সুমনমানিকগঞ্জে বন্যার পানিতে ভাসছে লেবু চাষিদের স্বপ্ন। বন্যার কারণে অনেক লেবু গাছ মরে গেছে। আবার গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকায় লেবু সংগ্রহ করাও সম্ভব হচ্ছে না। এতে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন চাষিরা।
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বলেন, ‘জেলার সাটুরিয়া ও ঘিওর উপজেলায় সবেচেয়ে বেশি বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষ হয়।
সিংগাইর, হরিরামপুর, দৌলতপুর, শিবালয় ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় তুলনামূলক কম লেবু চাষ হয়। এবার জেলার ৭টি উপজেলায় ১৯০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়েছে। কিন্তু বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন চাষিরা।’
সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার মো. খলিলুর রহমান বলেন, ‘শুধু সাটুরিয়া উপজেলায় ৯০ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়েছে। থোকায় থোকায় লেবু ঝুলে থাকলেও বন্যার কারণে তা তোলা সম্ভব হয়নি। এখন বন্যার পানি কমে যাওয়ায় গাছগুলো মরে যাচ্ছে।’
গ্রামের লেবু চাষিরা বলেন, ‘লেবু চাষে খরচ কম। তাই আমাদের অঞ্চলে বেশি লেবু চাষ হয়। আমি ৩০ শতাংশ জমিতে ৩০০টি লেবুর চারা লাগিয়েছিলাম।১২-১৪ মাসের মধ্যেই লেবু বিক্রি শুর করি। বছরে ৩-৪ বার বাগান পরিষ্কার করতে হয়। ৩০ শতাংশ লেবু বাগান থেকে ২৫- ৩০ হাজার টাকা লাভ হয়। কিন্তু এবার বন্যায় সব শেষ হয়ে গেলো।’
সাভার গ্রামের লেবু চাষী ফজলুর করিম বলেন, ‘১৫০ শতাংশ জমিতে লেবু চাষ করেছি। আমি নিজেই লেবু তুলে ঢাকায় নিয়ে আড়তে বিক্রি করি। বন্যার কারণে অধিকাংশ লেবু গাছ মারা গেছে। এতে প্রায় এক লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।’
একই গ্রামের শাহানুর , ‘আমি ৩৫ শতাংশ জমিতে লেবু চাষ করেছিলাম। এক বছরের জন্য কিনেছিলাম ৫০ শতাংশ জমির লেবু গাছ। গাছে লেবু পেকে যাচ্ছে কিন্তু পানির কারণে তুলতে পারছি না।’
বাছট গ্রামের লেবু চাষি খলিলুর রহমান বলেন, ‘করোনার কারণে মার্চ ও এপ্রিল মাসে লেবুর দাম ভালো ছিল। তখন বেশি দামে লেবু বিক্রি করতে পেরেছিলাম। তারপর লেবুর দাম কমে যায়। এখন আবার বন্যায় লেবু গাছগুলো মরে গেলো। এতে ৬০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।’
লেবু ব্যাপারি তোনসু বলেন, ‘এ বছর আমি ৭ লাখ টাকার লেবু বাগান কিনেছিলাম। বছরে ৩ বার সার, শ্রমিক খরচ বাবাদ আরও ৩ লাখ টাকা গেছে। শুধু বন্যার কারণে আমার ৪ লাখ টাকা ক্ষতি হয়ছে।’
মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শাজাহান আলী বিশ্বাস বলেন, ‘জেলায় ২ হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন লেবু উৎপাদন হয়েছিল।
বন্যায় অন্যান্য চাষিদের মতো লেবু চাষিরাও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন লেবু ক্ষেতে পানি জমে আছে। দ্রুত পানি না নামলে আরও ক্ষতি হবে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা আছে। বিভিন্ন সময়ে তাদের সহযোগিতা করা হবে।’