স্টাফ রিপোর্টার-
“শেফালির গন্ধে ভোর হোক, ঢাকের আওয়াজে প্রাণ জাগুক”—এমন প্রত্যাশা নিয়েই আজ বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায় উদযাপন করছে শুভ মহালয়া। ভোরের আলো ফুটতেই চণ্ডীপাঠ আর তর্পণের মধ্য দিয়ে দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছে। যেন শরতের নীল আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে দেবী দুর্গার আহ্বান।
কেবল ধর্মীয় আচার নয়, মহালয়া এখন বাঙালির সংস্কৃতিরও একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
পুরাতন ঢাকার বাসিন্দা নীলা রানী দাস ভোরে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে তর্পণ শেষে তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করে বলেন, “ছোটবেলা থেকে মহালয়ার দিন ভোরে উঠে চণ্ডীপাঠ শুনে আমার মনে হয় দেবী সত্যিই মর্ত্যে আসছেন। এই অনুভূতিটানা আসলেই ভাষায় বোঝানো যায় না।”
ঢাকার রামকৃষ্ণ মঠে ভক্তদের ভিড়েও ছিল ভিন্ন মাত্রা। তরুণ স্বপন মজুমদার জানান, “আমরা সারাবছর অপেক্ষা করি এই দিনের জন্য। মহালয়া মানে শুধু পূজা নয়, পরিবার, উৎসব আর আনন্দের সূচনা।”
পুরাণ মতে, এই দিনেই দেবী দুর্গা মহিষাসুর বধের দায়িত্ব পান। আজকের দিনে তাই শক্তির জয়গান সর্বত্র। মহালয়ার সঙ্গে যুক্ত আছে পিতৃপুরুষদের স্মরণও। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, পিতৃপক্ষে প্রয়াত আত্মারা এদিন পৃথিবীতে আসেন, আর তর্পণের মধ্য দিয়ে তাদের আত্মার মঙ্গল কামনা করা হয়।
মহালয়াকে ঘিরে শুধু ঢাকাই নয়, সারাদেশেই পরিবারের সকলের সাথে উচ্ছ্বাস-আনন্দে দিনটি অতিবাহিত হয়। বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির, রমনা কালী মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল পর্যন্ত সর্বত্র চণ্ডীপাঠ, ঘট স্থাপন আর বিশেষ পূজায় ভরে উঠেছে পরিবেশ।
চট্টগ্রামের পূজার আয়োজক শঙ্খ ঘোষ বলেন, “মহালয়া আমাদের শক্তি আর ঐক্যের উৎসব। পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে ষষ্ঠীতে, তবে আজকের দিনটাই বাঙালির কাছে সবচেয়ে আবেগঘন।”
শেফালিঝরা প্রভাত, ঢাকের কাঠির ধ্বনি আর চণ্ডীপাঠের সুর মিলিয়ে তাই আজকের সকাল যেন বাঙালির জন্য শুধু ভক্তি নয়, বরং স্মৃতির, ঐতিহ্যের আর আগমনী আনন্দের দিন।