স্ত্রী সন্তানের পর এবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন যশোর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (৩৬)। শনিবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টার থেকে পাঠানো ফলাফলে যশোরে তিনিসহ নতুন করে ১১ জনের কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এদিন জেলায় আরও ৫৯ জনকে করোনামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
যশোর সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানিয়েছেন, শনিবার যবিপ্রবির জেনোম সেন্টার থেকে পাঠানো ৭৫ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ১৪ জনের করোনা পজেটিভ হয়। যাচাই বাচাই করে দেখা গেছে ১৪ জনের মধ্যে নতুন রোগী রয়েছেন ১১ জন। আর ৩ জন পুরাতন রোগী। ফলোআপ নমুনা পরীক্ষায় তাদের ফলাফল পজেটিভ এসেছে। নতুন শনাক্ত ১১ জনের যশোর শহর ও সদর উপজেলায় বসবাস। ডা. রেহেনেওয়াজ আরো জানান, এদিন নতুন করে ৫৯ জনকে করোনামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আদনান ইমতিয়াজ জানান, নতুন করে আক্রান্ত ১১ জনের মধ্যে ৩ জনকে অন্য জেলায় রেফার্ড করা হয়েছে। তারা নমুনা যশোর থেকে দিলেও অন্য জেলার বাসিন্দা। যে কারণে নিজ নিজ জেলার সিভিল সার্জনের কাছে তাদের ফলাফল হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া ২ জন রোগীর হদিস পাওয়া যায়নি। নমুনা দেয়ার আবেদন ফরমে উল্লেখ করা মুঠোফোনের নম্বরও বন্ধ রয়েছে।
ডা. আদনান ইমতিয়াজ আরও জানান, বাকি ৬ জন হলেন যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মোহাম্মদ কামরুজ্জামান (৩৬), কাজীপাড়া মানিকতলার বাসিন্দা ব্র্যাক ব্যাংকের কর্মকর্তা ওয়ালিউল (৩৩), পালবাড়ি এলাকার বাসিন্দা এনজিও কর্মী মোস্তাফিজুর রহমান (৪৬), কারবালা এলাকার ব্যবসায়ী এনামুল করিম (৫১), ষষ্টিতলাপাড়ার রবিন (৪২) ও বড় গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা জেলা প্রশাসক অফিসের কর্মচারী শফিউর রহমান (৫০)। আক্রান্তরা হোমআইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
ডা. আদনান ইমতিয়াজ আরো জানান, এরআগে গত ১২ জুলাই ইউএনও কামরুজ্জামানের স্ত্রী, শ্যালিকা ও গৃহপরিচারিকার করোনা শনাক্ত হয়। আর ১৪ জুলাই ফলাফলে জানানো হয় তার ৮ মাসের মেয়ে করোনায় আক্রান্ত। সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই ফলাফলে ইউএনও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়। এদিন তার স্ত্রী সন্তানেরও ফলোআপ পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে যশোর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, বর্তমানে তার শরীরে জ্বর নেই। তবে গলা ব্যথা আছে। খাবার খেতে ইচ্ছা করছে না। শরীরটা বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হোম আইসোলেশনে রয়েছেন তিনি। ইউএনও আরো জানান, স্ত্রী ও শিশু কন্যার নমুনা পরীক্ষায় ফের করোনা পজেটিভ এসেছে। সুস্থতার জন্য সকলের কাছে দোয়া চেয়েছেন ইউএনও কামরুজ্জামান।
যবিপ্রবির অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পরীক্ষণ দলের সদস্য ড. তানভীর ইসলাম জানিয়েছেন,
জেনোম সেন্টারে যশোর জেলার ১৪ জন ছাড়াও মাগুরা জেলার ৪০ নমুনা পরীক্ষায় ১২ জন,সাতক্ষীরা জেলার ১২৩ নমুনা পরীক্ষায় ২৬ জন ও বাগেরহাট জেলার ৪৪ নমুনা পরীক্ষায় ১১ জনের শরীরের কোভিডের জীবাণু পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ২৮২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৬৩ জনের করোনা পজিটিভ এবং ২১৯ জনের নেগেটিভ ফলাফল এসেছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন মুঠোফোনে জানিয়েছেন, শনিবার পর্যন্ত জেলার করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন ১৫৬০ জন। সুস্থ হয়েছেন ৮৫৫ জন। এছাড়া ২৪ জন নারী পুরুষের মৃত্যু হয়েছে।