বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি:
যশোরে করোনা সংক্রমণের আরো অবনতি ঘটেছে। গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৪জন ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও ৩ জন। এছাড়া ভারত ফেরত ৮ জনসহ নতুন করে ৯২ জনেরকরোনা শনাক্ত হয়েছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মুতরা হলেন যশোরের শার্শা উপজেলার মাটিপুকুর গ্রামের সাগর বিশ্বাসের ছেলে আলমগীর হোসেন (৩৬) ও নাভারণ এলাকার হাবীবুররহমানের স্ত্রী আঞ্জুয়ারা বেগম (৫৫), বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামেরআদিত্যনাথ ঠাকুরের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক প্রশান্ত ঠাকুর ও কেশবপুর উপজেলার বাসিন্দাআলমগীর হোসেন (৩৫)। করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন শোরশহরের রেলগেট এলাকার ইসহাক আলীর স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৬৫), শার্শা উপজেলার কায়বাইউনিয়নের ধান্যতাড়া গ্রামের মৃত ইমাম আলীর ছেলে আতিয়ার রহমান (৭৫) ও কাশিয়ানীগ্রামের মতিয়ার রহমানের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৪০) ।যশোর২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদজানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আঞ্জুয়ারা বেগমকে ১০ জুন হাসপাতালের রেডজোনে ভর্তি করা হয়। সেখানেচিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোর রাতে দায়িত্বরত চিকিৎসক রাতে মৃত ঘোষণা করেন।এরআগে রাত ২ টার দিকে মারা যান করোনায় আক্রান্ত আলমগীর হোসেন। স্বজনরা তাকে গত ২জুন রাত সাড়ে ৮টায় রেডজোনে ভর্তি করেছিলেন। আরএমও আরিফ আহমেদ আরও জানান,করোনার উপসর্গ নিয়ে ১৪ জুন সকাল ১০ টা ১০ মিনিটে ইয়োলো জোনে ভর্তি করা হয়েছিলোমনোয়ারা বেগমকে। দায়িত্বরত চিকিৎসক ভর্তির ৪৫ মিনিট পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিনদুপুর সাড়ে ১২ টার দিকে চিকিসাধীন মরিয়মকে মৃত ঘোষণা করেন ডা. মোর্তজা। তাকে ১৩জুন রাত ১০ টা ৪৫ মিনিটে জরুরি বিভাগ থেকে ভর্তি করে ইয়োলো জোনে চিকিৎসার জন্য পাঠানোহয়েছিলো। এরআগে রোববার গভীররাতে পুরুষ ইয়োলো জোনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারাযান আতিয়ার রহমান। তাকে রোববার রাত ৯টা৫০ মিনিটে ভর্তি করা হয়েছিলো। বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা ফোকালপার্সন ডা. শাহআলম রুবেল জানান, রোববার র্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষা করে প্রাথমিকবিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রশান্ত ঠাকুরের করোনাভাইরাস পজেটিভ শনাক্ত হয়। পরের দিনসোমবার ভোর রাতে নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। যশোর সিভিল সার্জনঅফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, কেশবপুরে করোনায় আক্রান্তআলমগীর হোসেন নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। দুই দিন আগে খুলনামেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষায় তার করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। ডা.রেহেনেওয়াজ জানান, সোমবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোমসেন্টারে ১৫২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫৩ জনের পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া যশোর ২৫০ শয্যাজেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্রে ৪৩ জনের র্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় ২১ জন ও বিভিন্ন উপজেলাস্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪৭ জনের এন্টিজেন পরীক্ষা করে ১৮ জন পজেটিভ হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৮ জনভারত ফেরত যশোর শহর, শার্শা ও ঝিকরগাছার প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আক্রান্ত হয়েছেন। জেনোমসেন্টার শনাক্ত ৫৩ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় ১৬ জন, কেশবপুর উপজেলায় ২ জন, ও ঝিকরগাছাউপজেলায় ৩ জন, অভয়নগর উপজেলায় ১৪ জন, শার্শা উপজেলায় ১৩ জন ও চৌগাছা উপজেলায় ৫ জন রয়েছেন।যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য অধ্যাপক ড. ইকবাল কবীরজাহিদ জানান, জেনোম সেন্টারে যশোরের ৫৩ জন ছাড়াও মাগুরা জেলার ২৯ জনের নমুনাপরীক্ষায় ৬ জন ও নড়াইল জেলার ৩৫ জনের নমুনাপরীক্ষায় ১৬ জনের করোনা পজেটিভ হয়েছে। তিন জেলার মোট ২১৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৭৫ জনপজেটিভ ও ১৪১ জনের নেগেটিভ শনাক্ত হয়েছে। যশোরসিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, পরিসংখ্যানের হিসেব অনুযায়ী ১৪ জুন পর্যন্তযশোর জেলায় ৮ হাজার ২শ, ৮৯ জন কোভিডে নভেল আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১০৫ জননারী পুরুষ। এর মধ্যে যশোরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে ৯৩ জনের। আরঢাকায় ৬ জন খুলনায় ৫ জন ও সাতক্ষীরার হাসপাতালে মারা গেছেন ১জন। সিভিল সার্জন আরওজানান, স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে মানুষের উদাসীনতায় সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতিরদিকে যাচ্ছে। সারাদেশের মধ্যে যশোর জেলা এখন উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে। মৃত্যু ও শনাক্তপ্রতিদিনই বাড়ছে। সচেতনতা ছাড়া এই মুহুর্তে সংক্রমণ প্রতিরোধ কোন ভাবেই সম্ভব না।যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তমিজুল ইসলাম জানান, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত নাহয়ে এই সংক্রমণ ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় করোনাপরিস্থিতি মোকাবেলা করা সম্ভব হবেনা। উল্লেখ্য,করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বাড়তে থাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৮ জুনজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় যশোর ও নওয়াপাড়া পৌরসভার সকল ওয়ার্ডে কঠোরবিধিনিষেধ আরোপ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ৯ জুন দিবাগত রাত থেকে কঠোর বিধিনিষেধে গণবিজ্ঞপ্তিজারি করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ তমিজুল ইসলাম। এরমধ্যে করোনা পরিস্থিতি প্রতিদিনরেকর্ড ভাঙছে। গত ১২ দিনে যশোরে করোনায় শিশুসহ মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। আর ১১৯৩ জনআক্রান্ত হয়েছেন। জেলা প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপ্রাণ চেষ্টাকরা হচ্ছে মানুষকে সচেতন করার জন্য।