পাঠ্যবইয়ে ‘শরীফা’ গল্পটির উপস্থাপনে যদি কোনও বিতর্ক বা বিভ্রান্তি হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আনা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তবে দেশে ধর্মকে ব্যবহার করে একটি গোষ্ঠীর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির প্রবণতা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সচিবালয়ে নিজ দফতরে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেন, ‘ব্র্যাকের সেই শিক্ষকের বিষয়টি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করবো, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে… ঘটনা কী ঘটেছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমরা একটি ভিডিও দেখেছি।’
‘শরীফা’ গল্পটি নিয়ে গতবারও বিতর্ক উঠেছিল, এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সেটা এনসিটিবির সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করবো। যদি গল্পটির মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া হয়, কেন হচ্ছে সেটাও খতিয়ে দেখতে হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘তবে আপনারা জানেন যে দেশে একটি গোষ্ঠী বিভিন্ন বিষয়ে ধর্মকে ব্যবহার করে হোক বা ধর্মীয় অনুভূতি হোক, নানা সময়ে অরাজকতা করা বা পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার একটি প্রবণতা তাদের মধ্যে আছে। গত বছরও সেটা ছিল। একটি সংগঠন থেকে কিছু দিন আগে আমার কাছে কিছু সুপারিশ দেওয়া হয়েছিল, কওমি মাদ্রাসার কিছু শিক্ষক এসেছিলেন। সেখানে তারা দাবি করেছেন, এখানে ট্রান্সজেন্ডার শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে—যেটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে। যখন আলোচনা করেছি তখন দেখেছি, শব্দটা ট্রান্সজেন্ডার নয়, শব্দটা থার্ডজেন্ডার। সেটা তো আইনত স্বীকৃত যে তৃতীয় লিঙ্গ, যারা সমাজে হিজড়া নামে পরিচিত। তারা দেশের নাগরিক। তাদের নাগরিক অধিকার রয়েছে। তবে গল্প উপস্থাপনের ক্ষেত্রে যদি এমনভাবে উপস্থাপন হয়ে থাকে, বিভ্রান্তি এবং বিতর্ক সৃষ্টির প্রয়াস থেকে থাকে, তাহলে এ গল্পের উপস্থাপনের পদ্ধতিটা পরিবর্তন করা যায় কিনা—এই বিষয়ে আমরা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করবো।’
তিনি বলেন, ‘একটি জনগোষ্ঠীর প্রতি সহমর্মিতা, তাদের যে নাগরিক অধিকার রয়েছে, সে বিষয়ে সবার সম্মান প্রদর্শন, সে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে উপস্থাপনের যদি সুযোগ থাকে, সেটা বিশেষজ্ঞরা আলোচনা করে মতামত দেবেন। এটা যেহেতু বিশেষায়িত বিষয় সে কারণে আমরা মন্ত্রী পর্যায়ে, পলিসি লেভেলে মন্তব্য করতে চাই না। তৃতীয় লিঙ্গ রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত, আন্তর্জাতিক কমিটমেন্টেরও একটা অংশ। তবে উপস্থাপনে যদি বিভ্রান্তি ও বিতর্ক থাকে, সেক্ষেত্রে কিছুটা পরিবর্তন আনা হতে পারে, যদি বিশেষজ্ঞরা প্রয়োজন মনে করেন।’
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জানুয়ারি রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে ‘বর্তমান কারিকুলামে নতুন পাঠ্যপুস্তক: বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে জাতীয় শিক্ষাক্রমের সপ্তম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের দুটি পৃষ্ঠা ছিড়ে আলোচনায় আসেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাব উৎস। এরপর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক শুরু হয়।
ওই সেমিনারে আসিফ মাহতাব অভিযোগ করেন—সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে থাকা ‘ট্রান্সজেন্ডার’ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ‘মগজধোলাই’ করা হচ্ছে। এ সময় তিনি ওই বইয়ের ‘মানুষে মানুষে সাদৃশ্য ও ভিন্নতা’ অধ্যায়ের ‘শরীফার গল্প’ অংশের পৃষ্ঠা ছিড়ে ফেলেন।
এ ঘটনায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় খণ্ডকালীন শিক্ষক আসিফ মাহতাবকে বরখাস্ত করে। তাকে চাকরি থেকে বরখাস্তের প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) আসিফ মাহতাব উৎসের অনুসারীরা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সমাবেশ আহ্বান করেন।
বিতর্কের অবসান ঘটাতে মঙ্গলবার শিক্ষামন্ত্রী এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাছে শরীফা গল্পের বিষয়ে ব্যাখ্যা তুলে ধরেন।