটনা দিন সকালে নাদিমের সঙ্গে হৃদয় গাজী, সাকিব, পাঞ্চ পিয়াস, কাঞ্চন খাঁ, ইয়াসিন ও রনিসহ অনেকে আড্ডা দিচ্ছিলো। তারা সবাই চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। সাকিবের সঙ্গে নাদিমের মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধ ছিলো। নাদিমের মামা মাদক ব্যবসায়ী ঠোঙ্গা সুমন ও তার মামী বানু মিলে সাকিবকে মাদকসহ পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। এই পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে সাকিব তার বন্ধু হৃদয় গাজীকে দিয়ে ঠোঙ্গা সুমনকে কুপিয়ে আহত করে এবং এর জন্য হৃদয় গাজীকে জেলও খাটতে হয়। এছাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নাদিমের সঙ্গে সাকিবসহ অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীদেরও বিরোধ চলে আসছিল। সাকিবসহ অন্য মাদক কারবারিরা মিলে নাদিমের মাদক ব্যবসা থেকে উপার্জিত টাকার ভাগ দিতে বলে। নাদিমে কাছে টাকা নাই বললে তারা বিকাশ থেকে টাকা উত্তোলন করার জন্য নাদিমের মোবাইল ফোন দিতে বলে। নাদিমের কাছে বিকাশ একাউন্ট থাকা মোবাইল ফোন না পেয়ে তারা নির্মাণাধীন ভবনে নাদিমকে আটকে ফেলে। এরপর পাঞ্চ পিয়াস ও হৃদয় গাজী নাদিমের বড় বোনের বাসায় গিয়ে বাটন ফোনটির খোঁজ করে। সেখানে বাটন ফোনটি না পেয়ে তারা পুনরায় নির্মাণাধীন ভবনে ফিরে আসে।
হৃদয় গাজী নাদিমকে টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিলে সে টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এক পর্যায়ে হৃদয় গাজীর কাছে থাকা ছুরি দিয়ে নাদিমের ডান উরুতে পোছ দেয়। পরবর্তীতে পাঞ্চ পিয়াস ও কাঞ্চন মিলে নাদিমকে সিএনজিতে করে ওহাব কলোনী এলাকার নূরে মোহাম্মাদীয়া আরাবিয়া ফাজিল মাদ্রাসার সামনে রাস্তায় ফেলে চলে যায়। হৃদয় গাজী ও ইয়াছিন মুগদা স্টেডিয়ামের পাশের একটি পরিত্যক্ত স্থানে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরিটি লুকিয়ে রেখে পালিয়ে যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা ডিবিকে জানিয়েছে, সাকিব, হৃদয় গাজী ও ইয়াছিন ঘটনার পর সকালেই কুমিল্লা গিয়ে ৩০০০ পিস ইয়াবা কিনে রাজধানীর সবুজবাগ এলাকায় আসে বিক্রি করার জন্য। তাদেরকে গ্রেফতার অভিযানে ডিবি পুলিশ মুগদা এলাকায় একটি বাড়ীর ছাদের উপর একটি পরিত্যক্ত টিনের ঘরের সন্ধান পায় যেখানে তারা প্রায়ই রাতে মাদক সেবন করে। পরিত্যক্ত টিনের ঘরটিতে যাওয়ার স্বাভাবিক কোন রাস্তা নেই। পাশের ভবনের দেয়াল টপকে সেখানে যেতে হয়। যা একজন স্বাভাবিক মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
গ্রেফতারকৃতরা আরও জানিয়েছে, তারা প্রত্যেকেই গাঁজা, ইয়াবা ও হেরোইন সহ একাধিক মাদকে আসক্ত। মূলত এই মাদকের টাকা যোগাড় করতেই তারা মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ে।
গ্রেফতারকৃত প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে এক ডজনের বেশি মামলা রয়েছে। নাদিম হত্যা মামলার অন্যতম আসামি সাকিব ঘটনার চারদিন আগে জেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছিলো।
নির্মাণাধীন ভবনে মাদকের কারবার ও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আড্ডার বিষয় বাড়ির মালিকদের অবহেলা রয়েছে উল্লেখ করে ডিবি প্রধান বলেন, যে সকল নির্মাণাধীন ভবন এমন মাদকের আসর ও কেনাবেঁচা হয় সে সকল বাড়ির মালিদের অবহেলা রয়েছে। কারণ প্রতিটি ভবনেই নিরাপত্তা কর্মী থাকেন তারা পুলিশকে জানালে আমরা ব্যবস্থা নিতাম। আর নিরাপত্তা কর্মীরা না পারলে বাড়ির মালিকরা অন্তত জানাতে পারেন। কিন্তু তারা এটা করেন না। এমন ঘটনায় তাদের দায় রয়েছে। না হলে আমরা বুঝবো মাদক কারবারিদের কাছে ভবন ভাড়া দিয়ে তারা লাভবান হচ্ছেন। তারা যদি ব্যবস্থা না নেয় তাহলে আমরা বাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।