বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি:
যশোরে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। নিয়ন্ত্রনহীনভাবে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। প্রতিদিন ভাঙছে আক্রান্তের রেকর্ড । গত ২৪ যশোরে ভারত ফেরত ৫ জনসহ নতুন করে আরও ২৩৫ জনের কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। যা করোনা পরিস্থিতির শুরু থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত জেলায় সর্বোচ্চ রেকর্ড । এদিকে, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে একজন করোনায় আক্রান্ত ও অপরজন উপসর্গ নিয়ে মারা যান। তারা হলেন, কেশবপুর উপজেলার কলেজপাড়ার মৃত বিষের ছেলে আলী হাসান (৩৫) ও মণিরামপুর উপজেলার রাজগঞ্জ উপজেলার ফজলুর রহমানের ছেলে শাহবুদ্দিন (৬৫)।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আলী হাসানকে ৩ জুন হাসপাতালের রেডজোনে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার দিবাগত রাতে দায়িত্বরত চিকিৎসক সুদিপ্তা সাহা তাকে রাতে মৃত ঘোষণা করেন। করোনার উপসর্গ নিয়ে শাহবুদ্দিনকে মঙ্গলবার বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে ইয়োলো জোনে ভর্তি করা হয়। তার প্রচন্ড শ্বাস কষ্ট ছিলো। ভর্তির ৪০ মিনিট পর দায়িত্বরত চিকিৎসক শাহবুদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন। যশোর সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, মঙ্গলবার
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টারে ৪২৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২০৬ জনের পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রে ৪৭ জনের র্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় ১৬ জন ও বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩৪ জনের এন্টিজেন পরীক্ষা করে ১৩ জন পজেটিভ হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫ জন ভারত ফেরত যশোর শহর, শার্শা ও ঝিকরগাছার প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আক্রান্ত হয়েছেন। জেনোম সেন্টার শনাক্ত ২০৬ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় ১৫২ জন, ঝিকরগাছা উপজেলায় ১৫ জন, অভয়নগর উপজেলায় ৫ জন, মণিরামপুর উপজেলায় ১০ জন, বাঘারপাড়া উপজেলায় ১ জন, শার্শা উপজেলায় ১৫ জন ও চৌগাছা উপজেলায় ৮ জন রয়েছেন। যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীর জাহিদ জানান, জেনোম সেন্টারে যশোরের ২০৬ জন ছাড়াও মাগুরা জেলার ৩৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮ জন ও নড়াইল জেলার ৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২২ জনের করোনা পজেটিভ হয়েছে। তিন জেলার মোট ৫১৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৩৬ জন পজেটিভ ও ২৭৭ জনের নেগেটিভ শনাক্ত হয়েছে।
যশোর সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, পরিসংখ্যানের হিসেব অনুযায়ী ১৫ জুন পর্যন্ত যশোর জেলায় ৮ হাজার ৫শ, ২৪ জন কোভিডে নভেল আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১০৬ জন নারী পুরুষ। এর মধ্যে যশোরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে ৯৪ জনের। আর ঢাকায় ৬ জন খুলনায় ৫ জন ও সাতক্ষীরার হাসপাতালে মারা গেছেন ১জন। সিভিল সার্জন আরও জানান, বর্তমানে যশোরে করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, বর্তমানে ৮০ শয্যার রেডজোনে ৭৫ জন করোনায় আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। প্রতিদিন ভর্তি রোগী বাড়ছে। অবস্থা সামাল দেয়ার জন্য গুরুতর নয় এমন রোগীকে পজেটিভ অবস্থায় ছাড়পত্র দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে। অন্যথায় ওয়ার্ডে রোগীর চাপ ঠেকানো যাবেনা। এর চেয়ে ও খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে পুরুষ ও মহিলা ইয়োলো জোনে। সেখানে করোনার সন্দিগ্ধ আসতেই আছে। ১৯ শয্যার বিপরীতে দ্বিগুন রোগী চিকিৎসাধীন। যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট (এডিএম) মোহাম্মদ সায়েমুজ্জামান জানান, যশোর জেলায় করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি অমান্যকারীদের নিয়মিত মামলা দিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে।
যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তমিজুল ইসলাম জানান, বেশি নমুনা পরীক্ষা করার কারণে করোনা পজেটিভও বেশি হচ্ছে। জনসাধারণের সচেতনতার অভাব, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনার প্রতি অনীহার কারণে ক্রমেই করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। সকল প্রকার স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান জানিয়েছেন তিনি।