1. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  2. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  3. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৫:৫২ অপরাহ্ন

যশোরে স্বাস্থ্যবিভাগের নির্দেশ উপেক্ষা করেচলেছে অবৈধ মাতৃসেবা ক্লিনিক

  • সময় : রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২০
  • ২৮৫

গত মাসে ভুয়া ডিগ্রি ব্যবহারের প্যাডসহ বিভিন্ন কাগজপত্র আগুনে পোড়ানোর পর যশোর শহরের অবৈধ মাতৃসেবা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন সিভিল সার্জন। কিন্তু এ নির্দেশ মানেননি প্রতিষ্ঠানের মালিক ডা. মোজাম্মেল হক। রোগীর অস্ত্রোপচার, চিকিৎসাসেবা প্রদান ও প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষাসহ সকল কার্যক্রম চলছে আগের মতোই। সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানিয়েছেন, বন্ধের নির্দেশ উপেক্ষা করলে মাতৃসেবা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। যশোর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, মাতৃসেবা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আগে নাম ছিলো নুরমহল ক্লিনিক।

বিগত দিনে নুরমহল ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুসহ নানা ধরণের অনিয়মের অভিযোগে আলোচিত হয়। নূরমহল ক্লিনিক স্থাপনের পর অনুমোদন পাওয়ার পর মালিক পক্ষ স্বাস্থ্য নীতিমালা উপেক্ষা করে আসছিলো। সেখানে রোগীর অস্ত্রোপচার, অজ্ঞান করা, নানা রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করতেন ডা.মোজাম্মেল হক। এমবিবিএস পাশ করা এই চিকিৎসক সেখানে রোগীদের আল্ট্রাসনো করতেন। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ডা. মোজাম্মেল হকের ভুল অস্ত্রোপচারে এক নারী মারা যান। এ ঘটনায় সিভিল সার্জনের নির্দেশে একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়। কমিটির প্রধান ছিলেন সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এমদাদুল হক রাজু।

তদন্ত কমিটি ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু ও সেখান নানা অনিয়মের সত্যতা পান বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন। ওই তদন্ত প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠিয়ে দেন যশোরের সিভিল সার্জন ডা. দিলীপ কুমার রায়। তদন্ত প্রতিবেদনে নূর মহল ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিল ও রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করা হয়। ২ নভেম্বর নূর মহলের লাইসেন্স বাতিলের পত্র আসে সিভিল সার্জন অফিসে। পরে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নূর মহলের লাইসেন্স বাতিলের কয়েকদিন পরেই সেখানে মাতৃসেবা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়া হয়। নামটা পরিবর্তন হলেও সেখানে সব কিছুই এক।

অভিযোগ উঠেছে, নূরমহলের লাইসেন্স বাতিল হওয়ার পর ডা. মোজাম্মেল হক কৌশলে নাম করণ করেছেন মাতৃসেবা ক্লিনিক। সবই এক শুধু বদলে গেছে সাইনবোর্ড। লাইসেন্স বিহীন মাতৃসেবা ক্লিনিকে মালিক ডা. মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে ডিগ্রি প্রতারণারও অভিযোগ রয়েছে। একই সাথে তিনি মেডিসিন সার্জারি গাইনী এবং মা ও শিশু রোগের চিকিৎসক পরিচয়ে রোগীদের সাথে প্রতারণা করছেন।এছাড়া রোগীর অস্ত্রোপচারের আগে অ্যানেস্থিসিয়ার দায়িত্ব পালন করেন তিনি। আবার রোগীর আলট্রাসনো করেন ডা. মোজ্জাম্মেল হক। এভাবে চিকিৎসা প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

ডা. মোজাম্মেল হক ভিজিডিং কার্ড ও প্রচারপত্রে উল্লেখ করা একটি ডিগ্রি নাম দেয়া হয়েছে ওআরএইচ এন্ড সিএসআই (গাইনী)। যশোর মেডিকেল কলেজের একজন গাইনী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জানান, তার জানা মতে ওআরএইচ এন্ড সিএসআই (গাইনী) নামে কোনো ডিগ্রি নেই। এ ধরণের নাম তিনি প্রথম শুনলেন। রোববার (৮ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা গেছে, ডা, মোজাম্মেল ছাড়া সেখানে আর কোনো চিকিৎসক নেই। ডিপ্লোমাধারী সেবিকাও নেই। ওয়ার্ড ও কেবিনের পরিবেশ নোংরা। কর্তপক্ষের অনুমতি না নিয়েই নিজেদের ইচ্ছায় মাতৃসেবা ক্লিনিক চালু করেছে ডা. মোজাম্মেল। এ বিষয়ে ডা. মোজাম্মেল হক জানান, সিভিল সার্জন মাতৃসেবা পরিদর্শনে আসার দিন আমি ঢাকায় ছিলাম। প্রতিষ্ঠানে এসে জানতে পারি সিভিল সার্জন পুরাতন কিছু কাগজপত্র পুড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু বন্ধ রাখার ব্যাপারে আামাকে কিছু জানানো হয়নি।

ডা. মোজাম্মেল হক আরো জানান, প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করেছি। সিভিল সার্জন পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য অধিদফতরে প্রতিবেদন পাঠিয়ে দিয়েছেন। তিনি আরো জানান, আমি নিজে একজন ডাক্তার নিজেই আমার প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করি। কি কারণে বন্ধের নির্দেশ দেবেন সিভিল সার্জন।যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, ১০ শয্যার প্রতিটি হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকে রোগী প্রতি ফ্লোর স্পেস থাকতে হবে নূন্যতম ৮০ বর্গফুট।

জরুরি বিভাগ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঝুঁকিমুক্ত অপারেশন থিয়েটার, চিকিৎসার জন্য যন্ত্রপাতি, ওষুধ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্যাথলজিক্যাল ল্যাবরেটরি থাকতে হবে। শর্তানুযায়ী ৩ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ডিপ্লোমাধারী ২ জন সেবিকা, ৩ জন সুইপার ও ৮শ’ বর্গফুট জায়গা থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু মাতৃসেবা ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার চলছিলো এসব স্বাস্থ্য নীতিমালা উপেক্ষা করে। গত মাসে মাতৃসেবা পরিদর্শনে গিয়ে এসব চিত্র চোখে পড়ে। এছাড়া বিভিন্ন অবৈধ কাগজপত্র আগুনে পোড়ানো হয়েছিলো।

ওইদিন কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো লাইসেন্স না পাওয়া পর্যন্ত মাতৃসেবা ক্লিনিকের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখার জন্য। যদি নির্দেশ না মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় তাহলে অবৈধ মাতৃসেবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সিভিল সার্জন আরো জানান, পরিদর্শন করে প্রতিবেদন স্বাস্থ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়েছে। লাইসেন্স দেবে কি দেবে না তা কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪