আন্তর্জাতিক ডেস্ক
সোয়া দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেওয়া ভাষণের প্রথম দেড় ঘণ্টায় মণিপুরের নাম উচ্চারণ না করায় লোকসভা থেকে ওয়াকআউট করেন বিরোধী দলের সদস্যরা। এরপরই নরেন্দ্র মোদি মণিপুরের পরিস্থিতি ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দেন। তবে আগে জানিয়ে দিয়েছেন, মণিপুরের আজকের এই অবস্থার জন্য একমাত্র দায়ী কংগ্রেস। কারণ, তারা গোটা উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে কখনো মূল ভারতের অঙ্গ মনে করেনি।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘মণিপুরের জনগণকে আমি আশ্বস্ত করছি, দ্রুত সেখানকার হাল ফিরবে।’ সে জন্য সস্তার রাজনীতি থেকে সবাইকে দূরে থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা ৮ মিনিটে ভাষণ দেওয়া শুরু করেন নরেন্দ্র মোদি। সন্ধ্যা ৬টা ৩৯ মিনিট পর্যন্ত তিনি ‘মণিপুর’ শব্দটি মুখে আনেননি। এই দেড় ঘণ্টা ধরে তিনি বিরোধীদের সমালোচনার পাশাপাশি বিজেপি সরকারের সাফল্যের ফিরিস্তি দেন।
বিরোধী জোট কীভাবে নতুন নামকরণের মধ্য দিয়ে পুনর্জন্ম পেতে সচেষ্ট, কীভাবে ১০ বছর ধরে তাঁর সরকার প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে চলেছে, বিশ্বের পঞ্চম অর্থনীতিতে উঠে এসেছে এবং আগামী পাঁচ বছরে পৃথিবীর তৃতীয় অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে পরিচিত পাবে তা জানান। কীভাবে তাঁর সরকার দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করেছে, গরিবের উন্নতি করেছে, অবকাঠামো নির্মাণে গতি এনেছে, সাড়ে ১৩ কোটি নাগরিককে দারিদ্রসীমার বাইরে এনেছে এবং দেশকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলার পাশাপাশি আত্মনির্ভর করেছে ও বিশ্বের সমীহ আদায় করেছে তা সবিস্তার জানান।
বিরোধীরা ‘মণিপুর, মণিপুর’ বলে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও মোদি মণিপুরের নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। দেড় ঘণ্টা পর বিরক্ত বিরোধীরা ওয়াকআউট করলে প্রধানমন্ত্রী মণিপুর প্রসঙ্গে কথা বলেন। কংগ্রেস কীভাবে মণিপুরসহ গোটা উত্তর–পূর্বাঞ্চলকে উপেক্ষা করেছে সেই খতিয়ান দেন। তিনি বলেন, কংগ্রেস আমলে এই রাজ্য কখনো তার প্রাপ্যটুকু পায়নি। কংগ্রেস সব সময় উগ্রপন্থীদের ইশারা মতো শাসন করে গিয়েছে। যেদিন থেকে তারা রাজ্য শাসন শুরু করেছেন, সেদিন থেকে মণিপুর উন্নতির সোপানে চেপে বসেছে।
মণিপুরবাসীদের আশ্বস্ত করে মোদি বলেন, গোটা দেশ তাঁদের সঙ্গে আছে। অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দিতে কেন্দ্রীয় সরকার বদ্ধপরিকর। তিনি আশ্বাস দিয়ে বলেন, মণিপুর আবার ঠিক বিকাশের পথে এসে দাঁড়াবে।
আজ সরকারকে চূড়ান্ত বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেন লোকসভার বিরোধী নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ভারত ছোড়ো স্লোগান আমাদেরও। আমরা বলি সাম্প্রদায়িকতা ভারত ছোড়ো, মেরুকরণের রাজনীতি ভারত ছোড়ো, গৈরিকীকরণ ভারত ছোড়ো।’ নরেন্দ্র মোদির নাম উল্লেখ না করে বুঝিয়ে দেন, তিনি অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র।
অধীর বলেন, অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের সামনে দ্রৌপদীর বস্ত্র হরণ হয়েছিল। আজকের অন্ধ রাজার সামনে মণিপুরের মা–বোনদের বস্ত্র হরণ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নাম উচ্চারণ না করে তিনি তাঁকে অর্থনৈতিক অপরাধী পলাতক নীরব মোদির সঙ্গেও তুলনা করেন। তিনি বলেন, মণিপুর ঘুরে মনে হয়েছে নীরব মোদি দেশ ছেড়ে পালাননি। তিনি দেশেই রয়েছেন। নীরব মোদি হয়ে।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শেষ হলে অধীর রঞ্জন চৌধুরীর বিরুদ্ধে সংসদীয় মন্ত্রী একটি প্রস্তাব আনেন। দুর্ব্যবহার ও অসংসদীয় শব্দ প্রয়োগের জন্য তাঁকে সভা থেকে বরখাস্ত করা হয়।
এত দিন ধরে সভায় না আসা প্রধানমন্ত্রী অধীরের ভাষণের সময় লোকসভায় প্রবেশ করেন। এ সময় তাঁর উদ্দেশে অধীর বলেন, ‘অনাস্থা প্রস্তাবের শক্তি কী প্রবল তা বোঝা গেল। এই প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীকে বাধ্য করল সভাকক্ষে আসতে।’ অধীরের ভাষণের পুরোটা গম্ভীর মুখে শোনেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর উপস্থিতিতেই প্রথম প্রতিবাদ জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এরপর সংসদীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশিসহ সরকারপক্ষের সদস্যরা।
স্পিকার ওম বিড়লার ওপর তাঁরা চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন অধীরের ভাষণ থেকে প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে আপত্তিকর অংশ বাদ দেওয়ার জন্য। অধীর যদিও বলতে থাকেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর নাম উচ্চারণ করেননি।
তৃণমূল কংগ্রেসের সদস্য মহুয়া মৈত্রও তাঁর ভাষণে সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন। মহুয়া বিরোধী জোটের হয়ে মণিপুর গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘বিজেপি সব সময় বলে, মোদি না থাকলে আছেনটা কে? গোটা মণিপুর আজ বলছে, মোদিকে বাদ দিয়ে অন্য যে কেউ।’
মোদির আড়াই ঘণ্টার ভাষণের পুরোটাই ছিল কংগ্রেসের সমালোচনায় মুখর। সেই সঙ্গে অন্য বিরোধীদেরও কটাক্ষ করেন ‘ইন্ডিয়া’ জোটে শামিল হওয়ার জন্য। তিনি বলেন, কংগ্রেস যেমন ডুবেছে, অন্যরাও তেমনই ডুববে। তবে তিনি মনে করিয়ে দিতে ভোলেননি, ২০১৮ সালে অনাস্থা প্রস্তাব আনার সময় তিনি বলেছিলেন, ২০২৩ সালেও ওই প্রস্তাব আনার সুযোগ পাবে। সেই ভবিষ্যদ্বাণী সফল হয়েছে। ২০২৮ সালেও অনাস্থা প্রস্তাব আনার সুযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ২০২৪ সালে আরও বেশি সমর্থন পেয়ে তাঁরাই সরকার গড়বেন।
বা বু ম / অ জি