বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি:
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গে আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। করোনা রেডজোন ও ইয়োলোজোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা মারা যান। এই নিয়ে গত ৭ দিনে হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গে হাসপাতালে মোট ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, চিকিৎসাসেবায় অবহেলার কারণে হাসপাতালে করোনা ও উপসর্গ রোগীদের মৃত্যু বাড়ছে। তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, চিকিৎসক সেবিকারা আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। এদিকে বুধবার নতুন করে ৩৬১ জন শনাক্তের মধ্য দিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগী ১৪ হাজার ছাড়িয়েছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, গত ২৪ ঘন্টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৬ জন। তারা হলেন,যশোর শহরের বেজপাড়া এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে আশরাফ হোসেন(৫৭) সদর উপজেলার উপশহর এলাকার হাজের আলীর ছেলে শরিফ উদ্দিন (৭২), চুড়ামনকাটি গ্রামের মকছেদ আলীর ছেলে আবু বক্কার সিদ্দিক (৭৩), বসুন্দিয়া গ্রামের আব্দুল আজিজের ছেলে বাবুল হোসেন (৫০) ও ঝিকরগাছা উপজেলার সাখাওয়াতুল্লাহর ছেলে আনারুল ইসলাম (৭৫)। করোনা উপসর্গে মারা যান ৮ জন। তারা হলেন, যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের দৌগাছিয়া গ্রামের হাজি আকবর আলীর ছেলে ওয়াহেদুজ্জামান (৪৮), উপশহর এলাকার মনোয়ার হোসেনের স্ত্রী নুরুন নাহার (৪০) রাজনগর গ্রামের আমজাদ হোসেনের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (৫৭), ফুলবাড়ি গ্রামের বাবর আলীর স্ত্রী রাবেয়া বেগম (৮০), ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের মামুনুর রশিদের স্ত্রী আয়েশা বেগম (৫০), আব্দুল মুজিদের স্ত্রী ফাহিমা বেগম (৫০) ও ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের রবিন দাসের স্ত্রী শান্তিবালা (৬০)। এরআগে গত ৬ জুলাই ১২ জন, ৫ জুলাই ১৬ জন, ৪ জুলাই ১৭ জন, ৩ জুলাই ১০ জন , ২ জুলাই ৯ জন ও ১ জুলাই ৯ জন মারা যান বলে রেডজোন ও ইয়োলোজোনের মৃত্যু রেজিস্ট্রার খাতায় উল্লেখ রয়েছে। চুড়ামনকাটি গ্রামের মৃত আবু বক্কার সিদ্দিকের ছেলে মানিক অভিযোগ করেছেন, তার পিতাকে ৪ জুলাই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শ্বাস কষ্টসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা সেবিকাদের বলার পরও কর্ণপাত করেননি। চিকিৎসক ঠিকমতো রোগীর কাছে যাননি। চিকিৎসা অবহেলার কারণে তার পিতার মৃত্যু হয়েছে। গোলাম মোস্তফা নামে একজন জানান, হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাসেবা নেই। রোগীকে ভর্তি করে শয্যায় ফেলে রাখা হচ্ছে। কোন রকম চিকিৎসা দিয়েই দায়িত্ব শেষ চিকিৎসক সেবিকাদের। উপযুক্ত চিকিৎসা ও অবহেলার কারণে রোগীর মৃত্যু বাড়ছে। ইয়োলোজোনে গেলে একাধিক রোগী ও স্বজন জানান, হাসপাতালে রোগীরা সঠিকভাবে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেনা। ঠিকমতো চিকিৎসক পাওয়া যায়না। ওয়ার্ডে রাউন্ডে আসলেও দুর থেকে কথা বলে চলে যায়। আর সেবিকাদের রোগীর শারীরিক অবস্থা জানাতে গেলে তারা রীতিমতো বিরক্ত হন। অনেক সময় রোগীকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলা হয়। ঠান্ডু নামে একজন জানান, চিকিৎসা অবহেলার কারণে প্রতিদিন একাধিক রোগী মারা যাচ্ছেন। তবে রোগী ও স্বজনদের অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ। তিনি জানিয়েছেন, রোস্ট্রার অনুযায়ী চিকিৎসক ও সেবিকারা দায়িত্ব পালন করেন। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেন রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য। আরএমও আরও জানান, বুধবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত করোনা রেডজোনে ১৫৫ জন ও ইয়োলোজোনে ৮৮ রোগী চিকিৎসাধীন। প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম অবস্থা। রোগী বাড়ার কারণে সকলের মন জয় করা সম্ভব হয়না। এদিকে,সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, বুধবার জেলায় আরও ৩৬১ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টারে ৬৩২ টি নমুনায় পরীক্ষায় ২৫৩ জন ও খুলনা মেডিকেল কলেজের (খুমেক) ল্যাবে ৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালসহ বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৯১ জনের র্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় ৯৫ জনের ফলাফল করোনা পজেটিভ আসে। এছাড়া জিন এক্সপার্ট মেশিনে ১০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮ জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের জীবাণু মেলে। শনাক্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ১৯১ জন, কেশবপুর উপজেলায় ২৬ জন, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৩০ জন, অভয়নগর উপজেলায় ৫২ জন, মণিরামপুর উপজেলায় ২৭ জন, বাঘারপাড়া উপজেলায় ১২ জন, শার্শা উপজেলায় ১৯ জন ও চৌগাছা উপজেলায় ৪ জন রয়েছে। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, ৭ জুলাই পর্যন্ত যশোর জেলায় ১৪ হাজার ২শ’ ৭৩ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। যশোরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে ১৮৭ জনের। এছাড়া ঢাকায় ৬ জন খুলনায় ৭ জন ও সাতক্ষীরার হাসপাতালে মারা গেছেন ১জন।