বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি:
যশোরে কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতি থামছেনা। গোটা জেলায় সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। মহামারিতে আক্রান্ত ও মৃত্যু বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক দিকে যেতে পারে বলে আশংকা স্বাস্থ্যবিভাগের। সোমবার যশোর জেলায় নতুন করে ২৭৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যা করোনার শুরু থেকে একদিনে সর্বোচ্চ রেকর্ড। এছাড়া গত ২৪ ঘন্টায় যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনা রেডজোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৩ জন ও ইয়োলোজোনে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন। এদিকে, গত ১৫ দিনে জেলায় করোনায় ২৯ জনের প্রাণহানি ও ২ হাজার ২শ’৭৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, গত ২৪ ঘন্টায় মৃত ৫ জনের মধ্যে ৩ জন করোনাক্রান্ত অবস্থায় রেডজোনে ও বাকি ৩ জন উপসর্গ নিয়ে ইয়োলোজোন চিকিৎসাধীন ছিলেন। করোনা পজেটিভ নিয়ে মৃত ৩ জন হলেন চৌগাছা পৌর এলাকার বিশ্বাসপাড়ার শাওন হোসেনের স্ত্রী কোহিনুর বেগম (৫৭),ঝিকরগাছা উপজেলার শিওরদাহ গ্রামের মৃত ইবাদ আলীর ছেলে মিজানুর রহমান (৬০) ও ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার নাটিমা গ্রামের মৃত বাকের উদ্দিনের ছেলে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আশিকুর রহমান আশিক (৪০)। উপসর্গে মারা যাওয়া ৩ জন হলেন যশোর শহরের কাজীপাড়া কদমতলা এলাকার ইন্তাজ আলীর ছেলে আব্দুর রাজ্জাক (৬৫), ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া গ্রামের মনিরুজ্জামানের স্ত্রী নীলা (২৬) ও বাঘারপাড়া উপজেলার ঘোষপাড়ার মৃত রহিম মোল্যার ছেলে হোসেন আলী (৯০)। যশোর সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টারে ৫৬০ জনে ২২১ জন ও খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) ল্যাবে ২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১ জনের পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ৪৮ জনের র্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় ২০ জন ও অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৯৭ জনের র্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় ৩৫ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। সবমিলিয়ে ৭০৭ টি নমুনা পরীক্ষায় ২৭৭ জনের শরীরে করোনা জীবাণু পাওয়া গেছে। জেনোম সেন্টার ও খুমেক ল্যাবে শনাক্ত ২২২ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় ১০২ জন, কেশবপুর উপজেলায় ৪ জন, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৫ জন, অভয়নগর উপজেলায় ৬০ জন, মণিরামপুর উপজেলায় ১৯ জন, বাঘারপাড়া উপজেলায় ৮ জন, শার্শা উপজেলায় ১৫ জন ও চৌগাছা উপজেলায় ৯ জন রয়েছেন। যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, জেনোম সেন্টারে যশোরের ২২২ জন ছাড়াও মাগুরা জেলার ৪৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৮ জনের করোনা পজেটিভ হয়েছে। দুই জেলার মোট ৬০৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৪০ জন করোনা পজেটিভ ও ৩৬৯ জনের নেগেটিভ শনাক্ত হয়েছে। যশোর সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, ২১ জুন পর্যন্ত যশোর জেলায় ৯ হাজার ৭শ, ৯০ জন কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১২৩ জন নারী পুরুষ। এর মধ্যে যশোরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে ১০৯ জনের। আর ঢাকায় ৬ জন খুলনায় ৭ জন ও সাতক্ষীরার হাসপাতালে মারা গেছেন ১জন। সিভিল সার্জন আরও জানান, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের রেডজোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত ৩ জনের হিসাব এখনো তার কাছে দেয়া হয়নি। ওই ৩ জনের মৃত্যু ধরলে মোট মৃত্যু ১২৬ জন হবে। সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, করোনায় আক্রান্তে খুলনা বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন খুলনা জেলায়। আর দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছে যশোর জেলা। বর্তমানে নিয়ন্ত্রহীণভাবে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে পরিস্থিতি আরও ঊদ্বেগজনক দিকে যেতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনার প্রতি যতœবান হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সিভিল সার্জন। যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট (এডিএম) মোহাম্মদ সায়েমুজ্জামান জানান,করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৯ জুন দিবাগত রাত থেকে যশোর ও নওয়াপাড়া পৌরসভার সকল ওয়ার্ডে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তমিজুল ইসলাম। এরমধ্যে করোনা পরিস্থিতি প্রতিদিন রেকর্ড ভাঙছে। এরপর গত ১৫ জুন জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির দ্বিতীয় সভায় বিধিনিষেধ বাড়িয়ে যুক্ত করা হয় ঝিকরগাছা পৌরসভা, সদরের উপশহর, নওয়াপাড়া, আরবপুর, চাঁচড়া, শার্শা ইউনিয়ন ও বেনাপোল বাজার। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চলাচল নিয়ন্ত্রে বাঁশ টাঙিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রশাসনও কঠোর অবস্থান নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। এরপরেও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। গত মে মাসের শেষের দিকে জেলায় গড় আক্রান্তের সংখ্যা ছিলো শতকরা ২২ ভাগ। আর জুন মাসে বেড়ে হয়েছে শতকরা ৪৫ ভাগ। এরমধ্যে গত ১৫ দিনে জেলায় করোনায় ২৯ জনের প্রাণহানি ও ২ হাজার ২শ’৭৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। যশোরের জেলা প্রশাসক শেখ তমিজুল ইসলাম জানান, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে নানা প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বেশি নমুনা পরীক্ষায় বেশি মানুষ পজেটিভ হচ্ছেন। এতে ভয়ের কিছু নেই। এখনো সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। তিনি আরও জানান, বিভিন্ন এলাকায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে মামলা দিয়ে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে।