যশোরে উপজেলা চেয়ারম্যান, সাংবাদিক , চিকিৎসক ও ব্যাংকারসহ নতুন করে ৭৬ জনের কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তালিকায় উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়া চৌগাছার ১ জন রোগীর নাম রয়েছে। এই নিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ২০০০ ছাড়িয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন।
যশোর সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টার থেকে পাঠানো ১৬৬ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ৭৯ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। এরমধ্যে ২ জন পুরাতন রোগী রয়েছেন। ফলাআপ পরীক্ষায়ও তাদের পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। আর ১ জন রোগীর নাম আমাদের তালিকায় নেই। অন্য জেলার রোগীর ফলাফল যশোরের তালিকায় চলে আসতে পারে। ফলে নতুন শনাক্ত হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে ৭৬ জন। এরমধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ১৭ জন, শার্শা উপজেলায় ৫ জন, ঝিকরগাছা উপজেলায় ১২ জন ,মণিরামপুর উপজেলায় ১০ জন, কেশবপুর উপজেলায় ৯ জন, বাঘারপাড়া উপজেলায় ১০ জনও অভয়নগর উপজেলায় ২ জন। ডা. রেহেনেওয়াজ আরো জানান, এদিন যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান ও তার পরিবারের ৬ জনসহ ১৮ জনকে করোনামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আর করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে আরও ১৯০ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য যবিপ্রবির জেনোম সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, আক্রান্তের মধ্যে রয়েছেন চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান ড.মোন্তানিছুর রহমান ও যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের করোনাজয়ী তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায়ের বোন মণিরামপুর উপজেলার কামালপুর গ্রামের বাসিন্দা রীতা রানী ও ভগ্নিপতি অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ সীল।
যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রন) ডা. এএনএম নাসিম ফেরদৌস জানান, নতুন করে আক্রান্ত ১৭ জনের মধ্যে রয়েছেন দৈনিক স্পন্দন পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক সাজ্জাদ গণি খান রিমন ও তার ভাই আশা খান। এছাড়া আক্রান্ত হয়েছেন মিশনপাড়ার বাসিন্দা যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা.রবিউল ইসলাম। করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ৩১ জুলাই মারা যাওয়া প্রফেসর আব্দুস সামাদ খানের স্ত্রী ও কন্যাসহ বেজপাড়া মেইন রোড এলাকায় মোট ৭ জন রয়েছেন। আন্যরা জন হলেন খড়কি এলাকার ১ জন ব্যাংকার, উপশহর এলাকার ১ জন ব্যাংকার, আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজের ১ জন প্রফেসর, উপশহর এলাকার ১ জন, লিচুতলা এলাকার ১ জন, লোন অফিস পাড়ার ১ জন ও লোহাপট্টি এলাকার ১ জন নারী স্বাস্থ্যকর্মী। এদের মধ্যে সাংবাদিক সাজ্জাদ গণি খান রিমন ও তার ভাই আশা খান করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাকিরা হোমআইসোলেশনে রয়েছেন। আক্রান্তদের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন্নাহার লাকি জানান,চৌগাছা উপজেলা চেয়ারম্যানসহ নতুন করে আক্রান্ত ১১ জনের মধ্যে ১ জন মৃত রোগী রয়েছেন। তার নাম আনিসুজ্জামান (৪৫)। তিনি চৌগাছা পৌরসভার বিশ্বাসপাড়ার বাসিন্দা ছিলেন। তিনি জানান, গত ৩ আগস্ট আনিসুজ্জামান করোনার উপসর্গ নিয়ে চৌগাছা হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৪ আগস্ট তিনি মারা যান। নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছিলো। ফলাফলে আনিসুজ্জামানের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
যবিপ্রবির অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পরীক্ষণ দলের সদস্য ড. তানভীর ইসলাম জানিয়েছেন, জেনোম সেন্টারে যশোর জেলার ৭৯ জন ছাড়াও মাগুরা জেলার ৪৪ নমুনা পরীক্ষায় ৩১ জন ও নড়াইল জেলার ৬০ জনের নমুনা পরীক্ষা ২১ শরীরে কোভিডের জীবাণু পাওয়া গেছে। সবমিলিয়ে ২৭০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৩১ জনের করোনা পজিটিভ এবং ১৩৯ জনের নেগেটিভ ফলাফল এসেছে। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জেলার ৯৮৪৭ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ফলাফল এসেছে ৮৪৫৬ জনের। এরমধ্যে করোনায় শনাক্ত হয়েছেন ২০১৫ জন। সুস্থ হয়েছেন ১১৯৫ জন। এছাড়া ৩০ জন নারী পুরুষের মৃত্যু হয়েছে।