আনোয়ার সাদত জাহাঙ্গীর,ময়মনসিংহ:
প্রকৃতির লাল-সবুজ ফসলের মাঠে রঙিন লালশাক আর সরিষা রোপণ করে পরম মমতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ও স্মৃতিসৌধ এঁকেছেন ঈশ্বরগঞ্জের কৃষক আব্দুল কাদির। বঙ্গবন্ধুর ছবির চারপাশে জাতীয় পতাকা, জাতীয় ফুল শাপলা আর নৌকার ছবি বাড়িয়েছে কৃষকের মাঠে সৌন্দর্যের মাত্রা। লালশাক আর সরিষার চারাগুলো বড় হচ্ছে আর স্পষ্ট ও নান্দনিক হয়ে উঠছে বাংলাদেশের স্থপতির অবয়ব। কৃষক আব্দুল কাদির জানান, বঙ্গবন্ধুর প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা থেকেই তিনি ফসলের এমন শিল্পকর্ম একেছেন। কৃষি জমিনে পরম ভালোবাসায় বেড়ে ওঠা শষ্যতেই হৃদয়খচিত ভালোবাসার বহিঃ প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তিনি জানান, মুজিব বর্ষ ও বিজয়ের মাস ডিসেম্বর উপলক্ষে ফসলের মাঠে নিজ জমিতে ক্যানভাসে একেছেন অভাবনীয় এক শিল্পকর্ম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি ছাড়াও এই জমিতে একটি স্মৃতিসৌধ, জাতীয় ফুল শাপলা ও আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতিক নৌকা। বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার এ অসামান্য ভালবাসার স্বীকৃতি স্বরূপ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে পেলেন সম্মাননা। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু নিজে কৃষক আব্দুল কাদিরের বাড়ীতে গিয়ে ১৯ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মাননা প্রদান করেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান স্বপন,যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম আজিম,সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম মাহবুবুল হাসান মাহবুব,স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মনি,মহিলা সম্পাদক আরজুনা কবির।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের পাড়া খালবলা গ্রামে কৃষক আব্দুল কাদির। আব্দুল কাদির কৃষক মো. তারা মিয়ার মেঝ ছেলে। কৃষক আব্দুল কাদিরের স্ত্রীর নাম মকসুদা আক্তার। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক ৪১ বছর বয়সী আব্দুল কাদির পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় নিজেদের জমিতে কাজ শুরু করেন। পরে আর পড়ালেখা হয়নি। মাঠেই দিন-রাত পরিশ্রম করে সোনার ফসল ফলান তিনি। কৃষক আব্দুল কাদির তাঁর ছবি আঁকার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন সবজি ফসল লাল শাঁক ও সরিষা। তিনি ৩৩ শতক জমিতে তুলে ধরেছেন বাংলা ও বাঙালির অসামান্য প্রতিচ্ছবি। ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে প্রশাসনসহ সর্বত্র। আব্দুল কাদিরের জমির ওই নান্দনিক দৃশ্য্য দেখার জন্য প্রতি;িন শতশত মানুষ ভিড় করছেন। এলাকাবাসীও খুশি এ দৃশ্য দেখে।
কৃষক আব্দুল কাদির আরো বলেন,আমি গরীব মানুষ। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি। কিন্তু এ ভালোবাসা জানানোর কোন সুযোগ পাই না। আমার কর্মক্ষেত্র আর ভালোবাসার স্থান ফসলের ক্ষেতেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ ঘটিয়েছি। তিনি বলেন, বছরের অন্য সময় জমি চাষ করে আর্থিক লাভবান হন। কিন্তু জাতির পিতার চেতনা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে ভিন্ন কিছু করেছি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জুবের আলম কবীর রূপক বলেন,সত্যিই আমরা কাদিরের জন্য গর্ব বোধ করছি। এ রকম কাজে এলাকাবাসীও সহযোগিতা করছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি কৃষক আব্দুল কাদিরের এই ভালোবাসা সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করেছে। কাদিরের এই শৈল্পিক সৌন্দর্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন। তার কাজে কৃষি বিভাগ গর্বিত। আমি কৃষক কাদিরকে যেন বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কারে ভূষিত করা হয় সে জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে আবেদন করবো।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন নিজেও কৃষক কাদিরের ফসলের মাঠ পরিদর্শন কওে মুগ্ধ হয়েছেন। তিনি বলেন, মৌলবাদীদের বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের প্রতি অবমাননার প্রতিবাদ কৃষক আব্দুল কাদিরের ফসলের মাঠে বঙ্গবন্ধুর এই প্রতিকৃতি। এতে আমরা গর্বিত। তাকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।