আগামী ১১ জুন থেকে জাতীয় সংসদে শুরু হচ্ছে বাজেট অধিবেশন।করোনা মহামারির কারণে অধিবেশন শুরুর দিনই অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করতে পারেন । এটি হবে স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৯তম বাজেট এবং বর্তমান সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট অর্থমন্ত্রণালয় বর্তমানে বাজেট উত্থাপনের প্রস্তুতির শেষপর্যায়ে রয়েছে।
করোনাভাইরাস সংকট পরবর্তী অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটের আকার হতে যাচ্ছে সাড়ে পাঁচ লাখ কোটি টাকা। আগামী বাজেটে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাত। এছাড়া করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে স্বস্তি দিতে আগামী অর্থবছরের জন্য কর ছাড়ের বিশাল বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে বলে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
১৯৭১ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৪৮টি বাজেটে প্রতিবছরই বাড়ছে আকার। আগামী অর্থবছরেও বাড়বে বাজেটের আকার। ২০২০-২১ অর্থবছরের সম্ভাব্য আকার হতে পারে ৫ লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের আকার ১০ থেকে ১২ শতাংশ বাড়লেও নাগরিকদের ওপর বাড়তি করের বোঝা চাপিয়ে না দেয়ার কৌশল নিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার অনুদান ও তাদের ঋণ সহযোগিতার প্রতিই এবার গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার অর্থ পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। বছর শেষে বিদেশি সহায়তা কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, বাজেটে ব্যবসাবান্ধব কর্মসূচি গুরুত্ব পাচ্ছে। জুন পর্যন্ত কিস্তি পরিশোধে অপারগ হলেও কোনো ব্যবসায়ীকে ঋণখেলাপি ঘোষণা করা হবে না। কমানো হবে করপোরেট কর। সব ধরনের পণ্য উৎপাদন ও আমদানিতে ভ্যাট কমানোর পদক্ষেপ থাকবে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এ ছাড় দেয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, গত ২৬ মার্চ থেকে সরকারের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। তবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীরা বাজেট প্রণয়নের কাজের কারণে ছুটি ভোগ করতে পারছেন না। পাশাপাশি প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিলে প্রাক-বাজেট আলোচনা চললেও এবার করোনাভাইরাসের কারণে তা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। সে ঘাটতি পূরণে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটকে অংশগ্রহণমূলক করতে অনলাইনে সব শ্রেণিপেশার মানুষের মতামত দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অর্থ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের লক্ষ্যে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে নিজ নিজ বাজেট কাঠামো তৈরির নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। রূপকল্প-২১-এর চূড়ান্ত বাস্তবায়ন এবং মুজিববর্ষ উদযাপনে এবারের বাজেট ঘোষণা ও তা বাস্তবায়নে থাকছে বিশেষ নজর।
সূত্র জানায়, নতুন বাজেটের আগে ঋণের বিপরীতে সিঙ্গল ডিজিট সুদহার কার্যকর করতে যাচ্ছে সরকার। এ ছাড়া রেমিট্যান্সের টাকা বিনিয়োগে নিয়ে আসতে আগামী বাজেটে ‘বিশেষ নীতি’ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে থাকছে বিশেষ নজর।
আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ ৩ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের উদ্যোগ রয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে চলতি বাজেটে একশ কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এ বরাদ্দ শিক্ষা, প্রযুক্তি, কারিগরি ও ভোকেশনাল প্রশিক্ষণে ব্যয় হচ্ছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া চলতি বাজেটে ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণার পর রেমিট্যান্স আহরণ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছর শেষে রেমিট্যান্স আহরণ ৫ বিলিয়ন ডলার বাড়বে বলে আশা করছে সরকার।
গত ডিসেম্বরের শুরুতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট অনুবিভাগ আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রণয়নসংক্রান্ত বৈঠক করে। বৈঠকে আগামী বাজেটের আকার কী রকম হবে, কোন কোন খাতে গুরুত্ব দেওয়া হবে, মন্ত্রণালয়গুলোর বাজেট কাঠামো কত দিনের মধ্যে পাঠাতে হবে, বিশেষ কোনো পলিসি গ্রহণ করা হবে কিনাÑ এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাজেট প্রণয়নের কাজ শুরু করা হয়েছে। টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনার সুযোগ পাওয়ায় বাজেটেও এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিবছর বাড়ছে বাজেটের আকার।
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের কাতারে পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এ জন্য বৈষম্য কমিয়ে আনতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্রামের মানুষকে জীবনের তাগিদে যাতে শহরে ছুটতে না হয়, সে জন্য চলতি বাজেটে গ্রামবান্ধব কর্মসূচিতে বিশেষ নজর দিচ্ছে সরকার। আগামী বাজেটেও ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ কর্মসূচি প্রাধান্য পাচ্ছে।
এ ছাড়া চরম দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সামাজিক নিরাপত্তার আওতা বাড়ানো হবে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্ব দেওয়া হবে। সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে দেশি-বিদেশি নতুন বিনিয়োগে। এ লক্ষ্যে ভ্যাট ও কর না বাড়িয়ে গ্রোথ সেন্টার বাড়িয়ে ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করা হচ্ছে। অবকাঠামো উন্নয়নে বাড়ানো হবে সরকারি বিনিয়োগ। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বেজা ঘোষিত ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল চালু হলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বেসরকারি খাতে।
এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে বাংলাদেশে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রভাব ও উত্তরণের পরিকল্পনা শীর্ষক একটি ধারণাপত্র তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি হবে। সে হিসাবে অর্থবছর শেষে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে ১ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে ধারণাপত্রে অবশ্য ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশ রাখা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।