সোমবার যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুলসহ জেলায় নতুন করে ৬৫ জনের কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১ জন মৃত রোগীর পজেটিভ ফলাফল রয়েছে। এদিন , যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ২ জন মারা গেছেন।
তারা হলেন যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার গাজীপুর এলাকার মৃত আক্কাস আলীর ছেলে শহিদুল ইসলাম (৭৫) ও মাগুরার শালিখা উপজেলার খলিলুর রহমানের ছেলে রেজাউল আলম (৬৫)। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ জানান, রোববার দুুপুর ২ টা ৪০ মিনিটে করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হন শহিদুল ইসলাম। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার সকাল ৬টায় দায়িত্বরত চিকিৎসক মাহফুজুর রহমান তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আর রোববার রাত ১২ টা ৪০ মিনিটে ভর্তি হন রেজাউল আলম। সোমবার বেলা ১০টা ৫০ মিনিটে তিনি মারা যান। আরএমও জানান, মৃত ২ জনের জ্বর, ঠান্ডা, কাঁশি , শ্বাসকষ্টসহ করোনার সকল উপসর্গ ছিলো। তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। আরএমও আরো জানান, ২৩ মার্চ হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি হওয়ার পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত করোনার উপসর্গ নিয়ে মোট মারা গেছেন ৩১ জন। নমুনা পরীক্ষায় ৮ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে।
ডা. আরিফ আহমেদ জানান, সর্বশেষ ফলাফলে পজেটিভ আসা মৃত রোগীর হলেন যশোর শংকরপুর এলাকার আবু বক্কারের ছেলে খলিলুর রহমান (৭০)। তিনি গত ১৫ জুলাই হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৭ জুলাই মারা যান
যশোর সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানিয়েছেন, সোমবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টার থেকে পাঠানো ২২৩ নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ৬৭ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। এছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (খুমেক ) ল্যাব থেকে ২ জনের পজেটিভ ফলাফল পাঠানো হয়।
মোট ৬৯ জনের মধ্যে ৩ জন পুরাতর রোগী রয়েছেন। ফলোআপ নমুনা পরীক্ষায় তার পজেটিভ এসেছে। আর ১ জনের নাম যশোরের তালিকায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। অন্য জেলার রোগীর নাম যশোরের তালিকায় ঢুকে যেতে পারে। নতুন ৬৫ জনের যশোর সদর উপজেলায় ৪২ জন, শার্শা উপজেলায় ৫ জন, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৭ জন, চৌগাছা উপজেলায় ২ জন, বাঘারপাড়া উপজেলায় ২ জন, কেশবপুর উপজেলায় ৫ জন ও অভয়নগর উপজেলায় ২ জন।
এদিন নতুন করে ৩২ জনকে করোনামুক্ত ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে সোমবার আরও ১৪০ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য যবিপ্রবির জেনোম সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য উপজেলার মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রন) ডা. এ এন এম নাসিম ফেরদৌস জানান, নতুন করে আক্রান্তদের ৪২ জনের মধ্যে ৫ জনকে অন্যত্র রেফার্ড করা হয়েছে। আর ৮ জনের হদিস মেলানো যায়নি।
তাদের মুঠোফোনের নম্বর বন্ধ রয়েছে। তবে সন্ধান মেলানোর চেষ্টা চলছে। সন্ধান পাওয়া ২৯ জনের মধ্যে সদর উপজেলায় ১৩ শহরে ১৬ জনের বসবাস। ডা. এ এন এম নাসিম ফেরদৌস আরো জানান, সদরে আক্রান্তদের মধ্যে যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুলসহ ৩ জন চিকিৎসক রয়েছেন।
তারা হোমআইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন করে আক্রান্ত ৬৫ জনের মধ্যে যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল ছাড়াও উল্লেখযোগ্যরা হলেন শার্শা উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মঞ্জু, নিজামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও যশোর জেলা পরিষদের সদস্য ইকবাল আহমেদ।
যবিপ্রবির এনএফটি বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য ড. শিরিন নিগার জানিয়েছেন, জেনোম সেন্টারে যশোর জেলার ৬৭ জন ছাড়াও মাগুরা জেলার ৪৭ নমুনা পরীক্ষায় ১৮ জনের শরীরে কোভিডের জীবাণু পাওয়া গেছে। সবমিলিয়ে ২৭০ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৮৫ জনের করোনা পজেটিভ ও ১৮৫ জনের নেগেটিভ ফলাফল এসেছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন মুঠোফোনে জানিয়েছেন, সোমবার পর্যন্ত যশোর জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩৯২ জন। সুস্থ হয়েছেন ৭০১ জন। এছাড়া ২১ জন নারী পুরুষের মৃত্যু হয়েছে।