যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন যশোর শহরের চাচড়া ডালমিল এলাকার পিয়ার আলীর ছেলে রফিউদ্দিন (৭৫), শংকরপুর এলাকার আবু বক্কারের ছেলে খলিলুর রহমান (৭০) ও মাগুরার শালিখা উপজেলার সীমাখালি এলাকার সাখাওয়াতের ছেলে আফজাল হোসেন (৫৫)। এদিকে, দৈনিক সমাজের কথা পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদকসহ ১৬ জনের কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শুক্রবার নমুনা পরীক্ষার প্রকাশ করা ফলাফলে এই তথ্য প্রকাশ করেছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টার কর্তৃপক্ষ।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আরিফ আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) রাত ২ টা ১০ মিনিটে করোনার করোনার উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হন রফিউদ্দিন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোরে তিনি মারা যান। একই দিন দুপুর ২টা ১০ মিনিটে ভতি হয়েছিলেন খলিলুর রহমান। রাত ৮টা ২০ মিনিটে ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন। আর সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে ভর্তি হয়েছিলেন আফজাল হোসেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গভীর রাতে মারা যান তিনি। আরএমও জানান, মৃত ৩ জনের জ্বর, ঠান্ডা, কাঁশি , শ্বাসকষ্টসহ করোনার সকল উপসর্গ ছিলো। তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। আরএমও আরো জানান, ২৩ মার্চ হাসপাতালে আইসোলেশন ওয়ার্ড তৈরি হওয়ার পর থেকে শুক্রবার পর্যন্ত করোনার উপসর্গ নিয়ে মোট মারা গেছেন ২৯ জন। নমুনা পরীক্ষায় ৭ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে।
যশোর সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানিয়েছেন, শুক্রবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টার থেকে পাঠানো ৫১ নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে ১৬ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়। এরমধ্যে ১ জন পুরাতন রোগী রয়েছেন। তার বাড়ি যশোর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোড এলাকায়। ফলোআপ নমুনা পরীক্ষায় তার পজেটিভ এসেছে। নতুন ১৫ জনের যশোর সদর উপজেলায় ৩ জন, বাঘারপাড়া উপজেলায় ৪ জন, কেশবপুর উপজেলায় ৬ জন ও অভয়নগর উপজেলায় ২ জন। ডা. রেহেনেওয়াজ জানান, করোনায় আক্রান্ত সন্দেহে শুক্রবার আরও ৯৪ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য যবিপ্রবির জেনোম সেন্টারে পাঠানো হয়েছে।
যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রন) ডা. এ এন এম নাসিম ফেরদৌস জানান, সদর উপজেলায় নতুন আক্রান্ত ৩ জনের মধ্যে ১ জন হলেন কাজীপাড়া কাঠালতলার বাসিন্দা দৈনিক সমাজের কথা পত্রিকার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক শামীম চাকলাদার (৫০)। বাকি ২ জন হলেন শহরের ঘোপ জেলরোড এলাকার মোমেনা খাতুন (৬৫) ও ষষ্টিতলা এলাকার শামীম আরা (৬৫)। তারা দুজনই চিকিৎসকের মা। ডা. নাসিম ফেরদৌস আরো জানান, আক্রান্তদের ফলাফল জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা হোমকোয়ারেন্টাইনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সরকারের স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য বলা হয়েছে।
যবিপ্রবির এনএফটি বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য ড. শিরিন নিগার জানিয়েছেন, জেনোম সেন্টারে যশোর জেলার ১৬ জন ছাড়াও মাগুরা জেলার ৫২ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২২ জন ও সাতক্ষীরা জেলার ৪৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৮ জনের শরীরে কোভিডের জীবাণু পাওয়া গেছে। সবমিলিয়ে ১৪৮ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫৬ জনের করোনা পজিটিভ এবং ৯২ জনের নেগেটিভ ফলাফল এসেছে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন মুঠোফোনে জানিয়েছেন, শুক্রবার পর্যন্ত যশোর জেলার মোট করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে ১২৪৬ জন। সুস্থ হয়েছেন ৬২৮ জন। মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ জনে।