1. boyd94289@gmail.com : Ayon Islam : Ayon Islam
  2. tanvirinternational2727@gmail.com : NewsDesk :
  3. hrbangladeshbulletin@gmail.com : News Room : News Room
  4. 25.sanowar@gmail.com : Sanowar Hossain : Sanowar Hossain
  5. bangladeshbulleting646@gmail.com : Sohel Desk : Sohel Desk
শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:২২ অপরাহ্ন

টাংগাইল থেকে হারাতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস

  • সময় : শনিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২৫

মোঃ শামসুর রহমান তালুকদার-

গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুর গাছের রস আজ হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে গেছে রাস্তার পাশে সারিবদ্ধ খেজুর গাছ কিবা বাড়ির আঙ্গিনা, জমির আইলে রোপন করা খেজুর গাছের সারি। হারিয়ে গেছে যেমন গাছি আর সাত সকালে মাটির উঁনুনে জ্বল দেওয়া মিষ্টি রসের ভান্ডার।

তবে কাঁচা রসের চাহিদা থাকলেও তা দুস্প্রাপ্য। টাকা হলেই মিলছে না খেজুর রস।এক সময় গ্রাম-গঞ্জের ঐতিহ্য ছিল খেজুরের রস। সময়ের কষাঘাতে তা এখন হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না। অথচ কিছুকাল আগেও মানুষের বাড়িতে, সড়কের পাশে সারি সারি খেজুর গাছ দেখা যেত।

শীতকাল আসতেই গাছ কেটে হাঁড়ি বসিয়ে ভোরে রস বিক্রি হতো। এখন গাছ নেই বললেই চলে। যা আছে, সেগুলো থেকে আগের মতো রস পড়ে না। আগে পরিবেশ ভালো ছিল, প্রতিটি ফল মূলের গাছ ছিল ফুলে ফলে ভরা।

এলাকার পরিবেশ দূষণের ফলে, ফলমূলের গাছে আগের মতো ফল ধরে না। আগে সকালে হাঁড়ি নামিয়ে রস নিয়ে যাওয়ার পরও গাছ থেকে ফোঁটা ফোঁটা রস ঝড়তে থাকত দুপুর পর্যন্ত। এখন রস ঝড়বে তো দূরের কথা সারা রাতে মাঝারি সাইজের কলসই ভরে না। শীত মৌসুমের আগমন হতে না হতেই গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুর গাছের রস সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পরেন গাছিরা। অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা খেজুর গাছের এখন অনেক কদর।

গ্রামবাংলায় শীত জেঁকে বসায় খেজুর রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। তবে গাছ সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না রস। চারিদিকে কুয়াশা। এরই মধ্যে লোকজনের কোলাহল। রাস্তার পাশে সারিবদ্ধ খেজুর গাছ। রস নিয়ে বসে আছে গাছি। এমন দৃশ্য খুঁজে পাওয়া বিরল।আশপাশের এলাকা ও শহর থেকে খেজুরের রস খেতে এসেছে লোকজন। কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ বাইসাইকেলে, কেউ ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সায় আবার কেউ পায়ে হেঁটে খেজুরের রস খেতে এসেছেন। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চারাবাড়ি ও পাইক মুড়িল এলাকায় গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ত। এসব এখন অতীত। গত কয়েক বছর আগেও বাড়ির আঙ্গিনা, জমির আইল ও রাস্তার দুই পাশে দেখা যেতো অসংখ্য খেজুর গাছ। তবে এখন আর তেমন একটা চোখে পড়ে না।

গাছিরা জানান, রস সংগ্রহে শীতের আগমনের শুরু থেকেই প্রতিযোগিতায় মেতে উঠছেন গাছিরা। অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা খেজুর গাছের এখন অনেক কদর। শীত জেঁকে বসায় খেজুর রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। তবে গাছ সংকটের কারণে এ বছর চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না, বলছেন তারা।

গাছি নুরুল আলম বলেন, বছরে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন থেকে চার মাস পর্যন্ত রস সংগ্রহ করা যায়। প্রতি কেজি রস ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বিক্রি করি। প্রতিদিন অনেক দূর দুরান্ত থেকে লোকজন রস খেতে আসেন। রস সংগ্রহ করতে অনেক পরিশ্রমও করতে হয়। কয়েকদিন পর পর গাছ কাটতে হয় আবার শুকাতে হয়।তিনি বললেন, রসের চাহিদা খুব বেশি। অনেকেই শীতের মধ্যে কষ্ট করে এসেও রস না পেয়ে চলে যান।

চারাবাড়ি এলাকার গাছি আশরাফ সাদিক বলেন, আমার এখানে রাস্তার পাশে ৩৯টি খেজুর গাছ আছে। তার মধ্যে ২ গাছ থেকে রস বের হয় না। ৩৭টি গাছের প্রতিটি গাছে ৫ থেকে ৬ কেজির মতো রস বের হয়। অনেকেই মোবাইলে আগে থেকে রসের অর্ডার দিয়ে রাখেন, আবার অনেকেই রস না পেয়ে রস সংগ্রহের জন্য বোতল রেখে যায়। পরের দিন এসে রস নিয়ে যায়। রাত জেগে রস পাহারা দিতে হয়। পাহারা না দিলে এলাকার যুবকরা এসে হাড়িসহ রস নিয়ে যায়। কুয়াশা যেদিন বেশি পড়ে সেদিন রসও বেশি বের হয়।

টাঙ্গাইল পুরাতন বাস ষ্ট্যান্ডে কথা হয় রস বিক্রেতা বাজিতপুর এলাকার নাসির সরকার (৫০) এর সাথে। তিনি বলেন, ‘আমি ২৫ বছর যাবত খেজুরের রস বিক্রি করে সংসার চালাই। এলাকার গাছিদের নিকট থেকে রস কিনে এনে আশপাশের এলাকাগুলোতে বিক্রি করি। এক সময় গ্রাম এলাকায় অনেক খেজুরের গাছ ছিল। এখন তেমন একটা দেখা যায় না। তবে, এ রসের চাহিদা অনেক। রস পেলেই সবাই আগ্রহ নিয়ে খেতে চায় এবং বাড়ির জন্য কিনে নিয়ে যায়।’

রস খেতে আসা মঞ্জুর আলম বলেন, রস খেতে খুব ভোরে ৮ কিলোমিটার দূরের এনায়েতপুর এলাকা থেকে এসেছি। তারপরও রস পাইনি। অন্য একজনে রস কিনে বাড়ির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার কাছ থেকে এক গ্লাস খেয়েছি।

টাংগাইল সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিক পারভেজ বাংলাদেশ বুলেটিনকে বলেন, খেজুর গাছ রোপণ করতে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। গাছ বুড়ো হয়ে যাওয়ায় রস তেমন পাওয়া যায় না। রস বাজারে বিক্রির মতো আগের সেই অবস্থা নেই। ইটের ভাটায় ব্যাপকভাবে খেৎুর গাছ ব্যবহার করায় এ গাছ কমে গেছে। খেজুর গাছ সস্তা হওয়ায় ইটের ভাটায় এই গাছই বেশি পোড়ানো হয়। এছাড়া অনেক সময় ঘরবাড়ি নির্মাণ করার জন্য খেজুরের গাছ কেটে ফেলা হয়। ফলে দিন দিন খেজুর গাছ কমে যাচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের অন্যান্য খবর
©বাংলাদেশবুলেটিন২৪