1. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  2. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  3. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০২:৫০ পূর্বাহ্ন

আমার ভালবাসার চৌহদ্দি

  • সময় : শুক্রবার, ১০ জুলাই, ২০২০
  • ১০০৮

সুজয় সরকার

২০০৯ সালের শুরুর দিকের একটা দুপুর। গড়পড়তা বাঙালি যে সময় ভরপেট খেয়ে ভাতঘুম দিতে গিয়ে মহাবিশ্বের যাবতীয় চিন্তায় মগ্ন, আমরা তখন ক্লাসরুমে। ইংরেজি সাহিত্যের আঠারো-ঊনিশ শতকের কতিপয় বুড়ো চিন্তার বিরক্তিকর ‘প্রবন্ধ’ পড়ার জন্য বসে আছি কলাভবনের পেছনের লেকচার থিয়েটারে। গ্রিক স্থাপত্যের এম্ফিথিয়েটার নামক গজমতি হার’কে লোহা-পিতল দিয়ে ইমিটেশন করানোর মতো করে গড়া এই লেকচার থিয়েটার।

‘বিরক্তিকর প্রবন্ধ’ ইনিংশের ওপেনিং ব্যাট করতে নেমে ম্যাম সবার নাম আর জেলা জানতে চাইলেন। ‘হরিপদ-নীলফামারী’ আর ‘রহিমদ্দি-খাগড়াছড়ি’ করে যখন আমরা এক রান- আধ রান করে এগোচ্ছি, হঠাৎ এক নবীন ব্যাটম্যান এসে চার হেঁকে বললেন, ‘আইনস্টাইন-অমুক কলেজ’। আরেকজন তো ছক্কা হেঁকে বললেন, ‘মাদাম কুরি-তমুক কলেজ'( বলাবাহুল্য এই দুটোই ছিল ঢাকা তথা বঙ্গদেশে খ্যাতনামা কলেজ)। পরপর কয়েকটা চার-ছক্কায় আমাদের যাদের মাথা ঘাট হবার ভয়ে আর ক্রিজে এগোচ্ছি না (আমরা বলতে কমবেশি বেশিরভাগ গ্রাম বা মফস্বলের অখ্যাত কলেজ থেকে আসা যেগুলোর নাম বললে পাশের গ্রামের কেউ চেনে কিনা সন্দেহ), এমন সময় একজন সবাইকে বোল্ট করে পরিচয় দিলেন ‘সূর্য্য-বাংলাদেশ’। হাঁফ ছেড়ে বাঁচল গ্রামের খ্যাতগুলা, গ্রিক এম্ফিথিয়েটারে সফোক্লিস-পেরিক্লিস সমস্বরে ছাড়ল উল্লাস।

ফিরে আসি বুড়ো চিন্তার বিরক্তিকর প্রাবন্ধিকের লেখায়। কিছুদিন বাদে সম্ভবত এমন ক্লাসরুমেই জানতে পাড়লাম বিখ্যাত বুড়ো প্রাবন্ধিক John Henry Newman তাঁর ‘The Idea of a University’ নামক প্রবন্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে প্রাচীন গ্রীক-ল্যাটিনের দ্বারস্থ হয়ে বলতে চেয়েছিলেন, “Studium Generale” বা, ‘School of Universal Learning’. উপরের ঘটনা মাথায় আসার পর আর বুঝতেও একটুও কষ্ট হয়নি ‘School of Universal Learning’ বা সার্ব্বজনীন শিক্ষাপীঠ বা বিশ্ববিদ্যালয় বস্তুটা আদতে কি। আমার সেই জ্ঞানী বন্ধুর বোল্ট আউটের ঘটনাটা মনে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত স্বরূপ বুঝতে কোনদিন খুব একটা বেগ পেতে হয়নি ; বুড়ো প্রাবন্ধিকগণ যতই ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কঠিন করে বলুক না কেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সত্যিকার অর্থেই সার্ব্বজনীন-বিশ্বজনীন শিক্ষার কেন্দ্র। এখানে বই থেকে যা শেখা হয়, ক্লাসে তার থেকে বেশি ; লেকচার থেকে যা, চারিধারের আচার-আচরন থেকে আরও ঢের ; এখানের শিক্ষায় লাইব্রেরী থেকে টয়লেটের কম নয় বরং ক্ষেত্রবিশেষে বেশিই অবদান ; আর গাছতলা-রাজপথের কথা তো বাদই রইল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সব’চে বড় দিক এখানে যেমন অমুক-তমুক নামকরা প্রতিষ্ঠান থেকে আসে, তেমনি গাছতলা -হাটতলা থেকেও আসে একপাল। এখানে খাটে বসে খাওয়া থেকে মাঠে বসে খাওয়া মানুষের ছেলেমেয়েরা আসে পড়তে ; আসে পা ফাঁটা থেকে ফাঁটা কপালের সবাই। আর দিনশেষে ভেঙেচুড়ে পদ্মা-যমুনা মিলে তৈরি হয় এক স্বোতস্বিনী অথচ ধীর সমুদ্রগামী মেঘনার।

বাংলাদেশের সবক’টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যই কথাগুলো সত্য ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য তা আরও বেশি সত্য। শুধু বয়সে প্রাচীন, ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’র মিথ্যা অহমিকা কিংবা হালের ‘দশ টাকার ছা-সিঙারা-ছমুচা’ র ঐতিহ্যই নয়, বাংলাদেশের ইতিহাস আর কোনও প্রতিষ্ঠানের কাছে এতো গভীরভাবে ঋণী নয়। বালখিল্য আবেগ দিয়ে বলছি না, পৃথিবীর কোন দেশের ইতিহাস তার একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাছে এতো গভীরভাবে ঋণী আছে বলে আমার জানা নেই; আমার জ্ঞান অনেক সীমাবদ্ধ মেনে নিয়েই বলছি।

শুধু কি গৌরবের ইতিহাস? নোংরামি আর ছোটলোকির ইতিহাস নেই?
আছে, নিঃসন্দেহে আছে। আমরা যেমন রক্ত দিয়ে বাংলা এনেছি, আবার আরবি হরফে বাংলা প্রচলনের মতো দূরভিসন্ধিমূলক সিদ্ধান্তও আমরাই দিয়েছি; রাজপথে অজস্রবার শাসক-শোষকের শেকল যেমন আমরা ভেঙেছি, শাসকশ্রেণীর কুমন্ত্রণার হাতিয়ার হওয়ার ন্যাক্কারজনক রেকর্ডও আমাদের অনেকের আছে। তবে ইতিবাচক ইতিহাসের যাবতীয় অর্জনে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে ছাত্রদের অবদান নিশ্চয় অনেকেই একবাক্যেই স্বীকার করবেন।

তো শুধু অতীত নিয়ে আর যাবর কেটে কি লাভ? বর্তমান কি ভেবে দেখেছ? বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাংকিং বোঝ?
না, বুঝিনা। তবে বুঝতে চাই। করোনা মহামারীর মতো দিনগুলিতে বিশ্বের অনেকের মতো আমরাও ভ্যাকসিন আবিষ্কারে মন দিতে চাই ; হ্যান্ডস্যানিটাইজার আবিষ্কারে নয়। দেশের ক্রান্তিকালে পাবলিক-প্রাইভেট দ্বন্দের মিমে আর ট্রল করে সময় না কাটিয়ে জয়নুলের মতো মনন্ত্বরের মর্মস্পর্শী ছবিও আঁকতে চাই। বুঝতে চাই ‘আমার মুক্তি সবুজ ঘাঁসে’, টুকটুকে লাল ইটের জলফোয়ারায় নয়।

২০০৯ সালের জুলাই, ডিপার্টমেন্টের প্রবীনতম শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে সান্ধ্যকালীন এমএ চালুর স্বপক্ষে যুক্তি দিচ্ছিলেন। অনেকগুলো যুক্তির মধ্যে সান্ধ্যকোর্সের টাকায় শ্রেণিকক্ষে এসি চালুর কথা বলার সাথে সাথে আমরা অনেকগুলো বাচ্চাকাচ্চা নিজেদের মাঠ থেকে উঠে আসা গরীবের বাচ্চা পরিচয় দিয়ে ‘না না’ করে উঠেছিলাম। মনে পড়ে প্রথমে লেখা ‘অমুক কলেজ’ এর ধনীর দুলালরাও আমাদের সাথেই ‘না না’ করেছিল সমস্বরে। আমাদের সেই ‘না, না’ এক মাস ধরে ক্লাসের ফাঁক গলে করিডোর হয়ে, অপরাজেয় বাংলা পেরিয়ে, ভিসির দপ্তর ঘুরে অবশেষে নোটিস বোর্ডে ঠাঁই নিয়েছিল; ‘সান্ধ্যকালীন এমএ প্রোগ্রাম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ’। সেই সাথে আরও অনেকগুলো নোটিস ঝুলেছিল যাদের বদৌলতে আমাদের সব ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়েছিল পরবর্তী পাঁচ বছর। ইংরেজি বিভাগের অজেয় ডিবেটিং ক্লাব, গ্লোব থিয়েটারে অভিনয় করা ড্রামা সোসাইটি, ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, র‍্যাগ ডে, আর দেশ-বিদেশের স্টাডি ট্যুর’ এরর মতো ভালোবাসা গুলো আমাদের পর হয়ে গিয়েছিল এক নোটিসে। তবুও যতদূর জানি এই এগারো বছরে প্রথম নোটিসের আর পরবর্তী নির্দেশ আসেনি। সব আবেদন হারানোর শান্তি আর স্বস্তি এখানেই। সত্যিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলতে আমরা “উচ্ছৃঙ্খল, বিপথগামী” তরুনেরা এটাই বুঝি।

ক্লাসের লেকচার, বুড়ো সব কবি সাহিত্যিক, রাজপথের স্লোগান, বন্ধুর পানকৌড়ি উড়ে চলা, কতগুলো অপরিচিত মানুষ জীবনের সমান্তরাল হয়ে যাওয়া, মল চত্ত্বরে প্রিয়তমার চোখে বিদ্রোহ, রাতজাগা শাহবাগে অগ্নিকন্ঠের সাথে করতালি, গৃহশিক্ষকতার শেষে মাঝরাতে ভাতের অভাবে বিরিয়ানি, টয়লেটের লাইন, চাকর

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪