মাত্র কিছুক্ষণ আগে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রবীণ অভিনেতা, কবি, আবৃত্তিকার, নাট্যকার ও নাট্য নির্দেশক সৌমিত্র চট্যোপাধ্যায় ৷ মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর ৷ টানা প্রায় ৪০ দিন নার্সিংহোমে চিকিৎসা চলার পরে, আজ দুপুরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে সবার প্রিয় “পুলুদা”-র জীবনাবসান ঘটে৷
সৌমিত্রবাবুর শরীরে করোনা-র নানা প্রভাব দেখা দেওয়ায়, গত ৬ই অক্টোবর সকালে তাঁকে দক্ষিণ কলকাতার বেলভিউ নার্সিৎহোমে ভর্তি করা হয় ৷ কোভিড পরীক্ষার রিপোর্ট আসে “পজিটিভ”৷
কিন্তু, মাত্র দু’দিনের মধ্যেই তিনি করোনা-মুক্ত হয়ে ওঠেন৷ তাতে অবশ্য খুব একটা লাভ হয় না ৷ কারণ, ততক্ষণে করোনার প্রভাবে শিল্পীর মাথায় হানা দিয়েছে “এনসেফালোপ্যাথি” ৷ চিকিৎসা শুরু হওয়ার পরে তাঁর জ্বর ও শ্বাসকষ্ট অনেকটা প্রশমিত হলেও, ক্রমশ সেগুলি বাড়তে থাকে ৷ তাঁর জন্য ১৬জন চিকিৎসকের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয় ৷ যার প্রধান ছিলেন ডা: অরিন্দম কর ৷ ধীরে ধীরে তাঁর শরীরে প্রবল অস্থিরতা দেখা দেয় ৷ ফলে, মাথার এম আর আই করা সম্ভব হয় না৷ পরে, তা করা হলে দেখা যায়, অত্যন্ত ভয়ের কিছু নেই৷ কিন্তু, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্কট তাতে কমে না ৷ কেননা, তিনি আগে থেকেই প্রোস্টেট ক্যানসার, নিউমোনিয়া এবং শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন ৷ এতে চিকিৎসকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন ৷
তাঁকে কেবিন থেকে আই সি ইউ-তে স্থানান্তরিত করতে হয় ৷ সেখানে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং আরও উন্নত চিকিৎসা শুরু হতেই, তাঁর শারীরিক পরিবর্তন ঘটে৷ তিনি চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্যভাবে সাড়া দিতে থাকেন ৷ তাঁর জ্বর কমে যায়৷ কিডনি, লিভার, হৃদযন্ত্র ঠিকমত কাজ করতে থাকে ৷ রক্তচাপও স্বাভাবিক হয়ে ওঠে৷ রক্তের নানা পরীক্ষায় নতুন কোনও সংক্রমণও ঘটে না ৷ তিনি চিকিৎসকদের ডাকে সাড়াও দিচ্ছেলেন৷ আশ্বস্ত হন চিকিৎসকরা৷ বন্ধ করে দেওয়া হয় স্টেরয়েড ৷ তাঁরা কয়েকদিনের মধ্যে সৌমিত্রবাবুকে হাঁটাচলা করানোর কথাও ভাবছিলেন৷ কিন্তু, তাতে তাঁর অস্থিরতা আবার বাড়তে থাকে ৷ নতুন ধরণের সমস্যা তৈরি হয় মস্তিস্কে ৷ চেতনাশক্তি ক্ষীণ হয়ে পড়ে৷ দেখা যায়, করোনা৷-সংক্রান্ত এনসেফালোপ্যাথি আবার বাড়তে শুরু করেছে৷ ফলে, আবার চিকিৎসকরা ইমিউনোগ্লোবিন ও স্টেরয়েড প্রয়োগ করেন ৷ দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয় ৷ তাঁরা জানান, এনসেফালোপ্যাথি-র কারণে কোনও রোগী টানা ৩ মাসও এই অবস্থায় থাকতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে, অপেক্ষা করা ছাড়া অন্য উপায় নেই ৷
কিন্তু, এরপর দেখা যায় দিনের পর দিন তাঁর শারীরিক অবনতি ঘটছে ৷ নানা ধরণের ওষুধপত্র দিয়ে, এমনকি ডায়ালেসিস করেও প্রার্থিত ফল পাওয়া যায় না ৷ বরং দেখা যায় ক্রমশ চেতনাশক্তি বিলুপ্ত হচ্ছে ৷ পাল্লা দিয়ে কমছে রক্তচাপ ও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা ৷ পাশাপাশি শরীরের অন্যান্য যন্ত্রাংশ বিকল হতে শুরু করে৷ গতকাল মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ডা: অরিন্দম কর একরকম স্বীকারই করে নেন যে, সম্ভবত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের “ব্রেণ ডেথ” ঘটেছে ৷ অতএব, ঈশ্বরের উপর ভরসা করলে যদি কোনও অলৌকিক কিছু ঘটে! কারণ, গত ২৪ ঘন্টায় তাঁর শারীরিক কোনও উন্নতি ঘটেনি ৷ বরং অবনতি হয়েছে৷
একথা তিনি প্রবীণ শিল্পীর বাড়ির লোকেদেরও জানিয়ে দেন ৷
শেষে রবিবার দুপুরে সত্যজিৎ রায়ের “অপু” হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে, গোটা পৃথিবীতে তাঁর অগণিত গুণমুগ্ধদের শোকাচ্ছন্ন করে, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন৷
তাঁর মৃত্যুতে শুধু টলিউডের শিল্পী ও কলাকুশলীরাই নন, বলিউড অর্থাৎ মুম্বাইয়ের চলচ্চিত্র জগতও গভীর শোক প্রকাশ করেছেন৷