1. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  2. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  3. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৫:০১ অপরাহ্ন

৮০ বছর বয়সে ভিক্ষা করে সংসার চালান আবিদন

  • সময় : শুক্রবার, ২৭ আগস্ট, ২০২১
  • ১২৯


এম.শাহীন আল আমীন,জামালপুর:


ভাদ্রের বিকেল। সূর্য্য হেলে পড়েছে পশ্চিম দিকে। সূর্য্য হেলে পরার সাথে সাথে কমতে শুরু করেছে গরম, প্রথম ভাদ্রের দাবদাহ। চারদিকে শূনশান; নীরব নিস্তব্ধ। এমন সময় রেল লাইনে বসে আসেন আবিদন। কথা বলছেন না। গালে হাত দিয়ে পশ্চিমের ফাঁকা বিলের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন তিনি। মনে মনে কি যেন ভাবছেন; বুঝা দায়। তার ফাঁকে ফাঁকে ডান হাতে পায়ে বসে রক্ত খাওয়া মশাও মারছেন সে। অগোছালো চোখের দৃষ্টি । তাতে এক সমুদ্রের বেদনার ছাঁপ। সেই সাথে অস্ফুট অশ্রুও। পেছনে ফ্যালফ্যালা টিনের ছোট্র ঝুপড়ি ঘর। চেগার না থাকায় এবং দরজা খোলা থাকায় বাইরে থেকে ভেতরের অনেকটাই চোখে পড়ে। ওই ঝুপড়ি ঘরটাতেই বাস করেন আবিদন বুঝা যায়।

গতকাল বিকেলে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ রেল স্টেশনের উত্তর পাশের পরিত্যক্ত রেল লাইনের দেখা চিত্র এটি। আবিদনের বয়স ৮০ বছরের পেরিয়ে গেছে। বয়সের ভারে নূইয়ে পড়েছেন সে। ভাঙা ভাঙা কথা বলেন। মুখের সব দাঁত পড়ে গেছে। তাই অনেক কথাই বুঝা যায়না তার। আবিদন সংসারে এখন বড় অসহায়। একাকিত্ব আর অভাব অনটনে জীবনের সব স্বপ্ন একে একে ঝরে পড়েছে। স্বামী আজিজল হক; মারা গেছেন ২০ বছর আগে। আবিদন তিন ছেলে এক মেয়ের জননী। তিন ছেলে মো. দুদু মিয়া, মো. টুনু মিয়া ও মো. খুদু মিয়া তার কাছে নেই। বিয়ে করে আবিদনকে ফেলে যে যার মতো সংসার পেতেছে অন্যত্র। অশিতিপর বৃদ্ধা মায়ের খবর নেয়না ভুলেও। এক মেয়ে আহালী বেগম। বয়স ৪৫ বছর। বিয়ে হয়েছিলো। আকরাম নামের ১০ বছরের একটি ছেলেও রয়েছে তার। আহালী মানসিক প্রতিবন্ধী। সে কারণে স্বামীর সংসারে ঠাঁয় হয়নি তার। স্বামীর মৃত পর ছাড়তে হয়েছে স্বামীর বাড়ী। বৃদ্ধা আবিদনের ওই ঝুপড়ি ঘরেই  থাকেন আহালী ও তার ছেলে আকরাম। আহালী কোনো কাজ কর্ম করেনা। মানসিক প্রতিবন্ধী; সারা দিন টইটই করে করে বেড়ায়। আবিদনের বড় দুঃখের কপাল। ৮০ বছর বয়সেও ভিক্ষে করে সংসারের বোঝা টানতে হচ্ছে। তাই হাঁপিয়ে ওঠেছেন তিনি ।

আবিদনের বাড়ী ছিলো ডাকাতিয়া পাড়ায়। বসত ভিটা আবাদী জমি সবই ছিলো। ছিলো সুখের সংসার। যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় সব কিছু। বিলীন হয়ে যায় সব স্বপ্ন। শুধু আবিদন নন। তার মতো দুই শতাধিক পরিবার যমুনার ভাঙনে সব হারিয়ে আশ্রয় নিয়ে দেওয়ানগঞ্জ রেল স্টেশনের উত্তর পাশ থেকে বাহাদুরাবাদ ঘাট অব্দি পরিত্যাক্ত রেল লাইনের ওপর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০০৮,২০০৯,২০১০ সালে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বীরহলকা, চাকুরীয়া, কেল্লাকাটা, ডাকাতিয়া গ্রামগুলো যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। গ্রামগুলোর দুই শতাধিক পরিবার ওই পরিত্যক্ত রেল লাইনের ওপর কোনো  রকম ভাবে গাদাগাদি করে বসতি শুরু করে। যাদের অন্যত্র জমি কিনে বসতি করার সাধ্য রয়েছে তারা ইতিমধ্যে চলে গেছে অন্যত্র। দুই শতাধিক পরিবার এখনো রয়ে গেছে লাইনের ওপর। 
বিগত ২০১৪ ইং সাল থেকে দেওয়ানগঞ্জ রেল স্টেশন থেকে বাহাদুরাবাদ ফেরী ঘাটে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পতিত এই রেল লাইনই এখন যমুনার ভাঙ্গনের শিকার দুই শতাধিক পরিবারের বসবাসের স্থান। এক সময় যাদের বিস্তির্ণ বসতভিটা, আবাদি জমি ছিল, আজ তারা নিঃস্ব। জীবন জীবিকার তাগিদে আশ্রয় নিয়েছে রেল লাইনের ধারে। পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছে দিনমজুরী, মাছ ধরা, রাজ মিস্ত্রিসহ অন্যান্য। এদের মধ্যে কিছু বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও প্রতিবন্ধী রয়েছে। তাদের চিত্র আরও বেশি হৃদয় বিদারক ও ভয়াবহ। 
রেল লাইনে আশ্রিত বিধবা জামিরন (৬৫), বিধবা সখিনা (৭০), বিধবা হাজেরা (৬৬) বলেন, এক সময় আমাদের বসতবাড়ি, আবাদি জমি সবই ছিলো। সর্বনাশা যমুনা আমাদের সব কেড়ে নিয়ে সর্বশান্ত করেছে। আজ আমরা পথের ভিখারি। এই লাইনের ওপর গাদাগাদি করে জীবন যাপন করছি। আমাদের জীবন তো এভাবেই চলে যাচ্ছে। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের কি দশা হবে কে জানে ? জানিনা আল্লাহ আমগরে কপালে কি লিখে রাখছে।

রেল লাইনে বসবাসকারী বিধবা আছফুল বেগম বলেন, বন্যার সময় আমরা সরকারের সাহায্য পাই। কিন্তু তাতে কি আমাদের সংসার চলে? নিজেদের চাহিদা নিজেদেরই পূরণ করতে হয়। অর্থাভাবে ছেলেমেয়েগুলোকে লেখাপড়া করাতে পাচ্ছি না। রেল চলাচল বন্ধ হয়েছে বলে কোন রকম মাথা গোঁজার ঠাঁয় নিয়েছি। যখন এই লাইনে আবার ট্রেন চলাচল শুরু করবে তখন আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব। 

রেল লাইনে বসবাসকারী অনেকের বসতভিটা, আবাদি জমি জেগে উঠেছে। এ বছর চর জেগে উঠে দু’এক বছর পর আবার নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এই ভাঙ্গা গড়ার খেলায় তাদের জীবন যেন বিপন্ন থেকে আরো বিপর্যস্ত। দুই শতাধিক পরিবারের মধ্যে কয়েকজন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পেয়েছেন। কিন্তু তারা গ্রামের মানুষের মায়া ছিন্ন করে সেই উপহার পাওয়া ঘরে না ওঠে রেল লাইনেই রয়েছেন। বাকী পরিবারগুলোর ভাগ্যে জোটেনি প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর। 

এ ব্যাপারে চুকাইবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম খান বলেন, রেল লাইনসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন উঁচু বাধের উপর কয়েকশত পরিবার বসবাস করছে। তাদের সংখ্যা ৫৬০ জন। তাদের দুর্দশার চিত্র ডিসি মহোদয়, সচিব মহোদয়দের দেখানো হয়েছে। তাতে কোন কাজ হয়নি। তাদের দুর্দশা লাঘবে আমার ইউনিয়নের পক্ষ থেকে যথা সাধ্য সহায়তা করে যাচ্ছি। তাতেই তো তাদের দুর্দশা লাঘব হলো না। তাদের পূনর্বাসনে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একে এম আব্দুল্লাহ-বিন-রশিদ বলেন, চুকাইবাড়ি ইউনিয়নে বড় ধরণের আশ্রয়ণ প্রকল্প করার মতো খাস জমি নেই। অন্যান্য ইউনিয়নে খাস জমি রয়েছে। কিন্তু তারা অন্য ইউনিয়নে যেতে চান না। তার পরেও বিষয়টি আমাদের মাথায় রয়েছে। তাদের পুনর্বাসন কার্যক্রমের ব্যবস্থা করা হবে। 

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪