সোহেল রানা, ঢাকা :
পুলিশের ডিআইজি ও তাঁর পিএস এবং পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে প্রতারক চক্রের প্রধান সহ এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এসময় চক্রের প্রধানের কাছ থেকে অপরাধ প্রতিদিন নামে একটি ভুয়া সাংবাদিক পরিচয় পত্র ও প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত দুটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
সোমবার (১৯ জুন) দুপুর সাড়ে ১২ টায় ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মোবাশশিরা হাবীব খান, পিপিএম-সেবা।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ থানার নগর ভেলা গ্রামের খোরশেদ আলমের ছেলে ও চক্রের প্রধান দ্বীন ইসলাম ওরফে শাওন (২৬) এবং তার সহযোগী একই জেলার কেতুন এলাকার মো: হানিফ সরকারের ছেলে হৃদয় আহমেদ (৩০)। তারা যৌথভাবে দীর্ঘদিন যাবত এই পরিচয়ে সাভার-আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন স্থানে মাদক সরবরাহ করে আসছিল।
গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, প্রতারক চক্রের প্রধান দ্বীন ইসলাম ওরফে শাওন ঢাকার সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। সে সাভার থানা এলাকায় মাদক ব্যবসা পরিচালনা করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে নিজেকে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে পরিচয় দিত। নিজের পরিচয়কে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সে তার নিজের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির সরকারি মোবাইল নম্বরে ফরওয়ার্ড করে রাখে। কেউ তাকে ফোন দিলে সেই ফোনকলটি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির সরকারি নম্বরে চলে যায়। এভাবে সে বিভিন্ন সাধারণ ব্যক্তি ও সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাছে নিজেকে ডিআইজি পরিচয় দিয়ে আর্থিক সুবিধা নিয়ে আসছিল।
গত ১৫ জুন সকালে সাভার মডেল থানাধীন থানাস্ট্যান্ড এলাকায় এক ব্যবসায়ীকে একইভাবে নিজেকে ডিআইজি পরিচয় দিয়ে মোটা অংকের টাকা আত্মসাৎ করে। এ ঘটনা সাভার মডেল থানা পুলিশের মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবগত হয়।
পরে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজির দেহরক্ষী ও পুলিশ সদস্য মো. সোহানুর রহমান বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় (মামলা নং-৬৬) দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর প্রতারক চক্রের প্রধানসহ অপরাধীদের ধরতে মাঠে নামে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে প্রতারক চক্রের প্রধান দ্বীন ইসলাম ওরফে শাওন (২৬) ও তার সহযোগী হৃদয় আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গোয়েন্দা পুলিশ আরও জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চক্রের প্রধান দ্বীন ইসলাম ওরফে শাওন ও তার সহযোগী হৃদয় আহমেদ দীর্ঘদিন যাবত সাভার-আশুলিয়া, ধামরাই ও গাজীপুর সহ আশপাশের এলাকায় মাদক ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছেন। দ্বীন ইসলাম নিজেকে ডিআইজি পরিচয় দিয়ে মানুষের সঙ্গে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করত। তারা বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ফোন দিয়েও এমন প্রতারণা করে আসছিল। এদের মধ্যে চক্রের প্রধান দ্বীন ইসলাম ওরফে শাওনের বিরুদ্ধে গাজীপুরের কালিগঞ্জ থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ও প্রতারণার অভিযোগে ২ টি ও তার সহযোগী হৃদয় আহমেদের বিরুদ্ধে মতিঝিল ও সবুজবাগ থানায় পৃথক ২ টি মামলা রয়েছে। আদালত থেকে সেই মামলায় জামিনে এসে পুনরায় ডিআইজির পরিচয় ব্যাবহার করে মাদক ব্যবসা ও প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি। এ ঘটনার সঙ্গে আরও কেউ জড়িত আছে কি না সেই বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ বিপ্লব, উপ-পরিদর্শক (এস আই) অনোরার হোসেন সহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বা বু ম/ সুমন রায়