আন্তর্জাতিক ডেস্ক
নেপাল থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য শিগগিরই ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। মূলত ভারতীয় ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে নেপাল থেকে এই বিদ্যুৎ আনার বিষয়ে ইতোমধ্যেই নীতিগতভাবে সমঝোতা হয়েছে।
চুক্তি সম্পন্ন হলে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে ট্রানজিট করে বাংলাদেশে ঢুকবে। বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতীয় ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নীতিগতভাবে সমঝোতা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটির (এনইএ) কর্মকর্তারা। এছাড়া এই বিষয়ে শিগগিরই তিনটি দেশের মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
এনইএ-এর মুখপাত্র সুরেশ ভট্টরাই জানিয়েছেন, নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করার জন্য তিনটি দেশের মধ্যে ইতোমধ্যেই মৌখিক বোঝাপড়া সম্পন্ন হয়েছে। তিনি বলেন, প্রথম ধাপে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ রপ্তানির বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে।
ভট্টরাইয়ের মতে, খুব শিগগিরই এই বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি হবে।
নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ শুরুতে নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট (মেগাভোল্ট) বিদ্যুৎ কিনতে প্রস্তুত রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নেপাল থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি কয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্বাক্ষরিত হবে।
এনইএ-এর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রবাল অধিকারী বলেছেন, নেপাল এবং বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই পাওয়ার পারচেজ ডকুমেন্টে সম্মত হয়েছে। কিন্তু উভয় দেশের মধ্যে শুল্ক এবং বাণিজ্য মার্জিন এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, যদিও এই তিনটি দেশের (বাংলাদেশ, ভারত ও নেপাল) মধ্যে আনুষ্ঠানিক চুক্তি এখনও স্বাক্ষরিত হয়নি, তারপরও পিপিএ এবং অন্যান্য শর্তাবলীর বিষয়ে ইমেইলের মাধ্যমে সম্মত হয়েছে তিন দেশ।
ভট্টরাইয়ের মতে, ভারত তার সঞ্চালন লাইন ব্যবহার করে নেপাল থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে ইতিবাচক অবস্থানে রয়েছে। মূলত ভারতের সম্মতি ছাড়া এভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।
কর্মকর্তারা বলছেন, নেপাল থেকে ভারত হয়ে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের সরবরাহ হয়তো পরিমাণের দিক দিয়ে খুব বেশি নয়, তবে এটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এর প্রতীকী গুরুত্ব রয়েছে।
ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট গণেশ কারকি বলছেন, তৃতীয় কোনও দেশে নেপালের বিদ্যুৎ রপ্তানি করার সম্ভাব্য এই চুক্তিটি তাৎপর্যপূর্ণ।
বেশ কয়েকটি সূত্রের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস বলছে, চুক্তি সংক্রান্ত ঝুলে থাকা কিছু বিষয় শিগগিরই চূড়ান্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া দীর্ঘমেয়াদে নেপাল থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার পরিকল্পনাও করছে বাংলাদেশ।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসে নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে জ্বালানি সহযোগিতা সংক্রান্ত সচিব-পর্যায়ের জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির পঞ্চম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকেই উভয় পক্ষ ভারতকে সঙ্গে রেখে বিদ্যুৎ বাণিজ্য শুরু করতে সম্মত হয়।
মূলত ভারতীয় ট্রান্সমিশন লাইন ব্যবহার করে নেপালের বিদ্যুৎ বাণিজ্যের অনুমতির জন্য গত কয়েক বছর ধরে নয়াদিল্লিকে চাপ দিয়ে আসছিল ঢাকা ও কাঠমান্ডু। এমনকি গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লি সফরের সময় ভারতীয় ভূখণ্ড ব্যবহার করে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি উপস্থাপন করেছিলেন।
এছাড়া গত মে মাসের মাঝের দিকে নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নারায়ণ প্রকাশ সৌদের ঢাকা সফরের সময়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। ওই সময় তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন কোম্পানিকে নেপালের জলবিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছিলেন।
বা বু ম / অ জি