যশোরে নতুন করে ৬৮ জন কোভিড-১৯ নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জেনোম সেন্টারে ২৯ জন ও খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (খুমেক) ল্যাবে ৩৯ জনের ফলাফল পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ। তিনি জানান, খুলনার ফলাফল বৃহস্পতিবার রাতে আসার কারণে কোন উপজেলায় কতো জন রয়েছেন তা বাচাই করা সম্ভব হয়নি। যবিপ্রবির শনাক্ত ২৯ জনের মধ্যে চিকিৎসক, সেবিকা,সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য রয়েছেন। এদিকে, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
যশোর সিভিল সার্জন অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথ্য কর্মকর্তা ডা. রেহেনেওয়াজ জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকালে যবিপ্রবির জেনোম সেন্টার থেকে পাঠানো ১১৩ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পাঠানো হয়। এতে ২৯ জনের করোনা পজেটিভ ও ৮৪ জনের নেগেটিভ শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় ২৮ জন ও শার্শা উপজেলায় ১ জন রয়েছেন। এছাড়া রাত সাড়ে টার দিকে খুমেক ল্যাব থেকে আরো ৩৯ জনের করোনা পজেটিভ ফলাফল এসে পৌঁছেছে। ফলাফলগুলো শুক্রবার সকালে বাচাই করার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে কোন উপজেলায় কতো জন শনাক্ত হয়েছে। তবে শনাক্তদের মধ্যে সদর উপজেলার রোগী বেশি রয়েছেন মনে হচ্ছে। ডা. রেহেনেওয়াজ আরো জানান, করোনা আক্রান্ত সন্দেহে বৃহস্পতিবার যশোর জেলার আরও ১শ ৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য যবিপ্রবি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এদিন নতুন করে ৬০ জনের করোনামুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) আরিফ আহমেদ জানান, গত ৯ জুলাই করোনার উপসর্গ নিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ঝিকরগাছা উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের মাতব্বর সরদারের স্ত্রী ফুলসুরাত বেগম (৬০)। তিনি গত ৭ জুলাই করোনার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। আরএমও আরো জানান, এই পর্যন্ত আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনার উপসর্গ নিয়ে মোট মারা গেছেন ২৪ জন। নমুনা পরীক্ষায় ৫ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত হয়েছে।
যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য উপজেলার মেডিকেল অফিসার আদনাদ ডা. নাসিম ফেরদৌস জানান, যবিপ্রবি থেকে পাঠানো নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে নতুন আক্রান্ত ২৮ জনের মধ্যে নিরালা পট্টি এলাকায় বসবাসকারী যশোর মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক (৫৫), রুপদিয়া গ্রামে বসবাসকারী যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের ১ জন সেবিকা (৪৩), একই গ্রামের ১ জন শিক্ষার্থী (১৮), গাড়িখানা রোডে বসবাসকারী পুলিশের ১জন পিএসআই (৪৩) , সার্কিট হাউজ পাড়ায় বসবাসকারী যশোর শিক্ষা বোর্ডের সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের ছেলে (৩১), কাজীপাড়া আমতলার ব্যবসায়ী (৭৫) , তার স্ত্রী (৬২),বেজপাড়া তালতলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হওয়া তাপস সাহার মা (৬৮) ও ছেলে (২৪) ,ষষ্টিতলা পাড়ার পিপি রোডের অবসরপ্রাপ্ত চাকরিজীবী (৭১) ও তার স্ত্রী (৬৫), একই পাড়ার এক নারী (৫০), পুরাতন কসবা লিচু বাগান এলাকার বাসিন্দা পূর্বে আক্রান্ত যশোর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমএলএসএসের স্ত্রী (৩০) ও মেয়ে (১২), সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২ জন এমএলএসএস। এরমধ্যে ১ জনের (৫৬) বাড়ি বাউলিয়া অপরজনের (৪৫), লেবুতলা গ্রামে। এছাড়া যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের ১ জন কারারক্ষী (৪৭)। তিনি জেলখানার কোয়ার্টারে বসবাস করেন। পুলিশ লাইন টালিখোলায় বসবাসকারী ট্রাফিক পুলিশের ১ জন সদস্য (৫৩), যশোর পুলিশ সুপারের পিএ। তিনি বসবাস করেন চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। টালিখোলার বাসিন্দা ১ জন ব্যাংকার (৫৬), ভেকুটিয়া গ্রামে বসবাসকারী যশোরের শুভ্র ডেন্টালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. ইয়াকুব আলীর মোল্লার গাড়িচালক (৪৬),চাচড়া রায়পাড়ার ১ জন গৃহিনী (৩০), নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পাশের বাসিন্দা ১ জন বেসরকারি চাকুরে (২৮) হেবতপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের ১ জন স্বাস্থ্যকর্মী (৩২)। এছাড়া ঘোপ সেন্ট্রাল রোডের হামিদুর (১২) তরিকুল ইসলাম (৬৫) ও আলামিন হোসেনের (২৮) হদিস পাওয়া যায়নি। তাদের ফোন নম্বর বন্ধ ছিলো। স্বাস্থ্য বিভাগ উপজেলা প্রশাসন বৃহস্পতিবার আক্রান্তদের বাড়ি লকডাউন করেছেন। তারা হোমআইসোলেশনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইউসুফ আলী জানান, নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১ জন নারী (৪৫)। তিনি শার্শা উপজেলা এলাকার বাসিন্দা। যবিপ্রবির এনএফটি বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষণ দলের সদস্য ড. শিরিন নিগার জানিয়েছেন, জেনোম সেন্টারে যশোর জেলার ২৯ জন ছাড়াও মাগুরা জেলার ৩৫ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৬ জন বাগেরহাট জেলার ৬৭ জনের নমুনা পরীক্ষায় ২৮ জনও সাতক্ষীরা জেলার ৫৬ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৬ জনের শরীরে কোভিডের জীবাণু পাওয়া গেছে।
সবমিলিয়ে ২৭১ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৭৯ জনের করোনা পজিটিভ এবং ১৯২ জনের নেগেটিভ ফলাফল এসেছে। যশোরের সিভিল সার্জন ডা.শেখ আবু শাহীন জানান, শুক্রবার পর্যন্ত যশোর জেলায় ৮শ’ ৬৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন মোট ৪৩৩ জন। এছাড়া ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।