প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ভাতা বিতরণ ডাক বিভাগের ডিজিটাল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা ‘নগদ’ এর মাধ্যমে করার জন্যে নির্দেশনা নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার প্রেক্ষিতে তারা এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে। এর ফলে উপবৃত্তি বিতরণে সরকারির খরচ এক তৃতীয়াংশে নেমে আসবে।
গত কয়েক বছর ধরে শিউরক্যাশ নামের একটি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সেবা সংস্থা ক্যাশ-আউট চার্জ এবং ডেটা ম্যানেজমেন্ট-এর জন্যে হাজারে সব মিলে সাড়ে ২১ টাকা পেতো সরকারের কাছ থেকে। তবে ‘নগদ’ হাজারে মাত্র সাড়ে সাত টাকায় পুরো সেবা দেবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাকির হোসেন।
তিনি বলেন, একে তো ‘নগদ’ আমাদের ডাক বিভাগের প্রতিষ্ঠান। তার ওপরে আমাদের অনেক টাকা খরচ বাঁচবে। সুতরাং ‘নগদ’কে বেছে নেওয়াটা আমি মনে করি যুক্তিযুক্তই হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, গত কয়েক বছর ধরে শিউরক্যাশের মাধ্যমে ভাতা বিতরণ করতে গিয়ে আমরা অনেক ঝামেলায় পড়েছি। কিন্তু আমারা দেখছি ‘নগদ’ অনেক ভালো করছে। আজ-কালের মধ্যেই ‘নগদ’ এর সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি করা হবে।
জানা গেছে, শিওর ক্যাশ ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তির টাকা ক্যাশ আউটের জন্যে সরকারের কাছ থেকে বৃত্তির মোট টাকার ওপরে ১.৮৫ শতাংশ, অর্থাৎ এক হাজারে সাড়ে আঠারো টাকা পেতো। তার সঙ্গে ডেটা প্রসেসিংয়ের জন্যে হাজারে আরো ৩ টাকা চার্জ করতো। এক্ষেত্রে পুরো কাজটি ‘নগদ’ করে দেবে হাজারে সাড়ে সাত টাকায়। তবে ক্যাশ-আউটের জন্যে বাড়তি যা লাগে সেটা ‘নগদ’ যোগ করেই উপবৃত্তিভোগী শিক্ষার্থীকে পাঠাবে।
নতুন এই চুক্তির আওতায় গত এপ্রিল-মে এবং জুন এই তিন মাসের উপবৃত্তিও ‘নগদ’ বিতরণ করবে। দু’একদিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের ডেটা পেয়ে গেলে চলতি মাস থেকেই তারা আগের তিন মাসের উপবৃত্তি পেয়ে যাবেন।
জানা গেছে, প্রতি বছর প্রাথমিক পর্যায়ের এক কোটি ৩০ লাখ শিক্ষার্থী এই প্রক্রিয়ায় উপবৃত্তি পেয়ে থাকেন। তাতে সব মিলে সরকারের প্রায় চার হাজার কোটি টাকা খরচ হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দুটি বিকল্প প্রস্তাব দিয়ে সারসংক্ষেপ পাঠিয়েছিল। তাদের প্রস্তাবে ওপেন টেন্ডার ম্যাথড বা ওটিএম পদ্ধতিতে যাওয়া বা ‘নগদ’কে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। তখন সরকারি প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী ‘নগদ’কে কাজটি দিতে নির্দেশনা দিয়ে দেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, শিউরক্যাশের মাধ্যমে উপবৃত্তি বিতরণ করতে গিয়ে গত তিন বছরে তারা অসংখ্য অভিযোগ পেয়েছেন। তার মধ্যে ক্যাশ-আউটের জন্যে পর্যাপ্ত এজেন্ট পয়েন্ট না থাকা বা এজেন্টরাই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা রেখে দেওয়াসহ নানান অভিযোগ রয়েছে।
বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ের একেকজন শিক্ষার্থী ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বৃত্তি পেয়ে থাকে। এর ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার অনেক কমেছে।