নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার সাভারে দেড় ডজন মামলার আসামি সেই মিঠুন সরকারের বিরুদ্ধে আবারো দোকানের এক সেলসম্যান যুবককে (২২) বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছে। একই অভিযোগে সাভার মডেল থানায় এর আগেও একাধিকবার মিঠুন সরকারের বিরুদ্ধে বলাৎকারের ঘটনায় মামলা দায়ের করেন অন্যান্য ভুক্তভোগীরা।
শুক্রবার দিবাগত (৪ নভেম্বর) রাতে সাভার মডেল থানার ডিউটি অফিসার তন্ময় সাহা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১১ টায় সাভার পৌরসভার বাড্ডা ভাটপাড়া এলাকায় মিঠুন সরকারের বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী ওই যুবক (২২) বৃহত্তর ময়মনসিংহের শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি থানার পশ্চিম কাংসা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি সাভার পৌরসভার বনপুকুর লিজেন্ড কলেজ সংলগ্ন একটি বাড়িতে ভাড়ায় থেকে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের একটি দোকানে সেলসম্যান হিসেবে চাকুরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন।
অভিযুক্ত মিঠুন সরকার সাভার পৌরসভার বাড্ডা ভাটপাড়া এলাকার প্রফুল্ল সরকারের ছেলে। এর আগে নৈতিক অবক্ষয়, নিজের স্ত্রীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অন্যের হাতে তুলে দিয়ে শারীরিক নির্যাতন, চাঁদাবাজি, বলাৎকারসহ হত্যা চেষ্টার অভিযোগে বেসরকারি একটি চ্যানেল তাকে বহিস্কার করে। তার বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানা সহ বিভিন্ন থানায় প্রায় দেড় ডজন মামলা ও অভিযোগ রয়েছে।
ভুক্তভোগী ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সাভার পৌরসভার ওয়াবদা রোডে মাহবুব হোটেলের সামনে শুক্রবার সন্ধ্যায় সেলসম্যান ওই যুবকের সাথে দেখা করেন অভিযুক্ত মিঠুন সরকার। পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে ওই যুবকের ব্যবহৃত ফোন নম্বর নেন তিনি।
এর কয়েক ঘণ্টা পর রাত ১১ টা ১৮ মিনিট থেকে মিঠুন সরকার সেলসম্যান ওই যুবককে একাধিকবার ফোন করে তার বাসায় যেতে বলেন। বাধ্য হয়ে ২০ মিনিট পর বাসায় গেলে সেখানে প্রথমে ওই যুবককে ফলমূল ও কোমল পানীয় জুস খেতে দেওয়া হয়। এর কিছুক্ষণ পর তার ব্যক্তিগত বেডরুমে নিয়ে গিয়ে পরনের শার্ট ও প্যান্ট খুলে পুরুষাঙ্গ ধরে হাতাহাতি শুরু করেন মিঠুন সরকার।
এর কিছুক্ষণ পর তাকে বলাৎকারের চেষ্টা করেন। এতে রাজি না হওয়ায় মিঠুন সরকার নিজের পরিহিত প্যান্ট খুলে তার পেছনে ওই যুবকের পুরুষাঙ্গ ঢুকানোর চেষ্টা করেন। এতেও রাজি না হলে কিল ঘুষি চড় থাপ্পড় মারতে শুরু করেন অভিযুক্ত মিঠুন সরকার। পরে আবারো তাকে বলাৎকারের চেষ্টা করলে বাধা দেয় ওই যুবক। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে লোহার রড দিয়ে বেধরক পেটানো শুরু করেন মিঠুন সরকার। জোরাজোরির এক পর্যায়ে ওই যুবক অন্য একটি রুমে গিয়ে তার পরিচিত বড় ভাই মামুনকে কল করে তাকে সেখানে আসতে বলেন। বিপদের কথা শুনে যুবকের বড় ভাই মামুন অভিযুক্ত মিঠুনের বাসায় তাকে উদ্ধার করতে গেলে তাকেও লাঞ্ছিত করেন মিঠুন সরকার। এর প্রতিবাদ করলে তাকেও রোড দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়। ফাঁকা বাড়িতে মিঠুন সরকার তাদের আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে মামলার হুমকি দেন।
কোনমতে সেখান থেকে পালিয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয় বলাৎকারের শিকার ওই যুবকসহ তার পরিচিত বড় ভাই মামুন। দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শুক্রবার দিবাগত গভীর রাতে দুইজন চিকিৎসা নিতে এসেছেন। তাদের মধ্যে ২২ বছরের এক যুবককে দেখে বলাৎকারের আলামত পাওয়া গেছে। এছাড়াও তার শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অন্যদিকে মামুন নামে আরেক রোগীর মাথায় রডের আঘাত ও শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। একজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত মিঠুন সরকারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার ডিউটি অফিসার তন্ময় সাহা বলেন, এক যুবককে বলাৎকারের বিষয়ে মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে তাকে চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বা বু ম/ সুমন রায়