মো.রবিউল ইসলাম (টঙ্গী,গাজীপুর):
করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধে গাজীপুরেশুরু হয়েছে সরকারঘোষিত লকডাউন। তবে জেলার প্রবেশদ্বার গুলোতে চেকপোস্ট গুলোতে করাকরি থাকলেও জেলার অভ্যন্তরে চলছে ঢিলেঢালাভাবে।
মঙ্গলবার (২২ জুন) সকাল থেকেই জেলার অভ্যন্তরের সড়কগুলোতে রিকশা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান চলাচল করছে। তবে বন্ধ বয়েছে দূরপাল্লার বাস।
শহরের বিভিন্ন স্থানে খোলা রয়েছে মিষ্টি ও খাবার হোটেল, চা ও মুদি দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। করোনা সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে গাজীপুর থাকলেও সাধারণ জনগণ ঘুরে বেড়াচ্ছেন স্বাভাবিকভাবেই। অনেক বের হয়েছেন দৈনন্দি কাজে। অনেকের মুখে দেখা যায়নি মাস্ক।
অপরদিকে যানবাহন না পেয়ে অফিসগামীরা চরম দুর্ভোগে পরেছেন।
গাজীপুরে খোলা রয়েছে সব ধরণের শিল্প প্রতিষ্ঠান। ফলে অফিসগামী মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। সকাল থেকে চলছে না লোকাল কোন বাস। বন্ধ করা হয়েছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাও। যানবাহন না পেয়ে শ্রমিকেরা পায়ে হেঁটে কারখানায় যাচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে লোকাল যানবাহন বন্ধ থাকলেও মহাসড়কে কিছু কিছু যানবাহন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই চলাচল করছে।
গাজীপুর থেকে অনেকেই ঢাকা অফিস করেন। তারা গাজীপুর থেকে ঢাকা যাওয়ার যানবাহন না পেয়ে টঙ্গী থেকে পায়ে হেঁটে আব্দুল্লাহপুর যাচ্ছেন। এদিকে আজ থেকে জয়দেবপুর জংশনে কোন ট্রেন না থাকায় যাত্রীরা আরও বেশি বিপাকে পড়েছেন ।
জয়দেবপুর রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার রেজাউল ইসলাম বলেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী গাজীপুর জংশনে আজ থেকে কোন ট্রেন থামবে না ।
এদিকে সকাল থেকেই লকডাউন বাস্তবায়নে জেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে দেখা গিয়েছে প্রশাসনের তৎপরতা।
স্থানীয় পোশাক কারখানা শ্রমিক রিয়া আক্তার বলেন, কারখানা খোলা রেখে এই কঠোর লকডাউন তেমন কোনো কাজেই আসবে না।
সুমন মিয়া নামে এক ইজিবাইক চালক বলেন, ‘পেটের দায়ে সংসার চালাতে বের হয়েছি। চলাচলে এখন পর্যন্ত কেউ বাঁধা দেয়নি। তবে ভয়ে ভয়ে চালাচ্ছি।’
জসিম হোসেন নামে এক রাজমিস্ত্রি বলেন, ‘আমাদের কাজ চালু রয়েছে, না গেলে আমারই ক্ষতি। এছাড়া কিস্তি, সংসারের খরচ যোগাড় করতে হবে। একদিন না কাজ করলে সংসার চলবে না। তাই বাধ্য হয়েই কাজে বের হয়েছি।’
গাজীপুর মেট্রোপলিটনের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, লকডাউনের নির্দেশনা অনুযায়ী দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যেতে পারবে না এবং কোনো বাস ঢাকায় ঢুকতেও পারবে না। আমরা সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছি
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণের হার বেড়ে যাওয়ায় ২২ জুন ভোর সকাল ৬টা থেকে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জে লকডাউন ঘোষণা করেছে সরকার।
গত ২৪ ঘণ্টায় গাজীপুরে নতুন মৃত্যুর সংখ্যা না থাকলেও ৩১৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে ৪৩ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়।
গাজীপুর জেলার পাঁটি উপজেলায় এ পর্যন্ত ৮৭ হাজার ৬৭১জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে ১১ হাজার ৯৮০ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়।
সদর উপজেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ উপজেলায় এ পর্যন্ত ৭ হাজার ৮৫৪ জন শরীরে করোনা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এ পর্যন্ত জেলার শ্রীপুর উপজেলায় ১ হাজার ২৯৪ জন, কালিয়াকৈরে এক হাজার ২১৬ জন, কালীগঞ্জে ৮৬৩ জন ও কাপাসিয়ায় ৭৫৪ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়। মোট সুস্থ হয়েছে ১০ হাজার ২৬৫ জন। মোট মৃত্যুর সংখ্যা ২২৭জন।