আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
যুক্তরাষ্ট্রে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগে মিনিয়াপোলিস শহরে শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার বিচার শুরু হয়েছে। টানা কয়েক ঘণ্টা চলা বিচারিক শুনানিতে পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক শভিনের আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন ফ্লয়েডের মৃত্যু নিয়ে। মাদকগ্রহণ করায় আগে থেকেই তার অবস্থা সংকটাপন্ন ছিল বলে দাবি করা হয়। তবে এ অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন প্রসিকিউটর। বলছেন, ৯ মিনিট ২৯ সেকেন্ড ঘাড়ে হাঁটু চেপে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আর ফ্লয়েডের পরিবারের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের সর্বোচ্চ বিচার চেয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুরো শুনানি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ২০২০ সালের মে মাসে কৃষ্ণাঙ্গ যুবক জর্জ ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগে মিনিয়াপোলিস শহরে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তার বিচার শুরু হয়েছে। সোমবার থেকে শুরু হওয়া শুনানিতে প্রথমেই খতিয়ে দেখা হয়, ফ্লয়েডের মৃত্যুর কারণ। যাতে ফ্লয়েড ও পুলিশ- দু’পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য ছিল পুরোপুরি দু’রকম। এই বিচার টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
যে ১৪ জন জুরি বিচারে অংশ নেন তাদের পরিচয় গোপন রাখা হয়। ১৪ জুরির সবাই যদি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে আসেন, তবেই কেবল পুলিশ কর্মকর্তাকে দোষী বলে রায় দেয়া যাবে। আদালতে যখন ভিডিওটি দেখানো হয়, তখন ডেরেক গ্রে স্যুট ও নীল টাই পরে আসামিপক্ষের টেবিলে বসে ছিলেন।
পুলিশ কর্মকর্তা ডেরেক হাঁটু দিয়ে জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড় চেপে প্রায় ৯ মিনিট ধরে বসে ছিলেন, গত বছর এরকম একটি ভিডিও যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। এই ঘটনায় যে চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, ৪৫ বছর বয়স্ক ডেরেক তাদের মধ্যে প্রধান আসামি। ওই পুলিশ কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে আনা হত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার আইনজীবী তুলে ধরেছেন, মাদকাসক্ত থাকার কারণেই মৃত্যু হয়েছে ফ্লয়েডের।
তবে প্রসিকিউটরের বক্তব্য হলো, মাদক নয়, পুলিশি নির্যাতনই দায়ী ফ্লয়েডের মৃত্যুর জন্য।
বাদী পক্ষের কৌশুলি জেরি ব্লাকওয়েল বলেন, ৪৪ বছর বয়সী ডেরেক পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে তার ব্যাজের সন্মান রক্ষা করেননি। কারণ তিনি জর্জ ফ্লয়েডের ওপর মাত্রাতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছেন, অযৌক্তিক বল প্রয়োগ করেছেন। তিনি তার হাঁটু দিয়ে জর্জ ফ্লয়েডের ঘাড় এবং পিঠ চেপে ধরে রেখেছিলেন তার শেষ নিঃশ্বাসটি বেরিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত।
ইতোমধ্যে অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে বাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। দোষী সাব্যস্ত হলে এই মামলায় তার ৪০ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে। পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-এমনটাই জানিয়েছেন হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি।
বিচার শুরুর আগে মিনিয়াপোলিস শহরে ফ্লয়েডের পরিবারের সদস্যরা প্রার্থনায় অংশ নেন। পরে তার ভাই বলেন, এই মামলায় অপরাধীদের দোষী সাব্যস্ত করতে হবে। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে অবশ্য ফ্লয়েডের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ দুই কোটি ৭০ লাখ ডলার দেয়ার কথা জানায় মিনিয়াপোলিস শহর কর্তৃপক্ষ।
ফ্লয়েডের ভাই টেরেন্স ফ্লয়েড বলেন, আমরা ঈশ্বরপ্রেমী মানুষ, গির্জায় যাই নিয়মিত। কাজেই শেষপর্যন্ত এই কথাটাই বলতে চাই কর্তৃপক্ষের কাছে ন্যায়বিচার যেন পাই।
জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে গত বছর ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনের শুরু হয়। বর্ণবাদ বিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।