যশোরে ২ জন চিকিৎসক ও ১ জন আইনজীবীসহ নতুন করে ৭১ জনের কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তালিকায় ১ জন মৃত রোগীর নাম রয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় আক্রান্ত ৩৯ জনের মধ্যে পৌরসভার বাসিন্দা রয়েছেন ২৩ জন। এই নিয়ে শনিবার পর্যন্ত জেলায় করোনা শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ১২শ’ ৯৬ জনে। আক্রান্তদের অর্ধেকের বেশি রোগী সদর উপজেলার।
যশোর সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানিয়েছেন, শনিবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টার থেকে পাঠানো ২৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ৬৮ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। এছাড়া এছাড়া খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (খুমেক ) ল্যাব থেকে
আরো ৪ জনের করোনা শনাক্তের ফলাফল আসে। যবিপ্রবির পাঠানো ফলাফলে ১ জন রোগীর নাম আমাদের তালিকায় নেই। অন্য জেলার রোগীর ফলাফল যশোরের তালিকায় চলে আসতে পারে। নতুন শনাক্ত ৭১ জনের মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ৩৯ জন, শার্শা উপজেলায় ৯ জন, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৯ জন, চৌগাছা উপজেলায় ৫ জন, মণিরামপুর উপজেলায় ১ জন, কেশবপুর উপজেলায় ১ জন ও অভয়নগর উপজেলায় ৭ জন।
পজেটিভ আসা মৃত রোগী হলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা তোফাজ্জেল হোসেন (৭৫)। গত ১৪ জুলাই যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নমনা সংগ্রহ করে ১৫ জুলাই পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছিলো। ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, শনিবার নতুন করে ২৯ জনকে করোনামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আর করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে আরও ২২৩ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য যবিপ্রবির জেনোম সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য উপজেলার মেডিকেল অফিসার ডা. আদনান ইমতিয়াজ জানান, নতুন করে আক্রান্তদের ৩৯ মধ্যে তাদের মধ্যে ৪ জনকে অন্য জেলায় রেফার্ড করা হয়েছে। আর ৫ জনের হদিস মেলানো যায়নি। তাদের মুঠোফোনের নম্বর বন্ধ রয়েছে। তবে সন্ধান মেলানোর চেষ্টা চলছে। সন্ধান পাওয়া ৩০ জন হলেন যশোর শহরের আশ্রমরোড এলাকায় বসবাসকারী যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. গৌতম কুমার ঘোষ (৪২) , ঘোপ সেন্ট্রাল রোড এলাকার বসবাসকারী একই হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুর রশিদ (৩৫), ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের বাসিন্দা (রফিকুল ইসলাম (২৬), একই এলাকার অবসরপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তা ালয়াকত আলী (৬৭), ঘোপ নওয়াপাড়া রোড এলকার ফিরোজ (৫৫) যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান কারারক্ষী দেলোয়ার (৪২), পিলুখান রোডের বাসিন্দা আধুনিক হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জল বিশ্বাস (৪২), আগে থেকেই আক্রান্ত পূর্ব বারান্দীপাড়া এলাকার বাসিন্দা ডা. নুরানী লতিফার শিশু কন্যা ইরা (৩), শ্বশুর সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা মফিজুল ইসলাম (৫৮), শাশুড়ি নাসরিন বেগম (৪৮), পুরাতন কসবা কাজীপাড়া কামরুল ইসলাম (৬৫), আরবপুর মোড়ের তামান্না (২৭), রেলেরোড এলাকার জেসমিন আক্তার (৫৩), মুজিব সড়ক এলাকার মুজিব (৯০), পোস্ট অফিস পাড়ার সোজা উদ্দিন (৬০), সার্কিট হাউজ পাড়ার শারমিন পারভীন (৩০), বেজপাড়ার অ্যাড.স্বপন (৩২), আব্দুল ওহাব (৬৫), আলআমিন (৪৬), বিপাশা হালদার (৫০), সুজন (৩৪), বকচর এলাকার আইয়ুব আলী (৬১), উপশহর সি ব্লকের শাকিল (২১), নওদাগ্রামের ইকবাল (৫৫), তালবাড়িয়া গ্রামের খালেদুর রহমান (৩৮), নতুনহাট গ্রামের আমিরুল হক (৬৫) তার স্ত্রী শাহানারা খাতুন (৫১), বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের ইকবাল (৩৫) ও বাউলিয়া গ্রামের খুরশিদা বেগম (৬০)।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, ১৮ জুলাই পর্যন্ত যশোর জেলায় মোট করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১২৯৬ জন। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ৬৫৮, শার্শা উপজেলায় ১১১ জন, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৬৭ জন, চৌগাছা উপজেলায় ৬৬ জন, বাঘারপাড়া উপজেলায় ২৭ জন, অভয়নগর উপজেলায় ২২৭ জন, মণিরামপুর উপজেলায় ৬৫ জন ও কেশবপুর উপজেলায় ৭৫ জন রয়েছেন। এছাড়া মোট সুস্থ হয়েছেন ৬৫৭ জন। এছাড়া ২০ জন নারী পুরুষের মৃত্যু হয়েছে।
যবিপ্রবির এনএফটি বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য ড. শিরিন নিগার জানিয়েছেন, জেনোম সেন্টারে যশোর জেলার ৬৮ জন ছাড়াও মাগুরা জেলার ৩৯ নমুনা পরীক্ষায় ১১ জন, সাতক্ষীরা জেলার ২৬ নমুনা পরীক্ষায় ৪ জন ও বাগেরহাট জেলার ৬৮ নমুনা পরীক্ষায় করে ১৬ শরীরে কোভিডের জীবাণু পাওয়া গেছে। সবমিলিয়ে ৩৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯৯ জনের করোনা পজিটিভ এবং ২৮৭ জনের নেগেটিভ ফলাফল এসেছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন মুঠোফোনে জানিয়েছেন, এই পর্যন্ত মোট ৭৪৬২ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ফলাফল পেয়েছি ৬০১৩ জনের। সিভিল সার্জন জানান,বর্তমানে সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে সদর উপজেলার। যার বেশির ভাগের পৌরসভার বাসিন্দা। মানুষকে সতর্ক ও সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন তিনি।