ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার কৃষি কর্মকর্তারা নিজ দফতরে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। অফিসে আসলেও সকাল সাড়ে ১০টার পর উপস্থিত হন অনেকে। কয়েকঘণ্টা অফিসে কাটিয়ে আবার একটি অজুহত দেখিয়ে নিজের ইচ্ছেনুযায়ী বাড়িতে চলে যান।
কর্মকর্তারা নিয়মিত অফিসে না আসায় সেবাবঞ্চিত স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। করোনা অজুহাত এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরের বাইরে থাকায় এ উপজেলার কর্মকর্তারা নিজের ইচ্ছামতো অফিসে আসেন আর যান।
নলছিটি পৌরসভার ২নং ওয়াডের্র (মালিপুর গ্রাম) বাসিন্দা মো. জসিম গাজি ও মো. মানিক কাজি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে কৃষি সংক্রান্ত পরামর্শ নিতে গেলে অফিস স্টাফরা জানান, পৌরসভা ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমান রুবেল অফিসে নেই।
রোববার আসলে তাকে পাওয়া যাবে। এরপর কৃষি কর্মকর্তা ইসরাত জাহান মিলির কাছে যেতে চাইলে তার কক্ষ বন্ধ দেখতে পাই। পরে তার মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে কল দিলে তিনি অফিসে আসবেন না বলে জানান। পরে পিয়নের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছি।
ভুক্তভোগীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাংবাদিকরা একাধিকবার সরেজমিনে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পান। এছাড়াও কৃষি কর্মকর্তা ইসরাত জাহান মিলির বিরুদ্ধে সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। নিয়ম রয়েছে, সরকারি কাজ ছাড়া উপজেলার বাইরে গাড়ি নিয়ে যেতে হলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও যথাযথ কারণ থাকতে হবে।
অথচ তিনি প্রতিনিয়ত সরকারি গাড়ি বরিশাল নগরীতে নিয়ে যান। বাসা বরিশাল শহরে হওয়ায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে সরকারি গাড়িটি বেশিরভাগ সময় ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারে সুযোগ পেয়ে থাকেন তিনি। এতে জা¡লানি তেল বেশি যাচ্ছে। যা সরকারি কোষাগার থেকে মেটানো হচ্ছে। পাশাপাশি ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে কৃষি বিভাগের। এদিকে মাঠ পর্যায়ে কৃষিকাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা কয়েকজন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কৃষকের কোন সম্পর্ক নেই।
এদের মধ্যে পৌরসভা ব্লকে দায়িত্বপ্রাপ্ত লুৎফর রহমান রুবেলকে চেনেন না সংশ্লিষ্ট এলাকার অধিকাংশ কৃষক। কাজে ফাকি দিয়ে তিনি প্রায়ই তার পৈতৃক নিবাস পার্শ্ববর্তী উপজেলা বাকেরগঞ্জে অবস্থান করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অফিস ও মাঠ পর্যায়ে সরেজমিনে গিয়ে এমন অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে।
নিয়ম অনুসারে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদের সপ্তাহে ৫ দিন মাঠে গিয়ে সরেজমিন কৃষির অবস্থা পর্যবেক্ষণ, কৃষকের সমস্যায় করণীয় বিষয়ক পরামর্শ, কৃষি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদানসহ কৃষির সমস্যা ও সম্ভাবনার চিত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করার কথা।
এর পাশাপাশি সপ্তাহে একদিন অফিস আসার নির্দেশনাও রয়েছে তাদের। অভিযোগ রয়েছে, লুৎফর রহমানসহ কয়েকজন উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মাঠে না গিয়ে মাঝে-মধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে মনগড়া মাঠের তথ্য নিয়ে ঘরে বসেই কৃষির প্রতিবেদন তৈরি করেন।
যার ফলে কৃষির মাঠ পর্যায়ের বাস্তব অবস্থা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা। অভিযোগের ব্যাপারে উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা লুৎফর রহমান রুবেল বলেন, আমার কাজ মাঠে। অফিসে কোন হাজিরা খাতা নেই।
শুধুমাত্র সাপ্তাহিক কনফারেন্সের দিন স্বাক্ষর নেয়া হয়। বৃহস্পতিবারও আমি অফিস গিয়েছিলাম। কিন্তু অসুস্থতার কারণে একটু আগেভাগে চলে এসেছি।
নিয়মিত অফিস না করার ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইসরাত জাহান মিলি বলেন, ‘অভিযোগটি সত্য নয়। আমার সব সময়ই অফিসে থাকা হয়।’ তবে গত বৃহস্পতিবার অফিসে দায়িত্ব পালন করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওইদিন যাওয়া হয়নি।’ ছুটি নিয়েছিলেন কিনা জানতে চাইলে, তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
সরকারি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নলছিটিতে গাড়ি রাখায় ব্যবস্থা না থাকায় বরিশালে রাখতে হচ্ছে। তবে সরকারি গাড়ির কোন অব্যবহার হচ্ছে না।