যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দিগ্ধ জিয়াউর রহমান (৩৭) নামে আরও ১ রোগীর মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এরআগে বৃহস্পতিবার করোনা উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন সাধু বিশ্বাস (৩০) ও আরশাফ আলী (৫৭) নামে ২ জন মারা গিয়েছিলেন।
এদিকে শুক্রবার যশোরে ১জন পুলিশের এসআইসহ নতুন করে ৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এতে করে যশোর জেলায় মোট ২৮৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হলো। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, শার্শা উপজেলার উপজেলার বেনিপুড়ি গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে জিয়াউর রহমান বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে হাসপাতালে ভর্তি হন।
ভর্তির সময় তার স্বজনরা চিকিৎসককে তথ্য দেন তিনি সিভিডিতে আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে ভর্তি করে চিকিৎসার জন্য মেডিসিন ওয়ার্ডে পাঠান। শুক্রবার মেডিসিন ওয়ার্ডের চিকিৎসক সুধীর রাউন্ডে গিয়ে দেখতে পায় ওই রোগীর প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট ও শরীরে জ্বর রয়েছে। রোগী করোনায় আক্রান্ত হতে পারেন সন্দেহ হলে দুপুরে জিয়াউর রহমানকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেফার্ড করেন।
সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেল ৪ টার দিকে মারা যান। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফন করার জন্য স্বজনদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যশোর সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানিয়েছেন, শুক্রবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টার থেকে ১৪ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাঠানো হয়। এতে ১ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়।
এছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (খুমেক) ল্যাব থেকে পাঠানো ১২ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ৩ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব মেলে। মোট আক্রান্ত ৪ জনের মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ২ জন, অভয়নগর উপজেলায় ১ জন ও শার্শা উপজেলায় ১ জন রয়েছেন। এরমধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তি হলেন পুলিশের এসআই পদে মোংলায় কর্মরত। তিনি ছুটিতে নিজ বাড়িতে এসেছেন। তাকে ফলাফল জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি হোমআইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ডা. রেহেনেওয়াজ জানিয়েছেন, করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে শুক্রবার আরো ৪৯ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য যবিপ্রবির জিনোম সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য উপজেলার মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রন) ডা. এ এন এম নাসিম ফেরদৌস জানান, সদরে আক্রান্ত ২ জনের মধ্যে ১ জনের বাড়ি শহরের নাজির শংকরপুর এলাকায়। তিনি খুলনায় প্রাণ কোম্পানিতে বিক্রয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৪ তারিখে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠানো হলে ফলাফলে তার করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়।
হাসপাতাল থেকে তাকে যশোর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। তার বাড়ি লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন। ডা. এ এন এম নাসিম ফেরদৌস আরো জানান, অপরজনের মুঠোফোনের নম্বর বন্ধ থাকায় তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। অভয়নগর উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মাহমুদুর রহমান রিজভী জানান, নতুন করে আক্রান্ত যুবকের বাড়ি (৪০) উপজেলার রাজঘাট গ্রামে। তিনি হোমআইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তার বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। যবিপ্রবির অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পরীক্ষণ দলের সদস্য ড. তানভীর ইসলাম জানিয়েছেন, জিনোম সেন্টারে যশোরের ১৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ জন ছাড়াও , নড়াইলের ৩১ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২ জন, মাগুরার ১৭ নমুনা পরীক্ষায় ২ জন, বাগেরহাটের ২৪ নমুনা পরীক্ষায় ২ জন ও সাতক্ষীরা জেলার ১০৩ জনের নমুৃনা পরীক্ষা করে ১০ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। অর্থাৎ ৫ জেলার ১৮৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৭ জনের করোনা পজিটিভ ও ১৭২ জনের নেগেটিভ ফলাফল এসেছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, শুক্রবার হাসপাতালের আইসোলেশ ওয়ার্ডে আরও ১জন রোগী মারা গেছেন বলে শুনেছি। তার নমুনা সংগ্রহ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সিভিল সার্জন আরো জানান, শুক্রবার পর্যন্ত যশোর জেলায় মোট ২৮৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হলেন। সুস্থ হয়েছেন ১২০ জন। এছাড়া মারা গেছেন ১ জন।