নিজস্ব প্রতিবেদক
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হয় দ্রুত সংশোধন, নয়তো বাতিল করার দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। এই আইনের কঠোর সমালোচনা করে বিরোধী দলের দুজন সংসদ সদস্য বলেছেন, ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য সরকার এই আইন করেছে। সাধারণ মানুষ ও সাংবাদিকেরা এই আইনের মাধ্যমে হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এখন ডিজিটাল আতঙ্কে পরিণত হয়েছে।
আজ বুধবার রাতে সংসদে ‘এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই) বিল-২০২৩’ পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান ও জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান এসব কথা বলেন। তবে সরকারের তরফে এ বিষয়ে সংসদে কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে মোকাব্বির খান বলেন, ‘আমরা যদি ডিজিটাল প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধ না করতে পারি, তাহলে আইন কোনো কাজে আসবে না। আবার আইনের অপপ্রয়োগ হলে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। এমনটি আমরা দেখেছি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিষয়ে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এখন ডিজিটাল আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এ আইনে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত ৭ হাজার ১টি মামলা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সাংবাদিক কমিউনিটি।’
গত সাড়ে চার বছরে এ আইন ভিন্নমত বা মুক্তচিন্তা দমনে প্রয়োগ হয়েছে বলে উল্লেখ করেন গণফোরামের সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান। তিনি বলেন, এ আইনের কারণে সাংবাদিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মারাত্মকভাবে সংকুচিত হয়েছে। এ আইন পুলিশকে সীমাহীন ক্ষমতা দিয়েছে। পুলিশের আইনেও তাদের এত ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
এ আইন দিয়ে সহজে কাউকে হয়রানি করা যায়, এমন মন্তব্য করে গণফোরামের সংসদ সদস্য বলেন, সম্প্রতি রাতের আঁধারে তুলে নেওয়া হয় প্রথম আলোর সাংবাদিক শামসুজ্জামানকে। র্যাব হেফাজতে মারা যাওয়া সরকারি কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের কথাও সবাই জানে। সরকার ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করার জন্য এ আইনটি তৈরি করেছে। নাগরিক সমাজ, মানবাধিকারকর্মী এবং সাংবাদিকদের প্রবল আপত্তির মুখে আইনমন্ত্রী এই আইন সংশোধনের কথা বলছেন। আশা করা যায়, আইনমন্ত্রী এ বিষয়ে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
ব্যাপক সমালোচনা সত্ত্বেও সরকার ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস করে। এই আইনের অপপ্রয়োগ নিয়ে শুরু থেকেই আশঙ্কা ও উদ্বেগ জানিয়েছিল মতপ্রকাশ ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংগঠনগুলো। সম্পাদক পরিষদ এবং সাংবাদিক ইউনিয়নসহ সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠনও এই আইনের অপপ্রয়োগের বিষয়ে বারবার উদ্বেগের কথা বলে আসছে। এই আইনের আপত্তিকর ধারাগুলো সংশোধনের দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরা হলেও সরকার এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
অবশ্য গত দুই মাসে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একাধিকবার বলেছেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করা হবে।
এই আইন সম্পর্কে সংসদে আজ বিল পাসের আলোচনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, সত্যিকার অর্থেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহারের শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকেরা। স্বাধীন মতপ্রকাশ করতে গিয়ে সাধারণ মানুষও এর শিকার হচ্ছেন, নির্যাতিত হচ্ছেন। প্রভাবশালীরা এটাকে ব্যবহার করছেন। মানুষের স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার হরণ হচ্ছে। এই আইন দ্রুত সংশোধন করা দরকার, বাতিল করলে আরও ভালো হয়।
বেশ কিছুদিন ধরেই মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োগই এখন অপপ্রয়োগ। এই আইনে করা মামলার আসামিদের মধ্যে বড় অংশই সাংবাদিক। আর বেশির ভাগ মামলার বাদী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী বা সমর্থক।
এটুআই এজেন্সি প্রতিষ্ঠায় বিল পাস
‘এজেন্সি টু ইনোভেট’ বা এটুআই নামে নতুন একটি সংস্থা গঠন করতে জাতীয় সংসদে বিল পাস হয়েছে। সরকারি সেবার ডিজিটাল রূপান্তর নিশ্চিত ও টেকসই করার লক্ষ্যে এই সংস্থা করা হচ্ছে। এটি হবে মূলত বর্তমান এটুআই প্রকল্পের স্থায়ী কাঠামো।
‘এজেন্সি টু ইনোভেট (এটুআই) বিল-২০২৩’ বিলটি সংসদে পাসের জন্য উত্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ। বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই–বাছাই কমিটিতে প্রেরণ ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি শেষে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস করা হয়।
বিলে বলা হয়েছে, এই আইন কার্যকর হওয়ার পর সরকার গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে এটুআই নামে একটি এজেন্সি প্রতিষ্ঠা করবে। এই এজেন্সি হবে একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা। এই সংস্থার ১৫ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ থাকবে। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী হবেন এর সভাপতি।
বা বু ম / অ জি