করোনায় আক্রান্ত হয়ে যশোরে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার যশোর জেলায় নতুন করে ২০ জনের কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস শনাক্তের ফলাফলের তালিকায় তাদের নাম রয়েছে। এই নিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে যশোর জেলায় ২৩ জনের মৃত্যু হলো।
এদিকে, এদিন ভোরে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনার উপসর্গে আরও ১ নারী মারা গেছেন। যশোর সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টার থেকে পাঠানো ৭৬ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ২০ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়।
এরমধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ১৯ জন ও শার্শা উপজেলায় ১ জন। ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, আর করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে আরও ১১৪ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য যবিপ্রবির জেনোম সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার রেকর্ড করা হয়।
যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রন) ডা, এএনএম নাসিম ফেরদৌস জানান, নতুন করে আক্রান্ত ১৯ জনের মধ্যে ৫ জনকে অন্য জেলায় রেফার্ড করা হয়েছে। তাদের নমুনা এখান থেকে দেয়া হলেও বাড়ি যশোর জেলার মধ্যে না। এছাড়া ২ জন রোগীর হদিস পাওয়া যায়নি। নমুনা আবেদনে উল্লেখ করা মুঠোফোনের নম্বরও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
ডা. নাসিম ফেরদৌস আরও জানান, বাকি ১২ জন হলেন, যশোর পুলিশ লাইনের কোয়ার্টারে বসবাসকারী ২ জন পুলিশ সদস্য, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের ২ জন কারারক্ষী ও ১ জন কারারক্ষীর স্ত্রী, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ১ জন সেবিকা, ১ জন অফিস সহকারী, একই হাসপাতালের ১ জন কর্মচারীর স্ত্রী, আরবপুরের সরদারবাড়িতে বসবাসকারী যশোর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ১ জন উপসহকারী প্রকৌশলী, ষষ্টিতলা ফুড গোডাউন এলাকার ১ জন নারী, উপশহর সি ব্লকের বাসিন্দা যশোর আধুনিক হাসপাতালের ১ জন কর্ডিনেটর ও চাঁচড়া পশ্চিমপাড়ার বাসিন্দা সোনালী ব্যাংকের ১ জন কর্মকর্তা। নাসিম ফেরদৌস জানান, আক্রান্তদের মধ্যে পুলিশ সদস্য করোনা ডেডিকেটেড জিডিএল হাসপাতালে ও অন্যরা হোম আইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। যবিপ্রবির অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও পরীক্ষণ দলের সদস্য ড. তানভীর ইসলাম জানিয়েছেন, জেনোম সেন্টারে যশোর জেলার ৪০ জন ছাড়াও খুলনা জেলার ১০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১ জন, মাগুরা জেলার ২৫ নমুনা পরীক্ষা করে ৯ জন , বাগেরহাট জেলার ১২ নমুনা পরীক্ষা করে ৫ জন ও সাতক্ষীরা জেলার ৪২ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৫ জনের শরীরের কোভিডের জীবাণু পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ১৬৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৪০ জনের করোনা পজিটিভ এবং ১২৫ জনের নেগেটিভ ফলাফল এসেছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, নমুনা পরীক্ষায় ফলাফল পজেটিভ শনাক্ত হওয়া ২ রোগী হলেন মাগুরার শালিখা উপজেলার শালিখা গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে রেজাউল আলম শিকদার (৬৫) ও চুয়াডাঙ্গার দর্শনা উপজেলার পুরাতন বাজার এলাকার বাসিন্দা হোটেল ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন (৬৩)।
করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ জুলাই ১০টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান রেজাউল আলম শিকদার। আর কামাল উদ্দিনের মৃত্যু হয় ২১ জুলাই মঙ্গলবার। মারা যাওয়ার পর তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছিলো। ডা.আরিফ আহমেদ আরো জানান. বৃহস্পতিবার হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোরে সদর উপজেলার পাকাসিয়া গ্রামের বিষ্ণু বিশ্বাসের স্ত্রী মিতু রানীর (৩৯) মৃত্যু হয়েছে।
জ্বর, ঠান্ডা, কাঁশি , শ্বাসকষ্টসহ করোনার সকল উপসর্গ নিয়ে বুধবার রাত ১২ টা ৩০ মিনিটে ভর্তি হন মিতু রানী। তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। আরএমও আরো জানান, ২৩ জুলাই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনার উপসর্গ নিয়ে মোট ৩৩ জন নারী পুরুষ মারা গেছেন।
নমুনা পরীক্ষায় তাদের মধ্যে করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে ৯ জনের। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন মুঠোফোনে জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যশোর জেলার ৮১২৪ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ফলাফল এসেছে ৬৭৩৩ জনের। এরমধ্যে করোনা পটিজিভ শনাক্ত হয়েছে ১৪৮০ জন।