1. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  2. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  3. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২০ পূর্বাহ্ন

আধুনিক ৪৫০টি মৎস্যজীবী গ্রাম হচ্ছে : প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

  • সময় : রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩
  • ৯২

নিজস্ব প্রতিবেদক


বাংলাদেশের মৎস্য খাতে অভাবনীয় বিপ্লব হয়েছে মন্তব্য করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, মৎস্য খাতকে আরও যুগোপযোগী করতে সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট চলছে। এ প্রকল্পের আওতায় দেশে ১০০টি মডেল ভিলেজ ও ৪৫০টি আধুনিক মৎস্যজীবী গ্রাম উন্নয়ন করা হচ্ছে। পাশাপাশি মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির বাজার সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণের জন্য মান নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গ্রামীণ মৎস্য চাষি ও জেলেদের তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী জেলে নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র, স্মার্টকার্ড প্রদান এবং ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৫ হাজার মৎস্যজীবীকে ডিজিটাল আইডি কার্ড এবং এক হাজার মৎস্যজীবীকে স্মার্ট আইডি কার্ড দেওয়া হয়েছে।

রোববার (১১ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে ‍‘সুনীল অর্থনীতি সুফল অর্জনে সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট’ নিয়ে দেশের স্বনামধন্য সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী। আলোচনায় দেশের গণমাধ্যমে কর্মরত সম্পাদক ও সিনিয়র সাংবাদিকরা অংশ নেন।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, আমরা মৎস্যজীবীদের স্মার্টকার্ড দিচ্ছি। এতে তিনি ভারত বা মিয়ানমার যেখানে মাছ ধরতে যাক, কোনো সমস্যা হবে না। কোথাও তাকে ধরলে তিনি কার্ড দেখালেই ছেড়ে দেবে। আগে যেটা হতো, ভারত বা মিয়ানমার অংশে মৎস্যজীবী ধরা পড়লে তাকে কোর্টে চালান করে তার ট্রলার রেখে দিত। এতে তিনি নানা হয়রানির মধ্যে পড়তেন।

তিনি বলেন, মৎস্য আহরণ ও বিতরণ বাড়ানোর জন্য দেশীয় ও বিদেশি প্রতিষ্ঠান দিয়ে নিয়মিত সার্ভে (সমীক্ষা) করাচ্ছি। কতটুকু মাছ আছে, ভবিষ্যতে কোন কোন মাছ নিয়ে গবেষণো করা যায় তা নিয়মিত দেখা হচ্ছে। একইসঙ্গে বিলুপ্ত ৩২টি দেশীয় মাছ ফিরিয়ে আনা হয়েছে, যা নিয়মিত চলমান। এসব কার্যক্রমের ফলে একসময়ের ইলিশের আকাল দেশ এখন ইলিশ উৎপাদনে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে।

মন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে শুঁটকি পল্লী বানানো হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এই পল্লীটি হবে শতভাগ আধুনিক। এতদিন একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শুঁটকি তৈরি হতো। এখন মাছ আহরণ থেকে শুরু করে একজন কাস্টমারের হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত হাতের কোনো কাজ থাকবে না। অর্থাৎ মৎস্য খাতকে পুরোপুরি আধুনিকায়ন করার জন্য যা যা করার তাই করা হচ্ছে।

শ ম রেজাউল করিম জানান, আগামী ১৯-২১ অক্টোবর ঢাকায় আন্তর্জাতিক একটি মৎস্য সম্মেলন হবে। সেখানে ২২-২৩ দেশের ফিশারিজ এক্সপার্টরা আসবেন। তারা মৎস্য চাষ, আহরণ, বিপণন নিয়ে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবে। তাদের সেই অভিজ্ঞতা আমরা নেব।

মাছকে আধুনিক খাবারের সঙ্গে কীভাবে সমন্বয় করা যায় তা নিয়ে কাজ করছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, গতানুগতিক মাছ বাচ্চারা খেতে চায় না, কিন্তু সেই মাছকে যদি চিপস বা ফ্রাই করে দেন তাহলে খায়। তার মানে অন্য পদ্ধতিতে মাছ খাওয়া যায়। শরীরে আমিষ, প্রোটিনসহ অন্যান্য যেসব জিনিস প্রয়োজন তা আমি অন্যভাবে দিচ্ছি। মৎস্য খাতকে আধুনিক করার জন্য অতীতে কোনো পরিকল্পনা ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা অনুযায়ী সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্টটি নেওয়া হয়েছে। কোন মাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে, কোন মাছ কম গতিতে বাড়ে– এসব নিয়ে এ প্রকল্পের আওতায় গবেষণা চলছে।

ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি উৎপাদন করা হলে অপচয় ও দুর্নীতি অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় মৎস্যজীবীদের অফেরতযোগ্য হিসেবে প্রণোদনা দেওয়া হবে। একজনের হাতে প্রণোদনের টাকা দিলে নানা অপচয়-দুর্নীতি হতে পারে। তাই কয়েকজন মৎস্যজীবীকে একত্রিত করে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে অনুদান দিলে সেখানে দুর্নীতি কমবে, স্বচ্ছতা বাড়বে।

শ ম রেজাউল করিম বলেন, এই প্রজেক্ট মনিটরিং, বাস্তবায়ন সব কিছু দেখভাল করতে জেলা-উপজেলা মৎস্য অফিসার, মন্ত্রী, সচিব, প্রজেক্ট অফিসারসহ সবাই সক্রিয়। এছাড়াও মনিটরিং জোরদার করতে অস্থায়ী ভিত্তিতে লোক নিয়োগ দিয়েছি।

মন্ত্রী বলেন, অতীতে মাছের ভেতরে নানা ধরনের অপকর্ম হয়েছে। মাছে ইনজেকশন বা প্লেট দিয়ে নানা কেমিক্যাল ঢুকানো হতো। এজন্য অত্যাধুনিক ল্যাব এনেছি। এখন উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন পর্যন্ত সব কিছুতে হাতের কোনো ছোঁয়া থাকবে না। আন্তর্জাতিক ক্রেতাও এতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে।

অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে প্রকল্প পরিচালক ড. মো. আব্দুল আলীম জানান, সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্পের আওতায় দেশের উপকূলীয় ১৬টি জেলার ৭৫টি উপজেলা এবং ১৫০টি ইউনিয়নে মৎস্যজীবীদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা, মডেল জেলে গ্রাম নির্মাণসহ সমুদ্রে নিয়মিত মনিটরিং করার কাজ হচ্ছে। বিশ্বব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের সহায়তায় প্রকল্পটি ২০২৩ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও প্রকল্পটি ২০২৭ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।

তিনি জানান, এই প্রকল্পের আওতায় উপকূলীয় ৪৫০টি আধুনিক মৎস্যজীবী গ্রামে কমিউনিটি সেভিংস গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ১০০টি মডেল জেলে গ্রাম প্রতিষ্ঠা করা এবং এর মধ্যে থেকে ৬০ শতাংশ সুবিধাভোগীকে অর্থ সহায়তা দেওয়া চলমান রয়েছে। ১০০টি মডেল জেলে গ্রামে ফিশারিজ ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহায়তা করা, ১৮ হাজার যুবক-যুবতীকে ভোকেশনাল ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া, ১০০টি প্রডিউসার গ্রুপ তৈরি এবং নিবন্ধন করানো, ১০টি ইউথ ফেস্টিভাল প্রোগ্রাম ও ছয়টি জব ফেয়ার করা, ৪৫টি উপজেলা ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এসব কাজ বাস্তবায়ন হলে এ প্রকল্পের আওতায় সর্বমোট ৫৪ হাজার জেলে সরাসরি সুবিধা পাবে।

প্রকল্প পরিচালক বলেন, বাংলাদেশে কয়েকশ প্রজাতির মাছ যেমন– শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া, অক্টোপাস, হাঙ্গরসহ বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী রয়েছে। কিন্তু এসব মাছ হারিয়ে যেতে বসেছিল। নানা পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের শীর্ষ স্থানীয় মৎস্য উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে অন্যতম। বিভিন্ন প্রজাতির মাছের উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশ মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বিশ্বে ২য় স্থান অর্জন করেছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মৎস্য অনুবিভাগ) মো. আব্দুল কাইয়ূম বলেন, গভীর সমুদ্রে আমাদের নানা সীমাবদ্ধতা ছিল। সেটা কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। ২০৩০ সালে এ খাত থেকে ২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার উপার্জন করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ টেলিভিশনের জাহিদুল ইসলাম বলেন, আজ যে ব্লু ইকোনমির কথা বলা হচ্ছে, বিশ্বের অনেক দেশ অনেক আগেই এ কাজ শেষ করেছে। তারপরও এই উদ্যোগের জন্য বাংলাদেশকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে আমাদের দেশে যে প্র্যাকটিস হয় সেখানে থেকে এই প্রকল্প কতটুকু মুক্ত থাকতে পারবে তার ওপর নির্ভর করবে প্রকল্পের সফলতা।

তিনি বলেন, ১৬৮ ধরনের মাছ আছে কিন্তু আমরা হয়ত ১০ শতাংশ মাছের নাম জানি। বাকি মাছ রহস্যের মধ্যে রয়ে গেছে। এগুলো উদ্ভাবন করার চেষ্টা চালাতে হবে। মাছ কিন্তু অবধারিত সম্পদ না। এই সম্পদ একসময় শেষ হয়ে যাবে। তাই বিকল্প মৎস্য খোঁজা ও উৎপাদনের প্রতি নজর দিতে হবে। মাছ উৎপাদনের বড় বাধা জলবায়ু পরিবর্তন। এর পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে কীভাবে বিষমুক্ত মাছ উৎপাদন করা যায় সেদিকে নজর দিতে হবে।

নাগরিক টিভির বার্তা সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বাংলাদেশের পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, পানি দূষিত হচ্ছে। এর মধ্যে কীভাবে বিষমুক্ত মাছ উৎপাদন করা যায় তার দিকে বেশি নজর দেওয়ার সময় এসেছে।

অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সচিব ড. নাহিদ রশীদ, প্রকল্প এবং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বা বু ম / এস আর

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪