মোঃ সাইফ উদ্দিন রনী, কুমিল্লা ব্যুরো প্রধান:
বাঘ শাবক বলে ফেসবুক পেইজে চিতা বিড়ালের শাবক বিক্রির সময় কুমিল্লায় দুইজনকে হাতে নাতে ধরেছে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। দেয়া হয়েছে অর্থদন্ড। কুমিল্লাসহ সারা দেশ থেকে বন্যপ্রাণী সংগ্রহ করে অনলাইনে বেচাকেনার সিন্ডিকেটটির সদস্য কলেজ পড়ুয়ারা। তরুণদের বন্যপ্রাণী বেচা কেনার মত অপরাধে জড়িয়ে যাওয়া নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্টরা।
কুমিল্লা ক্যাটস কলোনী নামে একটি ফেসবুক পেইজে বাঘ শাবক বিক্রির কথা বলে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। ছবি দিয়ে ক্রেতাদের কাছে চাওয়া হয় দুই লক্ষ টাকা। দামদর শেষে ৭০ হাজার টাকায় বিক্রিতে রাজি হয় বিক্রেতা রাজধানীর স্বনামধন্য কলেজের ছাত্র রাফি। এরই সূত্র ধরে ফাঁদ পেতে ক্রেতা সেজে কুমিল্লায় বাঘ শাবক কিনতে এসে রাকিব ও ইশতিয়াক নামে দুই কলেজ ছাত্রকে হাতেনাতে আটক করে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। বৃহস্পতিবার বিকালে কুমিল্লার ক্যান্টমেন্ট এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। দেয়া হয়েছে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড। কিন্তু খাঁচায় বাঘের পরিবর্তে পাওয়া গেল বিড়াল। বন কর্মকর্তারা বলছেন, উদ্ধার হওয়া শবক দু’টি চিতা বিড়ালের।
ওয়াইল্ড লাইফ ইনসপেক্টর আবদুল্লাহ আল সাদিক বলেন, ফেসবুক ও অনলাইনে পাচারকারী সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে করোনা ও লকডাইনের সময়টাতে। এ চক্রটি বাঞের বাচ্চা বিক্রি হয় বলে ফেসবুকে একটি পোষ্ট দেয়। পওে আমরা কুমিল্লা ক্যান্টমেন্ট এলাকায় এই বাঘের বাচ্ছা ক্রয়ের নামে আসি। এসে দেখি এটা চিতা বিড়াল আর কুমিল্লা বা চট্রগ্রামের অঞ্চলে বাঘ থাকার সম্ভবনা নাই।
ওয়াইল্ড লাইফ ইনসপেক্টর নার্গিস সুলতানা বলেন, বন্যপ্রাণী প্রাচার চক্রটি তাদের ব্যবসার ধরন পাল্টেছে। করোনাকালীন সময়ে পাচার কাজে ব্যবহার হচ্ছে অনলাইন মাধ্যম। স্কুল কলেজ পড়ুয়াদের ফেসবুকের মাধ্যমে বন্যপ্রাণী সংগ্রহ করে চড়া দামে বেচা কেনা করছে চক্রটি। আমরাও আমাদের কৌশল পরিবর্তন করেছি, কিভাবে অপরাধীদের ধরা যায়। এরই পেক্ষিতে আমরা তাদের আটক করি। আটককৃত একটি স্বনামধন্য কলেজের ছাত্র অপর জন মেডিকেলের পরীক্ষার্থী। সব বিবেচনা করে তাদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। বন্যপ্রাণী সংরক্ষনে বন্যপ্রাণী পাচার অপরাধ দমন ইউনিটের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
বন্যপ্রানী উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবক প্রকৌশলী মোশারফ হোসাইন বলেন, তরুন প্রজন্মরা বন্যপ্রাণীদের বাঁচাবে। কিছু তরুন লোভে পড়ে এসব বন্য প্রাণী বিক্রি করছে। তারা এটি না করে বণ্যপ্রাণীদের বাচাতে এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেকটা প্রানীই পরিবেশের একটা অংশ। এভাবে চলতে থাকলে একসময় বনাঞ্চলে বিলুপ্ত প্রায় প্রাণীগুলো একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে ।
সামাজিক বন বিভাগ কুমিল্লার বিভাগীয় কর্মকর্তা কাজী মোঃ নুরুল করিম বলেন, কুমিল্লার লালমাই পাহাড় ও ভারতসীমান্তবর্তী বনাঞ্চলগুলো এখনো বন্যপ্রাণীদের প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য। এই অঞ্চলে বন্যপ্রাণী পাচার রোধে কার্যক্রম আরো বাড়ানো হবে। কুমিল্লা থেকে এর আগেও উদ্ধার হয়েছে চিতা বিড়াল। তবে চিতা বাঘের মত দেখতে এই প্রাণীগুলো আজ বিলুপ্তির পথে। সাধারণ মানুষের উচিত এসব বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে এগিয়ে আসা।