স্টাফ রিপোর্টার-
রাজধানীর ভাটারা থানার জগন্নাথপুর শহীদ আব্দুল হাফিজ রোডে ‘সুসিং টাওয়ার’ নামের ভবনে “অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ কোম্পানি লিমিটেড (এএনএ) নামের বিদেশি বিমান সংস্থার
জাঁকজমক পূর্ণ কার্যালয়ের ঠিকানা ব্যবহার করে পত্রিকায় এএনএ নামের বিমান সংস্থার এয়ার হোস্টেজসহ বিভিন্ন পদে লোভনীয় বেতনে চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে ফাঁদ পাতে একটি চক্র।
এই বিজ্ঞাপন দেখে অন্তত দুই শতাধিক চাকরি প্রার্থী আবেদন করেন। এরমধ্যে থেকে বাছাই করে ১৭০ জনকে চাকরির ইন্টারভিউর জন্য ডাকা হয়। ইন্টারভিউতে বসার ক্ষেত্রে অগ্রিম দিতে হয় ১ থেকে দুই লাখ টাকা। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে আরও পাঁচ হাজার টাকা আদায় করা হয়।
মাত্র এক মাসে প্রায় অর্ধশত চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- চক্রের মূলহোতা ও হোমিওপ্যাথি ঔষধ বিক্রেতা এম. এ. হক আলম ফরহাদী (৬০), মেহেরাব হোসেন (২১), মো. রাসেল হোসাইন (৩০) ও শাহাদাত হোসেন
(৩৫)।
এ সময় চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া নগদ ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫০০ টাকা, প্রতারণায় ব্যবহৃত ল্যাপটপ, মনিটর, বিপুল পরিমাণ চাকরির আবেদনপত্রসহ প্রতারণায় ব্যবহৃত মালামাল উদ্ধার করা হয়।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাব-১০ এর অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন।
র্যাব-১০ অধিনায়ক বলেন, চাকরির নামে টাকা আদায়ের নামে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজধানীর ভাটারা থানার জগন্নাথপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিদেশি বিমানসংস্থায় চাকরির নামে প্রতারণার অভিযোগে চার প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন বলেন, এই চক্রটি মাত্র এক মাসে চটকদার বিজ্ঞাপনের বিদেশি প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে শুধুমাত্র ইন্টারভিউর নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চক্রের টার্গেট ছিলো আগামী ছয় মাস চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে ইন্টারভিউ ও প্রশিক্ষণের নামে অন্তত ৩০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া। পাশাপাশি ভাটারায় ড্রাগমা ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠানলনের সঙ্গে স্বাস্থ্য পরীক্ষার নামে টাকা আদায়ের চুক্তি করে। এর মাধ্যমেও বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিয়ে আসছিলো।
তিনি আরও বলেন, প্রতারক চক্রের মুল হোতা আলম ফরহাদী অল্প কিছু পড়াশোনা করে ফেনীতে নিজ এলাকাকে হোমিওপেথির ঔষধ বিক্রি করতো। পরবর্তীতে ঢাকায় এসে অল্প সময়ে টাকা আয় করতে বিভিন্ন প্রতারণার সঙ্গে জড়িয়ে যায়। এই প্রতারণা করতে গিয়ে নিজেকে বিসিএস শিক্ষা কর্মকর্তা, দুদক কর্মকর্তা পরিচয় ব্যবহার করতেন। এমন কি ভুক্তভোগী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিভ্রান্ত করতে তার তিন সন্তান সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তা বলে পরিচয় দিতেন। সম্প্রতি তিনি এএনএ নামের জাপানি এয়ারওয়েজ প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারে। পরবর্তীতে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেওয়ার নামে ফাঁত পাতেন। মাত্র এক মাসে তার মাধ্যমে প্রতারণার শিক্ষার হয়েছেন শতাধিক চাকরি প্রার্থী। হাতিয়েছেন কোটি টাকা।
গ্রেফতার আলম ফরহাদী র্যাবে কাছেও
১৮-১৯ বছর ধরে দুদকের কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন বলে পরিচয় দেন। যদিও যাচাই-বাছাই দেখা যায় তিনি সরকারি কোনো পদেই নেই। ফরহাদীর বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান থানায় প্রতারণা ও মানি লন্ডারিংয়ের দুটি মামলা রয়েছে।
র্যাব-১০ এ কর্মকর্তা আরও জানান, গ্রেফতার মেহেরাব হোসেন (২১) একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। চাকরির খোঁজ করতে ফরহাদীর সঙ্গে পরিচয়। পরবর্তী মোটা অংকের টাকা বেতানের প্রলোভনে সে এই চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে যায়। প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করত। শাহাদাত হোসেন (৩৫) পড়ালেখা শেষ করে বেকার ছিলেন। এর আগে সে কয়েক মাস একটি এয়ার টিকেটিং কোম্পানীতে চাকরি করত। সহকর্মীর মাধ্যমে ফরহাদীর সঙ্গে পরিচয় হলে চক্রে যোগ দিয়ে রিজার্ভেশন অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করে। রাসেল হোসাইন (৩০) পড়াশোনা শেষ চাকরির খুঁজতে গিয়ে ফরহাদীর সঙ্গে পরিচয়। পরবর্তীতে ফরহাদীর নতুন অফিসের অফিস সহায়ক হিসেবে কাজ শুরু করে। গ্রেফতার প্রতারক চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।