1. boyd94289@gmail.com : Ayon Islam : Ayon Islam
  2. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  3. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  4. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
  5. bangladeshbulleting646@gmail.com : Sohel Desk : Sohel Desk
শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:০৮ অপরাহ্ন

সেই আঁখি ও তার নবজাতকের দাফন সম্পন্ন, জানাজায় মানুষের ঢল

  • সময় : সোমবার, ১৯ জুন, ২০২৩
  • ২৩২

কুমিল্লা সংবাদদাতা

রাজধানীর সেন্ট্রাল হসপিটালে ভুল চিকিৎসা ও কর্তৃপক্ষের প্রতারণায় মারা যাওয়া মাহবুবা রহমান আঁখি ও তার নবজাতকের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (১৯ জুন) রাত পৌনে ১০টার দিকে আঁখির বাবার বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার লাকসাম পূর্ব ইউনিয়নের গাইনের ডহরা গ্রামের মাদ্রাসা মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে আঁখি ও তার নবজাতকের মরদেহ দাফন করা হয়। 

জানাজায় অংশ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে হাজারো মানুষ। জানাজায় স্থানীয় সমাজকর্মী, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজ এবং বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এর আগে সন্ধ্যায় ময়নাতদন্ত শেষে আঁখি এবং তার নবজাতকের মরদেহ নিয়ে ঢাকা থেকে কুমিল্লার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তার স্বজনরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে আঁখির বাবার বাড়ি লাকসামের গাইনের ডেয়রা গ্রামে পৌঁছান তারা। দাফনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি শেষে স্থানীয় মাদ্রাসা মঠে জানাজা পড়ানো হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় তাদের। 

আঁখির ভাই শামীম বলেন, যারা আমার বোন- ভাগনির সঙ্গে এমনটা করেছে তাদের বিচার চাই। স্বজন হারানোর বেদনা কত সেটা তারা উপলব্ধি করুক। আর কোনো মানুষকে এভাবে যেন প্রাণ হারাতে না হয়। আমরা সেটাই চাই।

প্রসঙ্গত, মাহাবুবা রহমান আঁখি গর্ভধারণের পর থেকেই রাজধানীর সেন্ট্রাল হসপিটালের অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার (গাইনি) কাছে নিয়মিত চিকিৎসা নিতেন। এ অবস্থায় গত ৯ জুন তার প্রসব বেদনা শুরু হয়। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে ডা. সংযুক্তা সাহার সহকারী মো. জমিরের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে জানতে চাওয়া হয় তিনি (সংযুক্তা সাহা) হসপিটালে আছেন কিনা। জমির আঁখির স্বামী ইয়াকুব আলী সুমনকে জানান ডা. সংযুক্তা সাহা হসপিটালে আছেন এবং তাদের দ্রুত আসতে বলেন। পরে ইয়াকুব আলী তার স্ত্রীকে বাসা থেকে নিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে সেন্ট্রাল হসপিটালে ডা. সংযুক্তা সাহার চেম্বারের সামনে পৌঁছান।

সেসময় হসপিটালের চিকিৎসক ডা. মুনা সাহা ইয়াকুবকে জানান, ডা. সংযুক্তা সাহা লেবার ওয়ার্ডে আছেন। এই কথা বলে ডা. মুনা সাহা মাহাবুবা রহমানকে লেবার ওয়ার্ডে নিয়ে যান। সেসময় তাদের পেছনে পেছনে আঁখির স্বামীও লেবার ওয়ার্ডের সামনে যান। এর কিছুক্ষণ পর একজন নার্স লেবার ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে ইয়াকুব আলীকে জানান, তার স্ত্রীকে হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে। নার্সের এমন কথা শুনে ইয়াকুব আলী ডা. সংযুক্তা সাহার অধীনে ভর্তি বাবদ ক্যাশ কাউন্টারে ১০ হাজার টাকা জমা দিয়ে মানি রিসিট লেবার ওয়ার্ডের নার্সের কাছে জমা দেন।

এর কিছুক্ষণ পর ডা. শাহজাদী গাইনি ওয়ার্ডে এলে তার কাছে ইয়াকুব আলী নিজের স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চান। কিন্তু ইয়াকুবের কথার কোনো উত্তর না দিয়ে তাকে গেটের বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন ডা. শাহজাদী।

এরপর রাত ১টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ইয়াকুব স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার কোনো খবর না পেয়ে একপর্যায়ে জোরপূর্বক লেবার ওয়ার্ডে প্রবেশ করেন। তিনি ভেতরে প্রবেশ করে দেখেন কয়েকজন নার্স মিলে তার স্ত্রীকে দ্রুত গতিতে হাঁটাচলা করাচ্ছেন। এ সময় ইয়াকুব নার্সদের জিজ্ঞেস করেন ডা. সংযুক্তা সাহা কোথায়। কিন্তু নার্সরা ইয়াকুবের কথার উত্তর না দিয়ে তাকে লেবার ওয়ার্ডের বাইরে অপেক্ষা করতে বলেন।

এরপর রাত ২টা ৩০ মিনিটের দিকে ডা. শাহজাদী আঁখিকে লেবার ওয়ার্ড থেকে বের করে অপারেশন থিয়েটারে (ওটিতে) নিয়ে যান। এ সময় ডা. এহসান নামে আরও একজন চিকিৎসক ওটিতে প্রবেশ করেন। ওটিতে সিজারিয়ান অপারেশন শেষে ডা. শাহজাদী ইয়াকুব ও আঁখি দম্পতির নবজাতক শিশুকে (ছেলে) জীবিত অবস্থায় এনআইসিইউতে নিয়ে যান। পরে রাত সাড়ে ৪টার দিকে একজন নার্স ওটি থেকে বের হয়ে ইয়াকুব আলীকে জানান, তার স্ত্রীর শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক তাই কিছু কাগজে তাকে সই দিতে হবে। কাগজে কেন সই দিতে হবে জানতে চাইলে নার্স ইয়াকুব আলীকে জানান, তার স্ত্রীকে বাঁচাতে হলে এই কাগজে সই করতে হবে। অন্যথায় স্ত্রী আঁখি ও তার নবজাতকের চিকিৎসা তারা করবেন না। এই কথা শুনে নিরুপায় হয়ে স্ত্রী ও সন্তানের জীবন বাঁচাতে সেই কাগজে সই করেন ইয়াকুব আলী।

অধ্যাপক ডা. সংযুক্তা সাহার অনুপস্থিতিতে ওই রাতে আঁখির সিজারিয়ান অপারেশন কোন চিকিৎসক করেছেন তা ইয়াকুব আলীকে জানানো হয়নি। এর মধ্যে ভোর ৪টা ৫০ মিনিটের দিকে আঁখির শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। এ ঘটনায় ইয়াকুব আলী বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে সেন্ট্রাল হসপিটালের ডেপুটি ডিরেক্টর মাসুদ পারভেজকে মৌখিকভাবে জানান। 

এরপর ইয়াকুব তার স্ত্রী ও নবজাতকের শারীরিক অবস্থার কথা জানতে চাইলে এ বিষয়ে সেন্ট্রাল হসপিটাল কর্তৃপক্ষ তাকে কোনো তথ্য না দিয়ে আঁখিকে অন্য হসপিটালে চিকিৎসা করানোর জন্য বলেন। ইয়াকুব সেন্ট্রাল হসপিটালের কোনো সহযোগিতা না পেয়ে পরে তার স্ত্রীকে ল্যাবএইড হসপিটালে ভর্তি করান। পরদিন অর্থাৎ ১০ জুন সেন্ট্রাল হসপিটালের কর্তৃপক্ষ ইয়াকুবকে জানায়, তার সন্তান বিকেল ৪টার দিকে এনআইসিইউতে মারা গেছে।

এ ঘটনায় বুধবার ধানমন্ডি থানায় ‘অবহেলাজনিত মৃত্যু’র একটি মামলা দায়ের করেন ইয়াকুব আলী। মামলায় ডা. শাহজাদী মুস্তার্শিদা সুলতানা, ডা. মুনা সাহা, ডা. মিলি, সহকারী জমির, এহসান ও হাসপাতালের ম্যানেজার পারভেজকে আসামি করা হয়। এছাড়াও অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে। মামলা দায়েরের পর ১৫ জুন রাতে ডা. শাহজাদী ও ডা. মুনা সাহাকে হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এদিকে গতকাল রোববার (১৮ জুন) দুপুর ১টা ৪৩ মিনিটে ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মাহবুবা রহমান আঁখিরও মৃত্যু হয়। 

বা বু ম / অ জি

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪