যশোরে একজন চিকিৎসক একজন পুলিশ ও একজন র্যাব সদস্য ও তিনজন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ ৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনিবার সকালে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টার থেকে পাঠানো ৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে তাদের শরীরে করোনার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শনাক্ত ৩৫ জনের মধ্যে ৩০ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন। বাকি ৫ জন পুরাতন রোগী। তারা ফলোআপ পরীক্ষার ফলাফলেও পজেটিভ শনাক্ত হয়।
আক্রান্তদের মধ্যে যশোর সদর উপজেলার ১১ জন, অভয়নগর উপজেলার ১৫ জন ও কেশবপুর উপজেলার ৪ জন রয়েছেন। অভয়নগরে শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে ১ জন গত ১৫ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার নাম আনিসুর রহমান আনিস (৬৫)। তিনি নওয়াপাড়া পৌর এলাকার বাসিন্দা। গিয়েছেন বলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার আদনান ইমতিয়াজ জানিয়েছেন, যশোর সদরে আক্রান্ত ১১ জনের মধ্যে যশোর শহরের ঘোপে ১ জন, কাজীপাড়া ২ জন, মিশনপাড়ায় ১জন, খড়কি এলাকায় ১ জন, হাজি আব্দুল করিম রোড এলাকায় ১ জন, বেজপাড়ায় ১ জন, রকচর র্যাব অফিসে ১ জন, আরবপুরে ২ জন ও সদর উপজেলার ফতেপুর দায়তলা এলাকায় ১ জন। এদের মধ্যে ১ জন ডেন্টাল সার্জন, ১ জন র্যাব সদস্য ও ৩ জন ব্যাংক কর্মকর্তা রয়েছেন। আরবপুরে আক্রান্ত ২ জন হলেন স্বামী স্ত্রী। তাদের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। সকলেই হোমআইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
অভয়নগর উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মাহমুদুর রহমান রিজভী জানান, নতুন করে আক্রান্ত ১৫ জনের মধ্যে উপজেলার বুইকারা গ্রামে ৯ জন, নওয়াপাড়ায় ২ জন, গোয়াখোলায় ১ জন ও শংকরপাশা গ্রামে ৩ জন রয়েছেন। সবাই হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাড়ি লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন। তিনি আরো জানান, এরমধ্যে নওয়াপাড়ার বাসিন্দা আনিসুর রহমান করোনার উপসর্গ নিয়ে গত ১৫ জুন বিকেলে ভর্তি হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় কিছু সময় পর তিনি মারা যান। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছিলো। তার ফলাফল করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। কেশবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, নতুন করে শনাক্ত ৪ জনের মধ্যে আক্রান্ত পুলিশ সদস্য কেশবপুর থানার স্টাফ কোয়ার্টারে বসবাস করেন । অপর ৩ জন একই পরিবারের সদস্য। তাদের বাড়ি উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে।
যশোর সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানিয়েছেন, যে ৫ জন পুরাতন রোগীর ফলাফল ফলোআপ পজেটিভ এসেছে তার মধ্যে সদর উপজেলায় ১ জন, কেশবপুরে ১ জন ও অভয়নগর উপজেলায় ১ জন রয়েছেন।
যবিপ্রবির এনএফটি বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য ড. শিরিন নিগার জানিয়েছেন, জিনোম সেন্টারে যশোরের ৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৩৫ জন ছাড়াও , নড়াইলের ৬৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫ জন, মাগুরার ২২ নমুনা পরীক্ষায় ৬ জন, ঝিনাইদহের ২৫ নমুনা পরীক্ষায় ১ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। এছাড়া সাতক্ষীরা জেলার ২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ শনাক্ত হয়েছে।
অর্থাৎ ৫ জেলার ২১১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪৭ জনের করোনা পজিটিভ ও ১৬৮ জনের নেগেটিভ ফলাফল এসেছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, যশোরে ১ দিনে সর্বোচ্চ ৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ার রেকর্ড তৈরি হয়েছে। এরআগে গত ১৮ জুন ২৭ জন শনাক্তের রেকর্ড হয়। শনিবার পর্যন্ত যশোর জেলায় মোট ৩১৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ১২৭ জন। এছাড়া ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত ২ জনের বাড়ি অভয়নগর উপজেলায়।