1. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  2. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  3. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪, ১২:১৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা প্রত্যাখ্যান শতভাগ শিক্ষার্থীর মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতির মামলা অবশেষে গ্রেফতার মিল্টন সমাদ্দার মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি পুলিশের বিশেষ অভিযানে মাদক ও ছিনতাই চক্রের ৭ সদস্য গ্রেফতার সাভারের পাঁচ খাল-বিলের সীমানা নির্ধারণে হাইকোর্টের নির্দেশ আগামীকাল দ্বাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু মে দিবসে ক্যাপ, পানি, স্যালাইন বিতরন করলো তেজগাঁও থানা পুলিশ মে দিবসে উপলক্ষে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি অনুষ্ঠিত শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা বঞ্চিত করলে কাওকেই ছাড় দেয়া হবে না-প্রধানমন্ত্রী

বিএনপির সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক ১৪ বছরে ৫২ বার শুধুই জ্বালাময়ী হুঙ্কার

  • সময় : মঙ্গলবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৩
  • ১৩৯

ফেরদৌস আরেফীন, ঢাকা:

তৃতীয়বারের মতো পরিপূর্ণ সরকারের মেয়াদ পূরণ করতে যাচ্ছে শেখহাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। বিএনপি জামায়াতেরদুঃশাসন আর ওয়ান-ইলাভেনের চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ২০০৮ সালের২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাপেয়ে নির্বাচিত হবার পর, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে আরও দুটোনির্বাচনে জয় তুলে নিয়ে একটানা প্রায় ১৪ বছর টানা ক্ষমতায়আওয়ামী লীগ তথা মহাজোট সরকার।

এই ১৪ বছরে দেশের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি শুরুথেকেই সরকার পতনের লক্ষ্যে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েআসলেও, তার ব্যাপ্তি ছিলো বক্তৃতার মঞ্চ পর্যন্তই। বারবার ‘ঈদেরপর কঠোর আন্দোলন’ হুঁশিয়ারি দিতে দিতে বিএনপি নেতারারীতিমতো হাস্যরসের সৃষ্টি করেছিলেন, ‘ঈদের পর’ বাগধারাটি নিয়েসামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে পুরো জাতি রীতিমতো রসালোএবং ক্রিয়েটিভ একপ্রকার কৌতুক চর্চায় মেতে উঠেছিল বলা যায়।

গত ১৪ বছরের বিভিন্ন পত্রিকার সংবাদ ও ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করলেদেখা যায়, এই পুরো সময়ে বিএনপি’র শীর্ষ নেতৃবৃন্দ প্রত্যক্ষ ওপরোক্ষভাবে নানা ধরনের হুমকি-ধামকি দিলেও, মোটা দাগে সরকারপতনের লক্ষ্যে চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দিয়েছে মোট ৫২ বার। আর‘ঈদের পর কঠোর আন্দোলন’ বলে বিএনপি’র সিনিয়র নেতাদের দেয়া হাঁকডাকের সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮ বার।

ছোটবেলায় আমরা সবাই দুষ্টু রাখাল আর বাঘের গল্পটি শুনেছি। রাখালের সেই বাঘ একদিন ঠিকই এসেছিলো, কিন্তু বিএনপি’র চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক প্রকৃতপক্ষে কাগুজে বাঘ হয়েই রইলো, আসল বাঘ তথা আন্দোলনের কোনো চিহ্নও দেখাতে পারলোনা দলটি।

বিএনপি’র এই হাঁকডাকের শুরু ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় বসার পর থেকেই। সেই ধারাবাহিকতায় বড়সড় হুংকারটি প্রথম ছেড়েছিলেন তৎকালীন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া স্বয়ং। তারিখটি ছিল ২৯ মার্চ ২০১০। চট্টগ্রামে লালদীঘির ময়দানে এক জনসভায় সে সময়ের বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াহুংকার ছেড়ে বলেছিলেন, “সবাই প্রস্তুতি নিন, অবিলম্বে এই সরকারকে টেনেহিঁচড়ে ক্ষমতা থেকে নামানো হবে”। 

খালেদা জিয়ার হাত ধরে সেই যে হুংকারের যাত্রা শুরু হলো, তা অত্যন্ত সফলতার সাথে গত ১৪ বছর ধরে চালিয়ে গেলেন বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা, এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। কেবল এর কোনো প্রভাব রাজপথে কিংবা বিএনপি নেতাকর্মীদের কোনো কাজেকর্মে প্রতিফলিত হতে দেখা যায়নি কখনো, পুরো আন্দোলন আটকে আছে কেবল বড়বড় হুংকার আর রাজনৈতিক গলাবাজীর মধ্যেই।

২০১০ সালের নভেম্বরেই বিএনপি তাদের আন্দোলনের এক আকর্ষণীয় নামকরণ করে। প্রথমবারের মতো জাতি জানতে পারে, রাজপথ ছাড়াও রাজনৈতিক আন্দোলনের বিভিন্ন রূপ আছে, বিভিন্ন উপযোগ আছে। সেসময় বিএনপি’র দেয়া ‘দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও’ স্লোগান সম্বলিত তথাকথিক কঠোর আন্দোলনের নামকরণের মধ্য দিয়ে দলটির নেতাকর্মীরা আন্দোলনের একটি নামই কেবল উপহার দিতে পেরেছিলেন। হাস্যকর হলেও সত্য, বছরখানেকের মধ্যেই বিএনপি নেতাদের মুখ থেকে অনেক আয়োজন করে দেয়া ‘দেশ বাঁচাও মানুষবাঁচাও’ নামটিও একেবারেই মুছে গিয়েছিল।

২০১২ সাল থেকে প্রথমবারের মতো বিএনপি নেতারা তাদের বহুল আলোচিত ‘ঈদের পর আন্দোলন’ শীর্ষক থিওরির প্রবর্তন করেন। সে বছর ঈদ-উল-ফিতরের আগে প্রথমবারের মতো দলটির তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে ‘ঈদের পরই সরকার পতনের কঠোর আন্দোলন শুরু’ মর্মে জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখতে দেখা যায়। 

এরপর ওই বছরেরই ঈদ-উল-আজহা’র আগে, পরের বছর আবার ঈদ-উল-ফিতরের আগে, ওই বছরই আবার ঈদ-উল-আজহা’র আগে –এভাবে বছরের পর বছর প্রতিটি ঈদের আগে বেগম খালেদা জিয়াসহবিএনপি’র শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে জ্বালাময়ী কন্ঠে নয়াপল্টনসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সভা-সমাবেশে দেয়া বক্তব্যে ‘ঈদের পর’ সংক্রান্ত হুমকি-ধামকি দিতে দেখা যায়। এভাবেই বিএনপি’র ‘ঈদের পর’ বিষয়টা পুরো জাতির জন্য নতুন এক কৌতুকরসের খোরাক হিসেবে উপস্থিত হয়, জাতি চায়ের আড্ডা থেকে সোশ্যাল মিডিয়া সর্বত্র নানামূখী বিষয়ের ক্ষেত্রে হাস্যরসের অসামাণ্য খোরাক হিসেবে ‘ঈদের পর’ বাগধারাটি ব্যবহার করতে থাকে। একপর্যায়ে বিএনপি’র যাবতীয় উদ্দেশ্য-লক্ষ্য যেন ‘ঈদের পর’ নামক ব্যাঙ্গাত্মক এক বাগধারার মধ্যেই সীমিত হয়ে পড়ে।

এই দীর্ঘ ১৪ বছর সময়ের মধ্যে বিএনপি যে রাজপথ গরম করার চেষ্টা করেনি, তা কিন্তু নয়। মাঝের ২০১২ থেকে ২০১৪ এই তিন বছর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ বন্ধ এবং ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচাল করার উদ্দেশ্যে জামায়াতে ইসলামীর সন্ত্রাসী চরিত্রকে আদর্শ মেনে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি দেশজুড়ে ভয়াবহ আগুন-সন্ত্রাস চালায়, চলন্ত গাড়িতে পেট্রল বোমা মেরে অন্তত ৫০০ জন সাধারন মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে, আহত করে আরও প্রায় সাড়ে ৩ হাজার জনকে। কিন্তু দেশের মানুষ বিএনপি-জামায়াতের সেই নৃসংস আগুন-সন্ত্রাসকে এক মুহূর্তের জন্যেও রাজনৈতিক আন্দোলন হিসেবে দেখেনি, বরং বিএনপি’র জন্য ওইসময়ের সন্ত্রাসী ভূমিকা চরম নেতিবাচক হিসেবে নিয়েছিল পুরো জাতি, দলটির প্রতি সামান্য যেটুকু দুর্বলতাও ছিল জনগণের মনে –তাও ধূলিস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল ওই তিন বছরে।

এসবের পাশাপশি, ২০১৫ সালে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালীন মাঝপথে হঠাৎ করে বিএনপি’র তিনদিনের হরতালের ডাক, ২০১৮ সালে ফাতেহা-ই-ইয়াজদহমের দিন দেশব্যাপী বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ, ২০২২ সালে পবিত্র আশুরার দিন ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচী, ২০২৩ সালের জন্মাষ্টমীর দিন বিভাগীয় সমাবেশ –দিনক্ষণের তোয়াক্কা না করে বারবার এরকম অদ্ভুত-বিকৃত কর্মসূচী দলটির নীতিনির্ধারকদেরআদর্শিক অবস্থান ও মানসিক সুস্থতা সম্পর্কে জাতিকে রীতিমতো বিভ্রান্ত করে তোলে। একের পর এক এরকম ঘটনায় সাধারণ জনগণ বিএনপিকে ‘ক্লাউন পার্টি’ নামেও ডাকা শুরু করে।

যাই হোক, ১৪ বছরে ৫২ বার সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দেয়া বিএনপি’র জন্য যে সময় বেঁধে দিয়ে বজ্রকন্ঠে হুংকার দেয়া একটি স্বভাবে পরিনত হয়েছে, তার সবশেষ উদাহরণ দেখা যায় সাম্প্রতিক সময়ে গত সেপ্টেম্বর মাসেই বেগম জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বেঁধে দেয়া ৩৬ ঘন্টার আলটিমেটামের মধ্য দিয়ে। এরপর বহু ৩৬ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও বিএনপি মহাসচিবের কন্ঠে সেই হুংকার নিয়ে আর কোনো আস্ফালন দেখা যায়নি। একই ধারাবাহিকতায় বিএনপি’র আরেক সিনিয়র নেতা গয়েশ্বর রায়ের ‘অক্টোবরের মধ্যেই সরকার পতন হবে’ কিংবা আরেক বড় নেতা শামসুজ্জামান দুদু’র ‘আর মাত্র তিন মাস পর তারেক রহমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন’ –এসব কথায় প্রকৃতপক্ষে বিএনপি’র তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অপরিসীম লজ্জা আর বাঙালি জাতি চরম হাস্যরসের খোরাক ছাড়া আর তেমন কিছুই যে পায়নি –তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪