1. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  2. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  3. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ০৪:০৭ অপরাহ্ন

যশোরে তিন শিশু খুনের ঘটনায় মামলাঃ তত্ত্বাবধায়ক বরখাস্ত, দুটি তদন্ত কমিটি গঠন

  • সময় : শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০২০
  • ২৭৪



যশোর কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে তিন শিশুকে নির্যাতনে হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাত আসামিদের নামে মামলা হয়েছে। শুক্রবার (১৪ আসগস্ট) রাতে নিহত পারভেজ হাসান রাব্বির পিতা রোকা মিয়া বাদী হয়ে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলাটি করেছেন। ঘটনার জেরে প্রতিষ্ঠানের তত্ত্ববধায়ক ও সমাজসেবা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন।

শুক্রবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। এরআগে আব্দুল্লাহ আল মাসুদসহ ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। সমাজসেবা অধিদফতর ও জেলা প্রশাসক আলাদা দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।


যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মনিরুজ্জামান জানান, মামলাটি তদন্ত পূর্বক ঘটনার সাথে জড়িতদের আসামি হিসেবে নাম অন্তভুক্ত করা হবে। ওসি আরো জানান, ঘটনার রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যান। এসময় আলামত হিসাবে হকিস্টিক, ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প, লোহার পাইপ, কাপড়, কাঠ জব্দ করা হয়।

হেফাজতে নেয়া ১০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে দায়িত্বরত দুই আনসার সদস্যের উপর পুলিশের নজর রয়েছে। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হাসপাতাল মর্গে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য রুহুল আমিন জানান, মেডিকেল অফিসার ডা. আহম্মেদ তারেক শামস নিহত ৩ শিশুর ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করেন। এসময় সেখানে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রট হাফিজুল হক উপস্থিত ছিলেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা আসার পর মৃতদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।


যশোরের জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানান, এই ঘটনার পর দুটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি। অপরটি করেছেন সমাজসেবা অধিদফতর। সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছেন শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক ও সমাজ সেবা অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। এদিকে, ১৪ আগস্ট সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যশোরে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ৩ বন্দি নিহত হওয়ার সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য দুই সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রতিষ্ঠান) সৈয়দ মো. নুরুল বসির ও উপপরিচালক ( প্রতিষ্ঠান-২) এসএম মাহমুদুল্লাহ। তিন কর্মদিবসের মধ্যে মহাপরিচালকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ঘটনার রাতেই খুলনা থেকে অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক নাহিদুল ইসলাম যশোরে আসেন। ঘটনার বিষয় তিনি সংবাদকর্মীদের সাথে কথা বলেন। শুক্রবার যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে কথা হয়
নিহত রাসেলের ভাই সাইফুল ইসলাম নান্টু ও নিহত রাব্বির পিতা খুলনা জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের প্রচার সম্পাদক রোকা মিয়ার সাথে।

তারা জানিয়েছেন, টেলিভিশনে সংবাদ দেখে শুক্রবার যশোরে এসে হাসপাতাল মর্গে লাশ দেখতে পায়। শুনেছি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে কর্তৃপক্ষের নির্যাতনে তিনজন নিহত ও আরো অনেকজন আহত হয়েছেন। ঘটনা চাপা রাখতে আহতদের ঠিক সময়ে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়নি। বিনা চিকিৎসায় মারা যায় তিনজন। রোকা মিয়া আরো জানিয়েছেন, যদি ছেলেরা অপরাধ করে তার জন্য শাস্তি আছে। তবে কেনো তাকে মেরে ফেলতে হবে? আর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র মানে কি মৃত্যু ফাঁদ।

ভালবেসে তাদেরকে সংশোধন করা যায়না। এর আগেও এই কেন্দ্রে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করেন রোকা মিয়া। তার দাবি সঠিকভাবে ঘটনা তদন্ত করে জড়িতদের কঠিন শাস্তি দেয়া হোক। নিহত রাব্বির মা পারভিনা বেগম হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদেত বলেন, আমার একমাত্র ছেলেকে নির্মম নির্যাতনে খুন করা হয়েছে। কি এমন অপরাধ করেছিলো সে। আমার রাব্বিকে ফিরিয়ে দাও।
উল্লেখ্য, গত ৩ আগস্ট কেন্দ্রের হেড গার্ড (আনসার সদস্য) নূর ইসলাম তার চুল কেটে দেয়ার জন্য বন্দী পাভেলকে বলে। সে ক্লান্ত থাকায় পরে চুল কেটে দেয়া হবে জানালে সে ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করে এবং গন্ডগোল বাঁধিয়ে দেয়।

সে সময় কয়েকজনের মারপিটের শিকার হয় নুর ইসলাম। পাভেল বিষয়টি হেড গার্ড অফিসে জানায়। সেখানে নূর ইসলাম মিথ্যা অভিযোগ করে। বলে বন্দিরা নেশা করে তাকে মারপিট করেছে। এই ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার (১৩ আগস্ট) বেলা ১২টার দিকে ১৭/১৮ জনকে অফিসে ডাকা হয় এবং এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু নেশা করিনি জানালে কর্তৃপক্ষ বিশ্বাস করেনি। উল্টো কেন্দ্রের সহকারী তত্ত্বাবধায়ক মাসুম বিল্লাহ, প্রবেশন অফিসার মুশফিকসহ অন্য স্যাররা আমাদের জানালার গ্রিলের সাথে বেঁধে মুখ কাপড় গুঁজে বেধড়ক মারপিট করে। নির্যাতনে তিন জনের মারা যায়। তারা হলো খুলনার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশা পশ্চিম সেনপাড়ার রোকা মিয়ার ছেলে পারভেজ হাসান রাব্বি (১৮), বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার মহিপুর গ্রামের আলহাজ নুরুল ইসলাম নুরুর ছেলে রাসেল ওরফে সুজন (১৮) ও একই জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার তালিপপুর পূর্বপাড়ার নানু প্রামাণিকের ছেলে নাঈম হোসেন (১৭) । এছাড়া গুরুতর আহত হয় ১৪ জন। তারা হলো নোয়াখালীর চাঁদখালী উপজেলার মোমিনপুর গ্রামের ইকরামুলের ছেলে পাভেল, ঢাকার বিক্রমপুরের আবু বক্কার সিদ্দিকীর ছেলে আরমান, লালমনিরহাটের মফিজুলের ছেলে হৃদয়, নাটোরের গুরুদাসপুরের মিলন ভক্তের ছেলে সাকিব, যশোর সদর উপজেলার বসুন্দিয়ার ফারুক শেখের ছেলে ইমান, চুয়াডাঙ্গা মতিয়ার রহমানের ছেলে পাভেল, গোপালগঞ্জের মুদসেদপুরের, মহিদুল ইমলামের ছেলে শরিফুল, খুলনার সোনাডাঙ্গা এলাকার জাহিরের ছেলে সাব্বির, যশোর শহরের ঘোপ জেল রোডের রনির ছেলে হৃদয়, ধর্মতলা এলাকার আসাদুজ্জামানের ছেলে মাহিন, লোন অফিসপাড়ার আসলামের ছেলে রাকিব, বগুড়ার বিল্লালের ছেলে সাব্বির এবং গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ঘোষগাতী গ্রামের ঋজু ফকিরের ছেলে নাঈম খান।তারা যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ ঘটনা ভিন্নখাতে নিতে প্রচার করে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বন্দী শিশুদের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ৩ শিশু নিহত হয়েছে।


কিন্তু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত পাভেল, সাকিব, ঈশান সংবাদকর্মী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। তারা জানিয়েছেন, কর্তৃপক্ষের নির্যাতনে এই হতাহত হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪