বরিশাল সংবাদদাতা
ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে নোঙর করে রাখা তেলবাহী সাগর নন্দিনি-২ জাহাজে দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণের আট ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও এখনো আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি উদ্ধারকারী বাহিনী। ফায়ার সার্ভিস, কোস্ট গার্ড, বিআইডব্লিউটিএর ১১টি ইউনিট আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েও নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেনি এ অগ্নিকাণ্ড।
ইতোমধ্যে উদ্ধার অভিযানে নৌ-বাহিনীর কন্টিনজেন্ট মোতায়েন করা হয়েছে। বাহিনীটির উদ্ধারকারী জাহাজ ‘ডলফিন’ বরিশাল থেকে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। সংবাদমাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে আইএসপিআর।
কোস্ট গার্ড দক্ষিণ জোনের অপারেশন প্রধান লেফটেন্যান্ট সাফায়েত জানান, যৌথভাবে অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। বিস্ফোরণের পর জাহাজে থাকা জ্বালানি তেলে আগুন ধরে যাওয়ায় সহজেই তা নিভানো সম্ভব হচ্ছে না। জাহাজের ভিতরে কেউ আছেন কি না তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা চেষ্টা করছি আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার।
এ কর্মকর্তা বলেন, দ্বিতীয় দফায় কিভাবে আগুনের সূত্রপাত হলো তা এখনি বলা যাচ্ছে না। যেহেতু সাগর নন্দিনি-২ জাহাজ থেকে সাগর নন্দিনি-৪ জাহাজে পেট্রোল সরিয়ে নেওয়া হচ্ছিল। হতে পারে কোনো বৈদ্যুতিক সার্কিটের স্ফুলিঙ্গ পেট্রোলের সঙ্গে মিশে বিস্ফোরণের সূত্রপাত করেছে।
এদিকে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাহাজের বাবুর্চি কাইয়ুম দাবি করেন, সাগর নন্দিনি-২ থেকে সাগর নন্দিনি-৪ জাহাজে তেল স্থানান্তরের সময় দীর্ঘক্ষণ ধরে সাব-মার্সিবল পাম্পটি চালানো হয়েছিল। ফলে পাম্প বিস্ফোরণ হয়ে তা পেট্রোলে ধরে যায়। এরপরই দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে আগুন।
তিনি বলেন, শনিবার বিস্ফোরণ নিয়ন্ত্রণে আনার পর রোববার সাব-মার্সিবল দিয়ে পেট্রোল নেওয়া শুরু হয়। এছাড়া সোমবার সকাল থেকে ডিজেল নেওয়া হচ্ছিল। তেল উত্তোলনে পাম্প ব্যবহারের নিয়ম হচ্ছে ৩/৪ ঘণ্টা চালানোর পর তা থামিয়ে সেটিকে ঠান্ডা করানো। কিন্তু জাহাজে আজ তা করা হয়নি। একটি পাম্প ৭ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলেছে।
তিনি আরও বলেন, সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমি জাহাজের পিছনে ছিলাম। পাম্প চলছিল। হঠাৎ পাম্প বিস্ফোরণের শব্দ পাই। এরপরই মুহূর্তে আগুন ছড়িয়ে যায় পুরো জাহাজে। আমরা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রাণে রক্ষা পাই।
ঝালকাঠি সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহিতুল জানিয়েছেন, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একবার দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজটিতে কিভাবে দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণ হলো তা অতি গুরুত্বসহকারে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
নৌ-পুলিশ বরিশাল অঞ্চলের পুলিশ সুপার কফিল উদ্দিন জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থলে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নৌ-পুলিশ কাজ করছে। ইতোমধ্যে যারা আহত হয়েছেন তাদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরে পুরো বিষয় জানানো যাবে।
এর আগে শনিবার (১ জুলাই) সুগন্ধা নদীতে প্রথম দফায় বিস্ফোরণ হয় সাগর নন্দিনি-২ তেলের জাহাজে। এতে ৪ জন নিহত এবং ৫ জন দগ্ধ হন। এর উদ্ধার অভিযান শেষ করা হয় সোমবার। অভিযান শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয় দফায় সন্ধ্যা ৬টার দিকে আবার বিস্ফোরণ হয় জাহাজটিতে। প্রথম দফায় ইঞ্জিন রুমে কার্বন মনোক্সাইডের উপস্থিতির কারণে এবং দ্বিতীয় দফায় পাম্প বিস্ফোরণে এ ঘটনা ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দ্বিতীয় দফার বিস্ফোরণে ১২ পুলিশ সদস্যসহ মোট ১৪ জন আহত হয়েছেন।
উল্লেখ্য, সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটি ২০২২ সালের ২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর থেকে তেল নিয়ে চাঁদপুরে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডিপোতে যাওয়ার পথে ভোলার তুলাতুলি কাঠিরমাথা এলাকায় ডুবে গিয়েছিল। ২০২১ সালের ১২ নভেম্বর সুগন্ধা নদীর একই স্থানে একই কোম্পানির সাগর নন্দিনী-৩ জাহাজটিতেও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই বিস্ফোরণে পাঁচজন নিহত হয়েছিলেন।
বা বু ম / এস আর